যে কারণে এবার স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন না জেনারেল এম এ জি ওসমানী

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রতিবছর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে আসছে সরকার। এ বছর আট বিশিষ্টজনকে এ পুরস্কারে সম্মানিত করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী।

গতকাল মঙ্গলবার (১১ই মার্চ) এম এ জি ওসমানীর নাম বাদ দেওয়ার কারণ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানি ১৯৮৫ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।

 

অন্তর্বর্তী সরকার এ বছর তাকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করে।

 

তবে একই ব্যক্তিকে দুবার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক এ সম্মাননা দেওয়ার বিধান না থাকায় তার নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২৫ সালে ৮ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সরকার স্বাধীনতা পুরস্কার দেবে বলে জানা যায়।

 

সেই তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর নাম ছিল। তার নামসহ গত ৬ই মার্চ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

তবে গতকাল মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

 

এ তালিকায় সাতজনের নাম স্থান পেয়েছে। তারা হলেন—বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর),

সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যের ক্ষেত্রে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।

 

আতাউল গণি ওসমানীর জন্ম ১৯১৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে। যদিও তাদের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ থানায়। যা এখন ওসমানীনগর।

 

তার বাবা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান একসময় ছিলেন সুনামগঞ্জের এসডিও। সেখানেই জন্ম ওসমানীর। বাবার চাকরির সুবাদে ওসমানীর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়।

 

একসময় তারা সুনামগঞ্জ থেকে চলে গিয়েছিলেন গোহাটিতে৷ ওখানেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় হাতেখড়ি হয় ওসমানীর।

 

১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি পুরো ভারতবর্ষে প্রথম হয়েছিলেন। এই দারুণ ফলাফলের জন্য ব্রিটিশ সরকার ওসমানীকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার দেয়।

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক পাস করেছিলেন ১৯৩৮ সালে। এরপর তৎকালীন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

 

১৯৩৯ সালে রয়্যাল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়ে দেরাদুনে ব্রিটিশ-ভারতীয় মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৪০ সালে যোগ দিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কমিশনড অফিসার হিসেবে। ১৯৪২ সালে মেজর পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন ওসমানী।

 

১৯৪২ সালে ওসমানী ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ পদোন্নতি পাওয়া মেজর। দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ সালের ৭ অক্টোবর ওসমানী যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে।

এসময় তার পদমর্যাদা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল।

১৯৫১ সালে তিনি যখন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক তখন তার হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম সেনানিবাস। ১৯৬৭ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওসমানী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন৷ ওই ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন৷

উল্লেখ্য ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি ও সরকার গঠন করা হয় এবং পরবর্তীকালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার, ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি।

এম এ জি ওসমানীর নির্দেশনা অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে এক একজন সেনাবাহিনীর অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়।

বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মাঝে সমন্বয় করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ রাখা, অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করা, গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা- প্রভৃতি কাজ সাফল্যের সাথে পালন করেন ওসমানী।

১২ এপ্রিল থেকে এম. এ. জি. ওসমানী মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন৷

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।