সুরমা টাইমস রিপোর্ট : সিলেট নগরীর কাষ্টঘরস্থ গাজী বুরহান উদ্দিন মার্কেটের ব্যবসায়ী দক্ষিণ সুরমার কুচাই দক্ষিণ পাড়ার নূরে আলম ছাদেকের কাছে ৪ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শুধু তাই নয় সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ী ছাদেকের উপর হামলা, দোকানের তালা ভেঙ্গে নগদ টাকাসহ মালামাল লুটপাঠ ও ভাংচুর করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। প্রভাবশালী এই চক্র ৪ কোটি টাকা চাঁদা না দিলে ছাদেকের দোকানসহ মার্কেট দখল করে তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেছে। তাছাড়া সাজানো মামলা দিয়ে তাকে হয়রানিও করে যাচ্ছে। বুধবার বেলা ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী নূরে আলম ছাদেক। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া কর্মকান্ড, চাঁদাবাজী ও জুলুম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আদালতে এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন, যার নং কোতোয়ালী সিআর মামলা নং- ১৬৬২/২০২৪ ইং। মামলার আসামীরা হলেন- নগরীর গোপালটিলার গোপাল মালাকারের ছেলে বিপ¬ব কান্তি মালাকার, মাছিমপুরের মৃত চুনু মিয়ার ছেলে ফয়ছল আহমদ লিটন, রমিজ আলী, মুজিবুর রহমান, আল আমিন ও ধীরেন্দ্র দাস। তাছাড়া সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার অপরাধের জন্য বিপ¬ব কান্তি মালাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন । অভিযোগের প্রক্ষিতে আদালত কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল ও দ্বিতীয় পক্ষকে শোকজ করার নির্দেশ প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নূরে আলম ছাদেক বলেন, কিছুদিন যাবত আমার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শান্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছি না। কিছু সংখ্যক ব্যক্তি প্রায়ই আমার কাছে চাঁদা দাবি, দোকান ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। চাঁদা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করায় আমার ক্রয়কৃত দোকানসমূহে তালা দিয়ে জবরদখল করার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে। তারা সময়ে-অসময়ে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শণসহ নানা ধরনের হুমকি-ধামকি প্রদান করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চলতি বছরের ১৪ আগস্ট সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ নং ওয়ার্ডের ইসলামপুর-১ দেবপুরের বাসিন্দা মৃত মো. আতাউর রহমানের ছেলে মো. ইয়ামিনুর রহমানের কাছ থেকে উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত তাঁর মালিকানাধীন ও ভোগদখলে থাকাবস্থায় নগরীর কাষ্টঘরস্থ গাজী বুরহান উদ্দিন মার্কেটে ৪ শতক ৩ পয়েন্ট ভ‚মি এবং তদউপরিস্থিত ৭৫ বর্গমিটার স্থাপনা রেজিস্ট্র দলিলের মাধ্যমে ক্রয় করি। যার তফসিলঃ জেলা- সিলেট, উপজেলা- সদর, ১৪ নং ওয়ার্ড, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, স্থান কাষ্টঘর, মৌজা- সিলেট মিউনিসিপলিটি, জেএলনং- এসএ ৯১ বিএস ৭৬ খতিয়ান নং এস এ ছাপা ৬৮২ নামজারি ৮৪৪২, বিএস: ডিপি ৫১৪, দাগ নং এস এ ৭২৭৫ বিএস ৩১১১১; এতে ১ শতক ৩৩ পয়েন্ট ভ‚মি এবং এস এ ৭২৭৬ দাগ বিএস ৩১১১১ দাগের ২ শতক ৭০ পয়েন্ট সর্বমোট ৪ শতক ৩ পয়েন্ট ভ‚মি ও তার উপর ৭৫ বর্গমিটার স্থাপনা।
তিনি আরো বলেন, মার্কেটের ব্যবসায়ী আশরাফুর রহমানের ম্যানেজার বিপ¬ব কান্তি মালাকার সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য ও কাল্পনিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ২৪/১০/২০২৪ইং তারিখে তাঁর বিরুদ্ধে সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রেপলিটন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন (নং- ১৩০৫/২০২৪)। উক্ত মামলায় দাবি করা হয় আমি নাকি বাদী বিপ¬ব কান্তি মালাকারের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছি। চাঁদা না দিলে মার্কেট ও অফিস নাকি দখল করে নেবো। তাছাড়া আমি নাকি আমার সহযোগীদের নিয়ে বাদীকে জোর করে তার অফিস থেকে বের করে দিয়েছি। এখানে পূণরায় তাদের দেখলে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়েছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো।
ছাদেক জানান, ০৭/১২/২০২৪ইং রাত ১০টার দিকে উপরোক্ত বিপ¬ব কান্তি মালাকার তাঁর দোকান কোঠা দখল করতে চাইলে তিনি তাতে বাঁধা প্রদান করেন। এসময় বিপ¬ব কান্তি মালাকার ও মাছিমপুর এলাকার ফয়সল আহমদ লিটন তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বলে, অবিলম্বে ৪ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে, নতুবা ছাদেকের ক্রয়কৃত দোকানকোঠাগুলো ও মার্কেট দখল করে নিবে বলে হুমকি প্রদান করে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে বিপ¬ব ও লিটনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা দা, হাতুড়ী তথা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মার্কেটে ঢুকে তাঁর ক্রয়কৃত দোকান কোঠার তালা ভেঙ্গে দোকানে ঢুকে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কম্পিউটার সহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় এবং ভাংচুর করে। এতে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
ব্যবসায়ী ছাদেক আরো জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকে ৪ কোটি টাকা চাঁদা না দিলে মার্কেট থেকে তাড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে কাস্টঘর সুইপার কলোনীর সামনে ছাদেকের মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে মারপিট করে ৪০ হাজার ৫শত টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতে বিপ¬ব কান্তি মালাকারকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। কিন্তু এখনও তিনি আইনগত কোনো প্রতিকার পাননি।
চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ব্যবসায়ী নূর আলম ছাদেক। তিনি এই জুলুম অত্যাচার বন্ধে প্রশাসন সহ সরকারের উর্ধ্বতন মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।