তন্ত্র মন্ত্র ও ঝাড়ফুক দিয়েই চলে যাদের জীবন সংসার

উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকেঃ তন্ত্র মন্ত্র ও ঝাড়ফুক দিয়েই চলে যাদের জীবন সংসার , দেশে ভাসমান অবস্থায় যাদুবিদ্যা তন্ত্রমন্ত্র ও ঝাড়ফুক দিয়ে লোকজনকে আকৃষ্ট করে যাদের জীবন চলে সমাজের চোখে তারাই বেদে। তাদের জীবন কাটে ছোট্র ছোট্র বহর তৈরী করে, দেশের এক প্রাপ্ত থেকে অপর প্রান্ত ছুটে চলে যারা তারাও তো এদেশের নাগরিক। তাদের জীবন কাহিনী সমাজের আরো দশ জনের মত নয়। ব্যতিক্রমধর্মী জীবন কাহিনী এ দেশের বেদে সম্প্রদায়ের। তাদের স্বপ্ন শুধু এ কর্ম করে একমুঠো অন্ন যোগানো আর ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসারের ভরন পোষন করা। তাদের নেই কোন নিজস্ব সহায় সম্পত্তি। তাই জায়গা জমি নিয়ে নেই কোন দাঙ্গা হাঙ্গামা, নেই রাজনৈতিক কোন মাথাব্যাথা,নেই কোন হিংসা প্রতিহিংসা।
তাদের চিন্তা একটাই যাদুবিদ্যার এই কর্ম করে কোন রকমে জীবন গাড়ী চালিয়ে যাওয়া। তাদের সমাজের ছেলে মেয়েদের অনেক সময় বাধ্য হয়েই কিশোর বয়সে অনেক স্থানে বিয়ে দিতে দেখা যায়। তবে এ বাস্তবতার ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ মোঃ আব্দুল ওয়াহাব সর্দার নামের ব্যক্তি।
বাল্য বিবাহ ও যৌতুকের বিরুদ্ধে অনেক সময় ওই বেদে সর্দার প্রতিবাদ করেন। তবে তার বেদের বহরগুলোতে বাল্য বিবাহ যৌতুক এসব কাজ নিষিদ্ধ বলে জানান তিনি। তার পিতার নাম আনছার আলী, জন্ম স্থান দিনাজপুর জেলার রৌহজং উপজেলা সদরে। নবীগঞ্জ উপজেলা আউশকান্দি বিশ্ব রোডের পাশে অবস্থিত বেদের বহর ঘুরে শোনা যায় ওই সমাজের লোকজনের নানান দুঃখ কষ্টোর কথা। ঝড় তুফান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যতই আসুক না কেন, এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বেচেঁ থাকার জন্য তাদের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়।
তাদের ছেলে-মেয়েরা জন্মের পর থেকেই তাদের পূর্ব পুরুষের আদি শিল্প পেশা ঠিকিয়ে রাখতে অনেকেই যাদুবিদ্যা ও তন্ত্র মন্ত্র শিখে পরিবার পরিজনের ভরনপোষন করতে হয়। তবে যাদুবিদ্যা যে শুধুই হাতের চালাকি ও অভিজ্ঞতা বলে জানান আব্দুল ওয়াহাব সর্দার। এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন,সিলেট অঞ্চলেই আমারা স্বাধীনভাবে ব্যবসা চালিয়ে নিজেদের বাড়ীঘরের মত চলাফেরা করতে পারি।

ওই অঞ্চলের মানুষজন খুব ভাল,তারা আমাদের খুব ভালবাসে। তাই আমরা প্রতি বছর বের হইলে ২/১ বার সিলেট অঞ্চলে আসি। তিনি আরো বলেন দেশের বর্তমান যে অবস্থা বেচেঁ থেকে খাওয়া-দাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের সমাজে অনেক বৃত্তবান লোক আছেন কিন্তু কেই আমাদের দিকে ফিরে তাকায় না। আমাদের নিয়ে কেই ভাবেনও না। তাদের জীবন কাহিনী শোনলে কখনো শেষ হবার নয়।

নবীগঞ্জ উপজেলা আউশকান্দি ইউনিয়নের মিঠাপুর গ্রামের গেইট সংলগ্ন স্থানে,শেরপুর নবীগঞ্জ সড়কের পাশ্বর্তী স্থানে ও নবীগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়কের শিবগঞ্জ নামক স্থানে প্রায় ৮/১০টি বেদের বহর অবস্থান করছে।
সরেজমিন গিয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভিতরের গেইটে প্রতিদিনই বেদে সম্পদায়ের প্রায় ১০/১৫ জন মহিলা ও মেয়েদেরকে একটি কাপড়ের ঘাট্ট্রি নিয়ে বসে ঝাড়-ফুক ও সিংগা লাগানোর জন্য লোকজনকে ডাকতে দেখা যায়।অনেক লোকজন তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ২০/১৫ টাকার বিনিময়ে সিংগা লাগানোসহ ঝাড়ফুক নিতে দেখা যায়।
হবিগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা অফিসের তথ্যসুত্রে জানাযায়, হবিগঞ্জ জেলার ৮ টি উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে বেদে সম্পদায়ের নারী পুরুষ মিলে মোট ৫৭৫ জন লোক এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় পুরুষ ১৯৮ জন এবং নারী ১৪৩ জন,চুনারুঘাট উপজেলায় পুরুষ ৩৬ জন এবং নারী ২০ জন,বাহুবল উপজেলায় পুরুষ ১৫ জন এবং নারী ১১ জন,নবীগঞ্জ উপজেলা পুরুষ ৪৬ জন এবং নারী ৫৪ জন,বানিয়াচং উপজেলায় পুরুষ ৩২ জন এবং নারী ১৪ জন,আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় পুরুষ ৪ জন এবং নারী ২ জন।
বছর জুড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান অবস্থায় বসবাস করার ফলে এদরে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার সৃযোগ না পেয়ে তাদের জাতিগত পেশায়ই জড়িয়ে পড়ে। তাই এ পেশার লোকজন তাদেরকে সরকারী জমিতে আবাসন তৈরী করে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিতে সরকারের সুদুষ্টি কামনা করেন।

প্রিয় পাঠক সিলেটের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল “ সুরমা টাইমস” এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।