সুরমা টাইমস ডেস্ক :
এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে রাজধানীর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায় ফিরে গেছেন তামিম ইকবাল। হার্ট অ্যাটাকের ধকল কাটিয়ে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখে তাকে ছেড়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন শুধু ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠার পালা।
গতকাল শুক্রবার (২৮শে মার্চ) দুপুরের দিকে বনানীর ডিওএইচএসের বাসায় ফিরে যান তামিম। সেখানেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পারিবারিকভাবে তার চিকিৎসা চলমান থাকবে।
এর আগে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসেস ডিরেক্টর আরিফ মাহমুদ জানান, তামিম এখন অনেকটাই সুস্থ।
তিনি বলেন, “তামিম ভালো আছেন, স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন। তাকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে। সেখানেই এক-দু’দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
আশা করা যাচ্ছে ঈদের আগেই তিনি বাসায় ফিরতে পারবেন।” শেষ পর্যন্ত ঈদের আগেই বাসায় ফিরতে পারলেন বাঁহাতি ওপেনার।
বাসায় ফিরে এক ফেসবুক পোস্টে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তামিম।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে দেওয়া পোস্টে তামিম ইকবাল লিখেছেন, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমতে এখন আমি বাসায়।
উথালপাথাল এই চারটি দিনে নতুন জীবন যেমন পেয়েছি, তেমনি আমার চারপাশকে আবিষ্কার করেছি নতুন করে।
সেই উপলব্ধির সবটুকুতে মিশে আছে কেবল ভালোলাগা ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সবার ভালোবাসার ছোঁয়া ক্যারিয়ারজুড়ে নানা সময়ই পেয়েছি।
তবে এবার তা অনভুব করতে পেরেছি আরও তীব্রভাবে। আমি সত্যিই আপ্লুত।
বিকেএসপিতে অসুস্থতার শুরু থেকে যাদের পাশে পেয়েছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘বিকেএসপিতে আমার অসুস্থতার শুরু থেকেই অনেককে পাশে পেয়েছি তাৎক্ষণিকভাবে।
ম্যাচ রেফারি দেবু দা (দেবব্রত পাল), বিকেএসপির চিকিৎসকরা এবং আরও যারা তখন ছিলেন সেখানে, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার যে ভাই আমাকে দ্রুতগতিতে নিয়ে গেছেন হাসপাতালে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আমাদের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব কীভাবে, আমার আসলে জানা নেই। আমি পরে জেনেছি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন যে, ডালিম ভাই ওই সময় সঠিকভাবে সিপিআর না দিলে হয়তো আমাকে বাঁচানো যেত না।
উপযুক্ত মানুষকে উপযুক্ত সময়ে আমার পাশে রেখে আল্লাহ আমাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়েছেন।’
মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনার কথা ছিল তামিমকে। শেষমেশ পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সাভারের কেপিজে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানকার ডাক্তারদের নিয়ে তামিম বলেন, ‘কেপিজে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ ও তার দক্ষ চিকিৎসক দল তাদের পেশাদারিত্ব আর আন্তরিকতার মিশেলে যেভাবে দ্রুততায় চিকিৎসা করেছেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকদের মান ও কার্যকারিতাই ফুটে উঠেছে তাতে।
আমি পরে শুনেছি যে, দেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডা. মারুফ ও তার দল মিরাকল ঘটিয়েছেন। গোটা চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় কেপিজে হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা থেকে শুরু করে যারা যে কোনোভাবে যতটুকু সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাইকে হৃদয়ে লালন করব আজীবন।
এই হাসপাতালে যতটুকু সময় ছিলাম, তাদের হৃদ্যতার পরশ অনুভব করে যাব সবসময়। ঢাকা শহরের বাইরে ওই এলাকায় এতটা উঁচু মানের হাসপাতাল আছে, এতটা কুশলী চিকিৎসক দল ও স্টাফরা আছেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার এগিয়ে চলার একটি প্রমাণ এটি।
দেশজুড়ে নানা জায়গায় এর কাছাকাছি মানের হাসপাতাল যদি আরও কিছু থাকে, আমার মতো আরও অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা পেতে পারে।’
তামিম আরও বলেন, ‘ধন্যবাদের তালিকা আসলে শেষ হওয়ার নয়। আরও অনেকেই নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, অনেকের কথা জানি, অনেকের কথা হয়তো জানি না।
এতটুকু জানি, ধন্যবাদ পাওয়ার আশায় তারা কিছু করেননি। আমি তাদের ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ সারা জীবনের জন্য। পুরোপুরি সেরে ওঠার পথ এখনও দীর্ঘ।
আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রার্থনায় রাখবেন। সবার জীবন সুন্দর ও শান্তিময় হোক। ভালোবাসা সবার জন্য।’
গত সোমবার তামিম মাঠে গুরুতর অসুস্থ হন। তখন বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে চলছিল ডিপিএলের অষ্টম রাউন্ডের ম্যাচ। শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে খেলতে নেমে মাঠেই হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি।
অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ককে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার আগে তামিমকে নিতে হেলিকপ্টারও আনা হয়েছিল।
কিন্তু পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় পাশে থাকা কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজেই চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় তাকে। সেখানেই হার্টে রিং পরানো হয়েছে।
শঙ্কা কাটলেও পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরতে এখনও সময় লাগবে তামিমের। একদিন আগে তার চাচা আকরাম খান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “আগামী দু-তিন দিন যদি অবস্থা স্থিতিশীল থাকে, তাহলে তাকে বাসায় নেওয়া হবে।
পাশাপাশি পরবর্তী পর্যায়ে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার পরিকল্পনাও আছে।”
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই তারকা ব্যাটসম্যানের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন তার ভক্ত-সমর্থকরা।
তবে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলেও তাকে দীর্ঘমেয়াদে ফিটনেস ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মত চিকিৎসকদের।