সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
স’মিল শিল্প সেক্টরের জন্য সরকার ঘোষিত নিম্নমত মজুরি এবং নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদান ও ৮ ঘন্টা কর্মদিবস নির্ধারণসহ অবিলম্বে শ্রমআইন বাস্তবায়নের দাবিতে দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক সমাবেশে বক্তারা।
০৬ অক্টোম্বর’২৩ শুক্রবার বিকাল ৪ টায় বৈরি আবহাওয়াজনিত কারণে পূর্বনির্ধারিত কোর্ট পয়েন্টের পরিবর্তে সুরমা মার্কেটস্থ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কার্যালয়ে বাংলাদেশ স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি খলিলুর রহমান।
স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা চৌধুরী আশিকুল আলম।
শ্রমিক সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক রমজান আলী পটু, জাতীয় ছাত্রদল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি ওয়াসিম মোহাম্মদ শামস্, সিলেট জেলা স’মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আইয়ুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, ফেঞ্চুগঞ্জ স’মিল শ্রমিক সংঘের নেতা আনোয়ার হোসেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, সিলেট সদর উপজেলা স’মিল স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি হজর আলী, মৌলভীবাজার স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোঃ ছালিক মিয়া, বালাগঞ্জ স’মিল শ্রমিক সংঘের নেতা ফারুক মিয়া, স’মিল শ্রমিকনেতা জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ছাদেক মিয়া, সিলেট জেলা প্রেস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী প্রমূখ।
সমাবেশ বক্তারা বলেন বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির বাজারে স’মিল শ্রমিকরা দিশেহারা। চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, পিয়াজ, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, দুধ-ডিম, ঔষুধপত্রসহ নিত্যপণ্যে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সরকার জনগণের জীবন-জীবিকার সকল প্রয়োজনীয় বিষয় রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ব্যবসায়ীদের অবাধ লুটপাট ও লাগামহীন বাণিজ্যক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। এমন কি দেড় বছরের বেশি সময় আগে স’মিল সেক্টরে সরকার নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করলেও এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তদুপরি প্রতিনিয়ত স’মিল শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়।
মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স’মিলে কর্মরত শ্রমিকদের শতকরা ৬০ ভাগ দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অঙ্গহানি হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। কাজ করতে যেয়ে এ সমস্ত দূর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের উপযুক্ত চিকিৎসা যেমন মালিক করে না, তেমননি অঙ্গহানি ও মৃত্যুর জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপুরণও মূলত দেওয়া হয় না। স’মিলের মালিকরা শ্রমআইন, রাষ্ট্রীয় আইনের তোয়াক্কা করেন না।
শ্রমআইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদান, দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের দ্বিগুণ মজুরি, মজুরিসহ সাপ্তাহিক ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি, চিকিৎসা ছুটি, উৎসব ছুটি, অর্জিত ছুটি ইত্যাদির প্রদানের বিধান থাকলেও তা প্রদান করা হয় না। যার কারণে স’মিল শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছে।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন বাংলাদেশ শ্রম আইনে ধর্মঘট করার অধিকার প্রদান করা হলেও সরকার অত্যাবশকীয় পরিষেবা আইন নামে একটি কালো আইন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দাবি আদায়ে শ্রমিকদের ধর্মঘট করার অধিকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। পরিষেবা আইনের মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের ধর্মঘট ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার সংকুচিত করতে চায়।
দেশের প্রচলিত শ্রমআইনের সাথে এই পরিষেবা আইন যেমন সাংঘর্ষিক তেমনি এই অগণতান্ত্রিক আইনের মাধ্যমে শ্রমিকদের রক্তঝরা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত অধিকারকে হরণ করা পাঁয়তারা চলছে। সরকারের এই উদ্যোগ চরম স্বৈরচারী মনোভাবে প্রকাশ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নতুন মোড়কে সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে সরকার গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করে এখন শ্রমিকদের দাবি ও অধিকার আদায়ে শ্রমআইন স্বীকৃত ধর্মঘটের অধিকার হরণ করে শ্রমিকদেরকে প্রাণহীন যন্ত্রের মতো উৎপাদনের উপাঙ্গে পরিণত করতে চায়। সরকার জনজীবনের সমস্যাকে উপেক্ষা করে উন্নয়নের যে গালভরা বুলি আওড়াচ্ছে তা মূলত সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফার লক্ষ্যে সড়ক, রেল, নৌপথসহ অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ আর সর্বোচ্চ লুটপাট ছাড়া আর কিছুই নয়।
সাম্রাজ্যবাদী ঋণনির্ভর এই সকল তথাকথিত উন্নয়ের সুদাসল পরিশোধে বাজেটের মূল অর্থ ব্যয় হয়। সাম্রাজ্যবাদী ঋণনির্ভর এই সকল প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে আগামী ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে ‘লালবাতি’ জ্বলার বিপদের কথা বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের ফানুস চুপসে গিয়ে গত দেড় বছরে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে প্রায় ১৮ বিলিয়নে নেমে নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। মাথাপ্রতি ঋণ লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে।
সমাবেশ থেকে স’মিল সেক্টরে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন, অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহার, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর এবং চাল,ডাল তেলসহ নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং স্বল্পমূল্যে স্বর্বাত্মক রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।