‘ভয়াল ২৮ অক্টোবরকে শহীদ দিবস ঘোষণার দাবি’

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ভয়াল ২৮ অক্টোবরকে শহীদ দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেছেন, সেদিনের ভয়াল তান্ডবের চিত্র অনেকেই ভুলে গেছেন। আজকের নতুন প্রজন্ম সেটা দেখেনি। মানুষকে খুন করে নৃত্য করা হয়েছিলো। সাপের মতো লগি-বইঠা দিয়ে মানুষ মারা হয়েছিল।

 

তিনি আরো বলেন, সেদিনের আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি লগি-বৈঠা হাতে নিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এদিনই বাংলাদেশ তার পথ হারিয়েছিলো।

গত ১৮ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই আগষ্টের গণহত্যার পর গত ৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ আবার তার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। ফ্যাসিজম বিদায় নিয়েছে।

এখন এক মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার সময়। তিনি সবাইকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেতনায় এগিয়ে আহবান জানান।

 

গতকাল সোমবার মাগরিবের পর ২৮শে অক্টোবর উপলক্ষে সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে একাত্তর-পরবর্তী সবচেয়ে বড় গণবিপ্লব আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সাঈদ মুগ্ধসহ হাজারো তরুণদের তাজা রক্তে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে।

এই শহীদ পরিবারগুলোর দেখভাল করার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। রাষ্ট্রকে সমস্ত শক্তি দিয়ে আহতদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘হুমকি আসছে যে হুট করে চলে আসবো, নভেম্বরে আসবো, ডিসেম্বরে আসবো। গণহত্যার পরও গণহত্যাকারীদের কোনো বোধোদয় হয়নি। একটার পর একটা ঘটনা সামনে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ভালো থাকুক তারা চায় না।’

রাষ্ট্রপতির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, তিনি নাকি হাসিনার পদত্যাগপত্র হাতে পাননি। অথচ তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, পদত্যাগপত্রটি হাতে পেয়েছেন।

এই ব্যক্তিকে ফ্যাসিবাদের ভয়ঙ্কর রূপ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা মিলে সকল সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী ও ঘৃণ্যদল আখ্যায়িত করে বলেন, শুধু একটা চেতনার কথা বলে এদেশকে লুটেপুটে খেয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা।

 

এদেশকে তারা বাপের সম্পত্তি মনে করত। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের সবকিছু ভেঙে গেছে। এখন আর আওয়ামী লীগ নেই।

আওয়ামী লীগের এক বড় নেতার বিদেশী গণমাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ওই নেতা বলেছেন যে আওয়ামী লীগের সামনে এখন আর কোনো কিছুই নেই। সামনে অন্ধকার। নেতাকর্মীরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছে।

তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের আস্কারা ও উস্কানি দাতাদের হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বলেন, ডিসি ওসি যেই হোন না কেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

 

সিলেট মহানগরী জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শাহজাহান আলীর সঞ্চালনায় আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা জামায়াতের নবনিযুক্ত আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান।

 

তিনি তার বক্তব্যে ওয়ান ইলেভেন সরকারকে নাস্তিক-মুনাফিক আখ্যায়িত করে বলেন, এরাই শেখ হাসিনাকে দিয়ে ক্ষমতায় আসতে ২৮শে অক্টোবরের প্লট তৈরী করে।

এজন্যই ওয়ান ইলিভেনের সরকারের প্রচ্ছন্ন সহোযোগিতায় ক্ষমতায় আসীন হয়ে শেখ হাসিনা ফখরুদ্দীন মঈন উদ্দিন সরকারের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেন।

মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, কিন্তু শেষ হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের দক্ষিণ জেলার সাবেক আমির অধ্যাপক আবদুল হান্নান, মহানগর শিবিরের সভাপতি শরীফ মাহমুদ।

আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত গোলাপগঞ্জের শহীদ মিনহাজ আহমদের ভাই জাকির আহমদ, সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ শাহজাহান আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে ও একই এলাকায় পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ববরণকারী সিএনজি চালক আরশ আলী, পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ মোহাম্মদ মোস্তাকের পরিবারের পক্ষ থেকে সোহেল আহম্মদ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের হামলায় সিলেট শহরের মীরবক্সটুলায় আহত হয়ে বর্তমানে পঙ্গু হাবিবুল্লাহ সিকদার, আওয়ামী লীগের গুলিতে গোলাপগঞ্জে আহত কামিল উদ্দিন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে পুলিশের গুলিতে আহত ব্যবসায়ী দিলখু মিয়া ও ছাত্রলীগের হামলায় জিন্দাবাজারে আহত দিনার আহমদ।

এছাড়া আলোচনা সভায় পুলিশের গুলিতে নিহত পুত্রের কথা বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন পিতা নিখিল চন্দ্র কর। এ সময় আলোচনা সভায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।