গোয়াইনঘাটে পাথর চোরি ও চোরাচালানে ৪ পুলিশ অফিসার কোটিপতি- এসপির কাছে অভিযোগ

রোকেয় বেগম : সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় কর্মরত ৪ পুলিশ অফিসার পাথর লুট ও চোরাচালানের মাধ্যমে কোটিপতি এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয় হাদারপার লামনি গ্রামের মৃত আমির উদ্দিন এর পুত্র তাজ উদ্দিন।

তাজউদ্দিন লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে উল্লেখ করেন চোরাচালানের সাথে সরাসরি জড়িত দুই কর্মকর্তা হলো এসআই কামাল ও এএসআই তানবির। তারা পাথর চুরি,ভারতীয় গরু মহিষ সহ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে মিলে মিশে অপরাধে জড়িয়ে গেছেন প্রকাশ্যে। সেই কাজে গোয়াইনঘাট  থানার ওসি ও আওয়ামীলীগের দোসর হিসেবে বিতর্কিত গোয়াইনঘাট- কোম্পানিগনজের সার্কেল এএসপি সায়িদুর রহমানের  যোগসাজশে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিযোগ দায়েরকারী তাজ উদ্দিন।

তাছাড়া  সার্কেল এএসপি সায়িদুর রহমনের নানামূখী দূর্নীতি ও চোরাচালান বানিজ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লেখালেখি করছেন  সিলেটের সচেতন মহল।

এস আই কামাল ও এ এস আই তানবির এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাথর চুরি ও চোরাচালানে সংশ্লিষ্টতার তদন্তে সিলেট পুলিশ সুপারের কাছে গত বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগে করেছেন গোয়াইনঘাটের হাদার পাড়ের লামনি গ্রামের মৃত আমির উদ্দিন এর পুত্র তাজ উদ্দিন।ভূক্ত ভোগী তাজ বলেন,গোয়াইনঘাট থানার ওসি বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দেন এবং এসিল্যান্ড সাহেবও পাথর ফেরতের আশ্বাস দেন।

কিন্তু অদ্যাবধি বিষয়টি মিমাংসা না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার  সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ করেন ভূক্ত ভোগী তাজ। তিনি আরো বলেন,এ দুজন দারোগার বিরুদ্ধে সীমান্তে চোরাচালানে সহায়তার অভিযোগ সহ নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে তার প্রমাণিত হবে। অভিযোগে প্রকাশ,পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে লাখ লাখ মানুষের মতো মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাজ উদ্দিন। পরিবার পরিজনদের মুখে খাবার তুলে দিতে নিরুপায় হয়ে শেষ সম্বল একটি দোকানের মালামাল বিক্রি করে অল্প পুজি নিয়ে আবারও পাথর ব্যবসায় সম্পৃক্ত হন তিনি।

বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারীর পার্শ্ববর্তী এলাকার গরীব শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে নেহায়েত পেটের দায়ে ছোট ছোট গর্ত করে অল্প কিছু শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে, তাদের কাছে থেকে পাথর ক্রয় করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকেন তাজ উদ্দিন।

চলতি মাসের ০৩ নভেম্বর দিবাগত রাত অনুমান ২ টার সময় পুলিশ কর্মকর্তা কামাল ও তানবির আকস্মিক হাদারপার বাজার মসজিদের উত্তরের রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা অনুমান ৯০০ ঘনফুট (যার আনুমানিক বাজার মুল্য- ১,০৮,০০০/-) পাথর ট্রাক দিয়ে নিয়ে যায়।

পরে তিনি জানতে পারেন পাথরগুলো জাফলং এলাকায় নিয়ে ক্রাশার মিলে বিক্রি করেছেন এই দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা । এরপর পাথর ফেরত পেতে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ, এসিল্যান্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিক ভাবে নালিশ করেন তাজ উদ্দিন। কিন্তু  অজানা কারণে এহেন পাথর লুটের এখনও পর্যন্ত কোন সুরাহা হয় নি।

এব্যাপারে জানতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের এস আই কামালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন আমরা যা পাথর আটক করেছি সব থানায় নিয়ে আসছি। থানায় এসে দেখতে পারেন।

এ ব্যাপারে জানতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের এ এস আই তানবিরেএ মুঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন তাজ উদ্দিন আমাদের চুর বানাচ্ছে। আমরা যা উদ্ধার করেছি সেগুলো থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ এর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, এসব অপরাধের সাথে যারা জড়িত উর্ধ্বতন কর্মকতাকে অবহিতপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, চোরাচালানের সাথে পুলিশের যারা জড়িত তাদের নাম ঠিকানা দেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি  মো. মুশফেকুর রহমান এর মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।