খেয়াল করে দেখেছেন, আপনার সমান কিংবা আপনার থেকে বেশি যে আয় করে তার থেকে আপনার বেশিরভাগ ঠেকার/প্রয়োজনের সময়ে সাহায্য পাননি। অর্থ সাহায্যের কথা বলছি। আপনার দুর্দিনে আপনাকে যারা নিঃস্বার্থভাবে সহায়তা করেছে, আপনাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে আন্তরিকতা দেখিয়েছে, তারা পদে-অর্থে আপনার চেয়ে ছোট! এটাকে তাদের জীবনের/আয়ের বারাকাহ হিসেবে মেনে নিন। অর্থ থাকলেই হয় না, বিশাল মন থাকতে হয়। অথচ অনেকেরই মন থাকে না!
আপনার সমতুল্য কিংবা অগ্রগণ্য আপনাকে বিশ্বাস করতে পারেনি কিংবা আস্থায় নেয়নি কিন্তু আপনি যাকে ক্ষুদ্র ভেবেছেন, সামান্য মনে করে মনে মনে যাকে অসম্মান করেছেন- আপনার বিপদের দিনে সেই আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনার বিপদ তাঁর বিপদ ভেবে নিয়েছে। উদ্ধার করেছে। আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রের কথা বলছি! ব্যতিক্রম আছে। আমি হয়তো সেই ব্যতিক্রমের সাথে পরিচিত নই। এটা নিতান্তই আমার সীমাবদ্ধতা।
যে আপনার দুর্দিনে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে, এক বাক্যে ‘না’ বলে দিলেও পারতো অথচ হাত খুলে দিয়েছে- তার ঋণ ভুলে যাবেন না। কৃতজ্ঞতা কখনোই যেনো দম্ভে চাপা না পরে। যার কাছ থেকে সামান্যতম উপকার পেয়েছেন তাকে বাকি জীবনে আর কোনদিন পিঠ দেখাবেন না। মনে রাখবেন, আপনি দেনা শোধ করতে পারেন কিন্তু ঋণ শোধের সাধ্য কারো নাই। যে আপনার দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে, লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয় ইজ্জত রক্ষা করেছে- তার প্রতি নত না থাকলে সেটা অমার্জিত অপরাধ হবে। কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য স্পষ্ট করে।
সাধ্যমত মানুষের উপকার করুন। মানুষকে ভালো পরামর্শ দেওয়া, সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়া- এসব ভালো মানসিকতা থেকে আসে। অর্থ দিয়ে সাহায্য করার বড় মন সবার থাকে না। দুঃখী যদি দু’পয়সা ভিক্ষা না পেয়ে আপনার দুয়ার হতে ফেরত যায় তবে আপনার সুদিন বেশিদিন না থাকলে- তাতে দুঃখ পাবেন? দুনিয়া ঘুরছে! আজ দাতার অবস্থানে থেকে দম্ভ এলে আগামীকাল গ্রহীতা হিসেবে আপনি হাত বাড়াবেন না- গ্যারান্টি কে দিচ্ছে? আমির ফকির হয়, ফকির বাদশাহ!
এই সমাজে বড়র থেকে ততোটা সম্মান পাবেন না যতটা আপনায় ছোট’রা করে। কাজেই ছোটকে মূল্যায়ণ করুন। ছোটকে মানুষ ভাবুন। বড় চাকুরি, উঁচু চেয়ার কিংবা ক্ষমতাধর পদ- এসব বড় মানুষ বানায় না। কোন কোন ভৃত্যও মনিবের চেয়ে বড় হয়ে ওঠেন। আজ অহংকার করো না। কেননা কাল তোমার পক্ষে থাকবে নাকি বিপক্ষে সেটা কেউ জানে না। বিনীত থাকো এবং পরোপকারী হও। তোমার সৎ কাজ ও ওয়াদা রক্ষার বিনিময় আসবে। নিশ্চয়ই ভালো কাজ করলে তাকে রহমানের রহমত থেকে নিরাশ হতে হবে না। তোমার দুনিয়া-আখিরাত সহজ হোক- চেষ্টা যাতে না থামে।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com