না ফেরার দেশে চলে গেলেন পদ্মশ্রী পদক প্রাপ্ত ১২৯ বয়সী প্রবীণতম মহামাব হবিগঞ্জের স্বামী শিবাবনন্দ বাবাজী

উত্তম কুমার পাল হিমেল হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃঃ

পদ্মশ্রী পদক প্রাপ্ত খ্যাতিমুগ্ধ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব সর্বাধিক প্রবীণতম মহামানব,সাধক পুরুষ স্বামী শিবানন্দ ১২৯ বছর বয়সে, গত ৩ মে রাত ৯ টার সময় বেনারস বিএইচইউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ইহলোক ছেড়ে পটলোকে গমন করেন।  এই পুণ্যাত্মার প্রয়াণের সংবাদ হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করেছে।
বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা সন্তান ১২৯ বছরের বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ও  পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত স্বামী শিবানন্দ পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি। জন্ম তারিখ অনুযায়ী তিনি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর চেয়েও ৫ মাসের বড়।
তাঁর জন্ম ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হরিতলা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।  তারঁ  পিতা শ্রীনাথ গোস্বামী, মাতা ভগবতী দেবী।
মা বাবা কয়েক বছরের বড় দিদি আরতি সহ দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করতেন। চরম দারিদ্র্যতার কারণে ৪ বছর বয়সে উনাকে নবদ্বীপের এক সন্যাসী স্বামী  ওঁকারানন্দর কাছে দিয়ে দেন।
দুই বছর পর ৬ বছর বয়সে সন্যাসীর সাথে বাড়িতে ফিরে এসে শোনেন দিদি না খেতে পেয়ে মারা গেছেন। বাড়ীতে আসার ৭ দিন পর মা-বাবা একই দিনে মারা যান।
তিনি স্বামী ওঁকারানন্দের সাথে পিতা-মাতার শ্রাদ্ধকর্ম সমাধা করে ১৯০১ সালে নবদ্বীপ গমন করেন ও সেখানে পড়াশোনা শুরু করেন ।
পরবর্তীতে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাশ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি  বিদেশ যাত্রা করেন সেখান থেকে পিএইচডি  ডিগ্রি লাভ করেন।
টানা ৩৪ বছর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। ১৯৫৯ সালে ভারতের নবদ্বীপে ফিরে তিনি গুরুর নির্দেশ সাধন জগতে ডুবে যান।
বেনারসে বসবাসরত স্বামী শিবানন্দ, মানব সেবাই ছিলো যাঁর প্রধান ব্রত। ভক্তদের দেয়া টাকা পয়সা উনি গ্রহণ করেননা। প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম করতেন নিয়মিত ।
রাত ৩ টার সময় উঠে প্রতিদিন জপধ্যান ও যোগব্যায়াম তাঁকে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার অনুপ্রেরনা যোগায়। বেঁচে থাকাকলীন উনার ভাষ্যমতে জানা যায়,মিষ্টি জাতায় খাবার,দুধ ও চর্বি জাতীয় খাবার তিনি খেতেন না। সব সময় চিন্তামুক্ত,বিলাসিতা ত্যাগ ও চাওয়া পাওয়ার কোন মোহ ছিল না তার ব্যক্তিগত জীবনে।
মুলত শাকসবজি ও নিরামিষ জাতীয় খাবার আহারের জন্য তিনি নিরোগ,সুস্থ সবল থাকায়  দীর্ঘদিন বেঁচেছেন। তিনি ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ দেশের বিভিন্ন দেবালয় পরিদর্শন করেছেন।
সর্বশেষ তিনি গত বছরের জুলাই মাসে তাঁর জন্মস্থান বাহুবলের পাশ্ববর্তী নবীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দিনাপুর পরগনার  শতক মহাপুরুষ ঠাকুর বাণী মন্দিরে এসে পরিদর্শনসহ সংবর্ধনা সভায় অংগ্রহন ও রাত্রিযাপন করেন।
এই মহামানবের মৃত্যুতে গভীর শোক ওমসমবেদনা জ্ঞাপন করেন,বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ শ্রী শ্রী ঠাকুরবানী আশ্রমের সেবায়েত ফালগুনী ভট্টাচার্য্য, সৎসঙ্গ বাংলাদেশ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মৃন্ময় কান্তি দাশ বিজনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নের্তবৃন্দ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।