তিস্তার বাঁধ ভাঙলো ভারতে, বাংলাদেশে নদীপাড়ে রেড এলার্ট-মাইকিং
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা অংশে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ভারী ঢল ধেয়ে আসছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভয়াবহ বন্যার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে আতঙ্কিত তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে ও সার্বিক প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।
নদীপাড়ে রেডএলার্ট জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা অববাহিকায় সর্তকতা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। সেই সাথে চর ও নদীপাড়ের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ফলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি।
পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি জল কপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা চরের নিম্নাঞ্চলের মানুষ আরেকবার বন্যার আশঙ্কা করছেন।
বুধবার বিকাল তিনটায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার দশমিক ৭ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য জানায়, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (CWC) এর তথ্যানুযায়ী, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এছাড়াও রংপুর অঞ্চলসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এলাকায় রাত থেকেই বৃষ্টি চলছে।
বুধবার সকাল ৯টার তথ্যানুযায়ী তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টের পানি সমতল ২৮ দশমিক ১৫ মিটার (বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার নিচে) যা বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ভোর নাগাদ বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ভারতের সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরেক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী শনিবার (৭ অক্টোবর) নাগাদ দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, পুনর্ভবা, কুলিখ টাঙ্গন, ইছামতি যমুনা ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
এই সময়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মহানন্দা, ছোট যমুনা, করতোয়া, আত্রাই ও গুর নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, কালিম্পংয়ে ১০ নম্বরের জাতীয় সড়ক ভেসে গেছে। সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধসের কারণ বাংলা-সিকিমের যোগযোগ বন্ধ রয়েছে। ড্যাম ভেঙে যাওয়ায় তিস্তার পানিতে সিকিমে বন্যা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। বন্যায় ভেসে গেছে ভারতীয় ২৩ সেনা।