সরকার পতনের একদফা দাবিতে ডাকা হরতালে সিলেটে যা যা ঘটল
নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ
সরকার পতনের একদফা দাবিতে ডাকা হরতালে সিলেটে সকাল থেকে বিএনপি ও জামায়াত বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করছে। কোথাও তারা গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করছে, আবার কোথাও সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
নাশকতারোধে সড়কে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও রয়েছে সতর্কাবস্থায়। সকালে নগরীর জিন্দাবাজারে পুলিশের সাথে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আজ রবিবার সকাল ১০টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজারে গাছ ফেলে অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কোহিনূর আহমদ ও সহ দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম।
এছাড়া প্রায় একই সময়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তেতলিতে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। স্থানে স্থানে পিকেটিংয়ের কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যানশূণ্য হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন।
এদিকে একই সময়ে সিলেট নগরীর দরগাহ গেইটে রিকশায় আগুন দিয়ে পিকেটিং করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় কয়েকজন সাংবাদিকের মোটরসাইকেলেও ভাঙচুর চালায় তারা।
এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত ‘পিকেটিং’ করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রবিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে রাস্তায় নেমেছেন তারা।
সকাল ৯টার দিকে মহানগরের লন্ডনি রোডের হাজীপাড়ার মুখ থেকে ৩০-৩৫ টি মোটরসাইকেলে করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ১০-১২টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তাদের অনেকের হাতে ছিলো লাঠি। এসময় ১৫-২০ মিনিট ভাঙচুর চালিয়ে তারা চলে যান।
সিলেটের বিভিন্ন সড়কে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকদের পিকেটিং করতে দেখা গেছে। খবর পাওয়া গেছে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ার।
রোববার (২৯শে অক্টোবর) সকালে নগরীর জেলরোড এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় বিএনপি কর্মীরা। মহাজনপট্টির গলি থেকে ২০/২৫ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে জেল রোড পয়েন্টে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় তারা রিকশা চলাচলে বাধা দেয়। তবে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে বিএনপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এসময় পুলিশের দিকে ইট-পাটকের নিক্ষেপ করেন নেতাকর্মীরা। তবে বেশিক্ষণ রাস্তায় থাকতে পারেনি তারা। মিছিল নিয়ে জেলরোডের দিকে চলে যায়।
জিন্দাবাজার পয়েন্ট ও কাজি ইলিয়াস এলাকায় সড়কে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁতিপাড়ার গলি থেকে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী হঠাৎ বের হয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তবে পুলিশের ধাওয়ায় তারা দাঁড়াতে পারেনি রাস্তায়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় পিকেটিংকারী একজনের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করা হয়। এসময় ফাঁকা গুলি করলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে আশেপাশে অলিগলিতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
সকালে সিলেটে ঢিলেঢালা হরতাল থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় বিএনপি-জামায়াতের। এসময় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকায় হরতালবিরোধী মিছিল করছে ছাত্রলীগ। এর আগে বেলা ১১টার দিকে বন্দরবাজারে শান্তিসমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। থমথমে এই পরিস্থিতিতে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ ও র্যাব।
এদিকে, সিলেটে মহানগর বিএনপি নেতা জালালী পংকীসহ ৮ নেতাকর্মী মিছিল থেকে আটক করেছে পুলিশ।
পিকেটিংয়ের কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যানশূন্য হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও চলছে না গণপরিহন। এতে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজন পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন তাদের গন্তব্যে।