অপরাধ সম্রাজ্যের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী মালা সিন্ডিকেটের সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস-সিলেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ!

বিশেষ প্রতিবেদক :  গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ নগরীর মধুশহীদ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার দেখাতে যান দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদের ছোট বোন (রিপা) ছদ্ম নাম। রিপা লিফটে উঠা মাত্র উনাকে টার্গেট করেন বোরকা পরিহিত দুই জন অপরিচিত মহিলা। অপরিচিত মহিলাদের এক জন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রিপার সাথে থাকা সাইড ব্যাগ থেকে মোবাইল, টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সিসিটিভির ফুটেজটিতে ধরাপড়ে মূল আসামি। বলছিলাম সিলেটের বহুল আলোচিত নারী ছিনতাইকারী ও নারী চোর চক্রের মূলহোতা আছমা আক্তার মালা সিন্ডিকেটের কথা। ছিনতাইয়ের স্বীকার রিপার সিসিটিভির লাইভ  ভিডিও ফুটেজ আসে সুরমা টাইমস পত্রিকার হাতে।

শুধু রিপা নয় প্রতিদিন নগরীতে শত শত রিপা চুরি ও ছিনতাইয়ের স্বীকার হয়ে সব কিছু হারিয়ে খালি হাতে ফিরেন বাসায়।

গত ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ সুরমা টাইমস পত্রিকায় ” সিলেটে শীর্ষ নারী ছিনতাইকারী মালা সিন্ডিকেট সক্রিয়-সেল্টার দাতা কারা,, শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। গত কয় দিন এ বিষয়টি গোটা সিলেটে টক অবদা টাউনে পরিনত হয়। সুরমা টাইমস পত্রিকার পাঠকদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া জাগে। অনেকে এ সিন্ডিকেটের নানা অপকর্মের ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সুরমা টাইমস পত্রিকায় পাঠিয়ে সহযোগিতা করেন। একইসাথে মালাচক্রও বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে হুমকি ও নোংরা ভাষায় অব্যাহত গালিগালাজ করে। কখন ও মালা কখনও মেঘলা ফোন করে সরাসরি হুমকি প্রদান করে। ছিনতাইকারী মেঘলা এস এম পি’র কমিশনারের বোন বলেও পরিচয় প্রদান করে। ব্যার্থ হয়ে অব্যাহত হুমকি সহ বিরক্তিকর ও অসংলগ্ন ফোনকল করায় তার সহযোগীদের দ্বারা। তারা কখনো পরিচয় দেয় শাবি ছাত্র আবার কখনো ভিন্ন পরিচয়ে অব্যাহত হুমকি প্রদান করে। তন্মধ্যে তাওহীদ নামের একজন ও মোহাম্মদ মাছুম চৌধুরী নামে একজনের পরিচয় সনাক্ত করা যায়।

এ চানঞ্চল্যকর মোবাইল চুরির ভিডিও ফুটেজ সুরমা টাইমস পত্রিকার হাতে এসেছে। এ ফুটেজে দেখা যায়, মালা ও তার  এক সহযোগী মিলে কিভাবে রিপার সাইড ব্যাগ থেকে মোবাইল চুরি করছে।

নগরীর চিহিৃত নারী চোর ও শীর্ষ ছিনতাইকারী আছমা আক্তার মালা ও মেঘলা আক্তার তারা আপন দুই বোন, তাদের পেশা চুরি, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেল , অসামাজিক র্কাযকলাপ। তাদের র্বতমান বাড়ি দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের কলারতল এলাকার আব্দুল মালেকের মেয়ে। মেঘলা ছাড়াও মালা সিন্ডিকেট চক্রে অন্ততো আরো ১৫ সদস্য আছে। প্রতিনিয়ত তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

নগরীর অপরাধ সম্রাজ্যের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী মালা সিন্ডিকেটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখুন এই ভিডিওতে।

মালা সিন্ডিকেটের বিরোদ্ধে যতো অভিযোগ : সম্প্রতি অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নারী প্রতারক চক্রের মূল হোতা মালা সিন্ডিকেটের বিরোদ্ধে যতো অভিযোগ , তার ফিরিস্তির একাংশ সুরমা টাইমস পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

 মালার বিরোদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য তার আবাসস্থল সিলাম তেলীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাঞ্চায়েত কমিটি  গত ১৪ সেপ্টম্বর ২০২৪ ইং সিলেটের পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। যার স্মারক নং সাসঃ/২০২৪/০৫। অভিযোগের কপি সুরমা টাইমস পত্রিকা অফিসে সংরক্ষিত আছে। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মালা সিন্ডিকেটের বিরোদ্ধে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। বিবাদীদের বিরোদ্ধে এসএমপি কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং-২৭/৩৯৭ তারিখ ২০-০৮-২০১৮ইং , ধারা-৩৭৯/৪১১ পেনাল কোড ; মামলা নং-০৩/২২৯ তারিখ ০১-০৬-২০১৯ইং , ধারা-৩৭৯/৪১৩ পেনাল কোড ; মামলা নং-০১/৩৫৮ তারিখ ০১-০৯-২০২০ইং , ধারা-৩৭৯ পেনাল কোড ; মামলা নং- ৭১ , তারিখ ২৬/০৪/২০১৮ ইং ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড; মামলা নং-২০ তারিখ ১১-০৬-২০১৮ইং , ধারা-৩৯৪/৩০২ পেনাল কোড ; মামলা নং- ২৮/৩৯৭ তারিখ ১৬-০২-২০২০ইং , ধারা- আইন শৃংখলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন (সংশোধনী ২০০৯) এর ৪/৫ ; মামলা নং-৫০ তারিখ ১৭-১০-২০১০ইং, ধারা- আইন শৃংখলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন (সংশোধনী ২০০৯) এর ৪ ; মামলা নং- ১৫ তারিখ ১৬-১১-২০১১ইং , ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড ; মামলা নং-২৯ তারিখ ২৬-০৯-২০১৪ ইং , ধারা-৩২৮/৩৭৯ পেনাল কোড ; দক্ষিণ সুরমা থানার মামলা নং-১৪ তারিখ ১৭-০৮-২০১৫ইং , ধারা-৩০২/৩৪  পেনাল কোড ; এয়ারপোর্ট থানার মামলা নং-২৯ তারিখ ২২-০৫-২০২১ ইং , ধারা- আইন শৃংখলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন (সংশোধনী ২০০৯) এর ৪/৫ সহ বিভিন্ন মামলা চলমান আছে।

