কেমন আছেন সিলেটের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত নারী হেলেন ?
সুরমা টাইমস ডেস্কঃঃ
হেলেন আহমদ, সিলেটে এই নামটি নানা কারণে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত। দুই দশক আগেও সিলেট আওয়ামী পরিবারে সকলের কাছে এই নাম ছিল আজানা। কিন্তু আওয়ামী সরকারের টানা তিনবারের শাসনামলে তিনি রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন।
সূবর্ণ সময়ের শুরু সিলেট-১ আসনের সাবেক সংস সদস্য ড. একে আবদুল মোমেনের প্রথম সংসদ নির্বাচনকালীন। সে সময় সিলেটে হ্যালির ধুমকেতুর মতো উদয় হন ওই সংসদ সদস্যের স্ত্রী সেলিনা মোমেন। সেলিনা মোমেন সিলেটের আওয়ামী সকল মহিলাদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়েন।
যুক্তরাজ্যের নাগরিক মিসেস হেলেন আহমদ তখন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। টাকার জোর,অতি আধুনিক ও সুদর্শণা থাকায় তিনি দ্রুত মন জয় করে নেন সেলিনা মোমেনের। সেইে থেকে সেলিনা মোমেনের বিশ্বস্থ হয়ে উঠেন তিনি।সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনিই সঙ্গী হয়ে উঠেন সেলিনা মোমেনের।
এদিকে, ড. এ কে আব্দুল মোমেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী মনোনীত হন। ব্যাস! খেলা শুরু তখন থেকেই।
সেলিনা মোমেনের বিশ্বস্থ হওয়ার কারণে হেলেনকে কাছে টেনে নেন স্বয়ং তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। মন্ত্রীর কল্যাণে অখ্যাত হেলেন আহমদ হয়ে যান জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান। একই সাথে বাগিয়ে নেন জেলা মহিলা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পদটিও। যদিও পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে ওই কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন কালীন সিলেটের সকল মহিলা আওয়ামী লীগার সেলিনা মোমেনকে কাছে পেলেও নির্বাচন পরবর্তী সবাইকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। দলীয় কর্মীদের অভিযোগ- হেলেন আহমদের ঈশারায় কাউকেই কাছে বসতে দেন নি সেলিনা মোমেন।
সূযোগ কাজে লাগিয়ে শুরু হয় দুজনের হেলেন-সেলিনার বাণিজ্যিক মিশন। সকল সরকারি নিয়োগে আদায় করতেন কমিশন। একই সাথে পদায়ন, পদোন্নতিসহ বদলীর আদেশেও ভাগ পেতেন নির্ধারিত হারে। দলীয় কর্মীদের অভিযোগ- এই সবকিছুর মূলে কলকাঠি নাড়তেন হেলেন আহমদ।
তাছাড়া ক্ষমতার বদৌলতে এয়ারপোর্ট রোডস্থ বড়শালায় অনেক প্রবাসীর জমি দখল করে গড়ে তোলেন হাউজিং কোম্পানী। গ্রাস করেন শত শত একর টিলাভূমি। অবশ্য হেলেন আহমদের জায়গা দখলের খবর নতুন কোনো ঘটনা নয়।
অবৈধ জায়গা দখলের অভিযোগে ওয়ান এলিভেনের সময়ে তিনি গ্রেফতার হন যৌথ বাহিনীর হাতে। তবুও থেমে ছিল না হেলেনের ভূমি আত্মসাত বাণিজ্য।
সিলেট প্রেসক্লাবে হেলেন আহমদের হাতে নিজেদের ভুমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে একাধিক ভুক্তভোগী পৃথক পৃথক এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আদালতে হেলেন আহমদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে একাধিক ভুক্তভোগীর।
সেলিনা মোমেন পাশে থাকায় গেল বছর বড়শালা মৌজাস্থিত টিলা ভূমি দখল করে ফের আলোচনায় উঠে আসেন হেলেন আহমদ।
প্রায় ৮৬ শতক টিলা ভুমি দখল করে কৌশলে মোমেন ফাউন্ডেশনের নামে উইল করে দেন ২০ শতক। যার দলিল নং ৫৮০১/২০২১। হেলেন আহমদের এই বেআইনী কাজের সহযোগী ছিলেন নিজের ব্যবসায়ীক পার্টনার মিসবাউল ইসলাম।
বেআইনীভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করেন হেলেন আহমরে টিলাভূমি দখলের ঘটনা প্রথম জাতীয় একটি পোর্টালে প্রকাশ পেলে শুরু হয় হুলুস্থুল কান্ড। পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবি সমিতি (বেলা) ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে অবৈধ টিলাভূমিতে মোমেন ফাউন্ডেশনের স্থাপনা নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়।
ওই বছরের ০১লা মার্চ গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ হলে প্রকাশিত সংবাদের জন্য হেলেন আহম ও তাঁর ব্যবসায়ীক পার্টনার মিসবাউল ইসলাম ওই সাংবাদিককে ভয়-ভীতিও হুমকী প্রদর্শন করেন।
পরবর্তীতে সেলিনা মোমেনের নির্দেশে ডিবি পুলিশের ডিসি তোফায়েল আহমদ ওই সাংবাদিকের মুঠোফনে কল দিয়ে দেখা করার কথা বলেন।
বিষয়টি সাংবাদিক সমাজে জানাজানি হয়ে গেলে সে সময় বিপাকে পড়েন ওই ডিসি। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিক দেবব্রত রায় দিপনের উপর চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়।
যার মামলা নং ১১৩১/ ২০২৩। এই মামলা আদালতে বিচারাধীন। মামলার পর থেকে সাংবাদিক দীপন মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আছেন।
সূত্র- বাংলার বারুদ