সুরমা টাইমস ডেস্ক :
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতের পথে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
তিনি বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেটি হবে ‘জাতির নবজন্মের মহোৎসব’।”
গত রবিবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “শুরুতে যখন কমিশনের ধারণা এল, আমি নিশ্চিত ছিলাম না, এটা টিকবে কি না। কিন্তু আজ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পরে আপনাদের আলোচনা ও সিদ্ধান্তে আমি অভিভূত হয়েছি।”
কমিশনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোও অনুসরণ করবে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটা শুধু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে না, সারা দুনিয়া লক্ষ করবে আমরা কীভাবে সমস্যার সমাধান করলাম।”প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, “জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প পথ নেই। যে পথে আমরা শুরু করেছি,সেই পথ থেকে বের হবার কোনো সুযোগ নেই। এই সমতায় আমাদের আসতেই হবে। এটাই ছাত্র-জনতার দেওয়া সুযোগ, যেখান থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।”
আগামী নির্বাচনের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা বারবার বলেছি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে।সেটি হবে মহোৎসবের নির্বাচন, যদি আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে ফয়সালা করতে পারি। এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়, এটি হবে জাতির নবজন্ম।”
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জাতির সত্যিকার নবজন্ম হবে। এটা শুধু নির্বাচন না, এটা নবজন্ম। এই যে এত ত্যাগ, এত রক্ত-এগুলো সার্থক হবে যদি আমরা এই নবজন্মটা লাভ করতে পারি।”
বিভাজন বা দ্বিমতের কোনো স্থান নেই বলে সতর্ক করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু দ্বিমত রেখে সমাপ্ত করতে পারব না। যখন ঐকমত্যে পৌঁছাব, তখনই নির্বাচন সার্থক হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি, এখন শুধু সাইনবোর্ড বসানো বাকি। পথ ঠিক আছে, গন্তব্য পরিষ্কার। এই নির্বাচন হবে উৎসবের নির্বাচন, দেশের শান্তি ও নতুন যাত্রার সূচনা।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য হলো সব পথঘাট বন্ধ করা, যাতে কোনো স্বৈরাচার আর ফিরে আসতে না পারে। এজন্য সবাইকে একমত হতে হবে।”
কমিশনের কাজকে অভূতপূর্ব অর্জন বলে অভিহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের পরিশ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছেন। এখন শুধু এটিকে নিখুঁতভাবে সমাপ্ত করা দরকার। এর মধ্য দিয়েই নতুন জাতির জন্ম ঘটবে।”
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এবার আমাদের ব্যর্থ হবার কোনো সুযোগ নেই। ঐকমত্যের এই পথেই আমরা এগোব, নির্বাচন সফল করব এবং জাতি হিসেবে মহা–উৎসবের যাত্রা শুরু করব।”
এ সময় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার।
সূত্র: বাসস