মালার আসল পরিচয়: যতদূর জানা যায়, আছমা আক্তার মালার মূল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ধরমন্ডল গ্রামে । আছমা আক্তার মালার তিন বোন , মেঘনা, মেঘলা, বর্ষা  ও ভাই আমজাদ হোসেন (সাগর), পরিবারের সবাই এক সাথে থাকে। এ পর্যন্ত মালা তিনটি বিয়ে করে। তার একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

মালার সহযোগী যারা:- শুধু মালা নয়, তার প্রধান সহযোগী হিসেবে রয়েছে মালার মা নেহার বেগম, মালার বোন মেঘলা ও মেঘনা আক্তার। মালার আপন খালা নাজমা বেগম। নাজমার স্বামী চিহ্নিত ছিনতাইকারী সাইফুল ইলাম, যার বিরোদ্ধে প্রায় ডজনখানি মামলা রয়েছে। সাইফুল এ পযর্ন্ত চারটি বিয়ে করে, প্রথম বউ নেত্রকোনায় থাকে, দ্বিতীয় বউ মহিলা ছিনতাইকারী কমলা, তৃতীয় বউ ছিনতাইকারী সুমি, চতুর্থ বউ ছিনতাইকারী নাজমা মালার আপন খালা। আর  চুরি করা মোবাইল বিক্রি করে মেঘনার জৈনক স্বামী নাছিরের কাছে। তার বাড়ি দক্ষিণ সুরমার তেতলি এলাকায়।

বর্তমান স্বামী  ছিনতাইকারী জাবেদ হুসেন, সিএনজি ড্রাইভার অফজল ও অনঞ্জনাসহ প্রায় ১৫ জন। এ ছাড়া পুলিশের এ এস আই ইলিয়াস, এস. আই শফিক, সিটিএসবির সরওয়ার কবির।

সম্প্রতি অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নারী প্রতারক চক্রের প্রতারণার বিভিন্ন কৌশল। কোথায় কিভাবে তারা চুরি-ছিনতাই করে এমন গোপন কিছু তথ্য।

নারী প্রতারক চক্রটি চুরি করতে গিয়ে কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তারা নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী সেজে যায়। সেখানে ‘টার্গেট’ ঠিক করে সেই টার্গেটের সাথে একই লাইনে দাঁড়ায়,অথবা একি জায়গায় বসে, তারপর সুকৌশলে টার্গেট ব্যক্তিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল, টাকা ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে দ্রুত সহযোগীর কাছে পাচার করে দেয়।

মালার স্বামী : যতোদূর জানা যায়, মালার একাধিক স্বামী রয়েছে। বর্তমান স্বামী ছিনতাইকারী জাবেদ হুসেন, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মোড়উরা গ্রামের আইউব হোসেনের পুত্র। সে বর্তমান স্বামী ছিনতাইকারী জাবেদ হুসেনকে নিয়ে দক্ষিণ সুরমার সিলাম তেলিয়াপাড়ায় বসবাস করে। এর আগে ২০১৫ সালে সিটিএসবির অফিসার  সরওয়ার কবিরের সাথে তার বিয়ে হয় বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে। মালার অপর স্বামী ছিল হিন্দু ধর্মের তার বাড়ি ছিল জৈন্তাপুর, তার নাম রাখা হয়েছিল শামীম সেও ছিনতাইকারী ছিল।

মালার অর্জিত সম্পদ: দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার কলারতল এলাকায় রয়েছে তার নামে জায়গা জমি, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত নিজস্ব সিএনজি চালিত অটোরিক্রাা যার নং-সিলে-থ ১২৫৩৮২।  এছাড়া মালার মা নেহার বেগমের নামে দক্ষিণ সুরমার সিলাম তেলিয়াপাড়ায় মেইন রাস্তায় করেছে তিন তলা ফাউন্ডেশনের একতলা কমপ্লিট আলীশান বাসা।

সংবাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ : সংবাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন মালার সাবেক স্বামী সিটিএসবি  অফিসার সরওয়ার কবির। তিনি লিখিতো বক্তব্যের মাধ্যমে জানান, উনাকে জড়িয়ে সংবাদে উল্লেখিত বিষয়গুলো সঠিক নয়, মালা উনার নাম ব্যবহার করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। তিনি এসব কুূ-কর্মের সাথে সম্পৃক্ত নয়।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম জানান, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।