সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
সিলেটের গোলাগঞ্জে জালিয়াতির মাধ্যমে এক প্রবাসী নারীর বাড়ি ও জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
রোববার ( ২৩ জুলাই) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন ওই নারীর ফুফাতো ভাই ও আমমোক্তার, মোগলাবাজার থানার চানপুর ধোপাকান্দি গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে আজির উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার মামাতো বোন গোলাপগঞ্জের গাগুয়া গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুস সত্তারের মেয়ে আয়শা বেগম।
তিনিও যুক্তরাজ্যের নাগরিক। স্কুল জীবনে তিনি গোলপগঞ্জে তার চাচার বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন।
তখন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার রণকেলী গ্রামের অতির আলীর ছেলে শাহাজাহান আহমদের সাথে পরিচয় হয়েছিল।
কিশোরী বয়সের আয়শাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে তিনি তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। পরে আয়শা লন্ডন যাওযার পরেও সম্পর্ক ছিল। আয়শা পরিবারের অমতে দেশে ফিরেন এবং ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর শাহাজাহানকে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর আয়শা বুঝতে পারেন শাহাজাহান তাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছেন বা করছেন। তবু নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে এবং শাহাজাহানের দেয়া প্রতিশ্রম্নতি বিশ্বাস করে আয়শা তার সঙ্গে সংসার জীবন অব্যাহত রাখেন এবং ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে লন্ডন নিয়ে যান। ওই বছরের অক্টোবরে তার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।
আয়শা তার নিজের টাকায় শাহজাহানের দেশের সংসার চালাতেন। ১৯৯৯ সালের ২৫ জুলাই শাহজাহানদের প্রতিবেশি আপ্তাব উদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে রণকেলী মৌজার জেএল নম্বর ২৮ এর ২০৮ খতিয়ানের ৫৮৮৫ এসএ দাগ নম্বরের ভূমি থেকে মোট ৬০ একর ভূমি আয়শা ও শাহাজাহান দু’জনের নামে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।এই ভূমিতে পরে দু’জন মিলে ১০/১২ লাখ টাকায় ঘর তৈরি করেন।
আজির উদ্দিন বলেন, কিন্তু পরে দু’জনের দাম্পত্য সমস্যা আরও প্রকট হলে ২০০২ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তখন আয়শা তিন সন্তানের জননী।
বিয়ে বিচ্ছেদের পর খরিদকৃত ভূমিতে তৈরি ঘরের দক্ষিনাংশসহ উঠান এবং আশপাশের কিছু অংশ
আপোষে আয়শাকে দেয়া হয় এবং তিন সন্তান নিয়ে তিনি তা ভোগ করছিলেন।
কিন্তু কয়েকবছর পর আয়শা তার ঘর ও ভূমির উন্নয়ন করতে চাইলে শাহাজাহান ও তার পরিবারের লোকজন বাধা দেন।
এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে শাহজাহান জানান, আয়শার অংশটি তার নামে হস্তান্তর করেছেন। আয়শা তা অস্বীকার করেন এবং আমি শাহজাহানের নামে একটি জাল দলিলের হদিস পাই।
ওই জাল দলিলে আয়শাকে দাতা ও শাহাজাহানকে গ্রহীতা হিসাবে উল্লেখ করে রনকেলী গ্রামের মাখন মিয়ার ছেলে শাহিন আহমদকে সনাক্তকারী ও আসুক আহমদের ছেলে আহাদ আহমদকে স্বাক্ষি হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
দলিল লেখক হিসাবে নাম উল্লেখ করা হয় ঢাকাদক্ষিণ সাবরেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক মো.
আক্তারুজ্জামানের।
আমি আক্তারুজ্জামানকে দলিলটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে এ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে আমাকে জানান। জাল দলিলের মাধ্যমে তার সম্পত্তি গ্রাস করার অপচেষ্টার বিষয়টি পরিস্কার হওয়ার পর আয়শা নিজে বাদি হয়ে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ তৃতীয় আদালতে
শাহাজাহানকে ১নং, শাহীনকে ২, আহাদকে ৩ এবং আক্তারুজ্জামানকে ৪নং আসামী করে দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন (নং ০২/২০১৭)।
মামলাটি এখন শেষের দিকে। আমরা ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর আগে একবার দেশে এসে সন্তানদের নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতে চাইলে শাহাজাহান তার ভাইসহ অন্যান্যদের দিয়ে আয়শা ও তার সন্তানদের তাড়িয়ে দেন। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হত্যার হুমকিও দেন।
আয়শা এখন জালিয়াতির মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি শাহজাহান ও তার পরিবারের সদসদের প্রতি জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে অবিলম্বে আয়শার বাড়ির অংশ তাকে সমঝে দেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানান।