কানাইঘাটে চোরকারবারীদের হাতে ভারতীয় নাগরিক আটক,মুক্তিপণ দাবী

কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ

 

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মাদারপুর গ্রামে এক ভারতীয় নাগরিককে আটক করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবীর ঘটনায় এলাকা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনার বিশ্বস্থ খবর পেয়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিন (২৫) কে আটককারীদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় ষাড়াসী অভিযানের পরও উদ্ধার করতে পারেনি তাকে। এমনকি ভারতীয় নাগরিককে ধরে আনার সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, পুলিশের ষাড়াসী অভিযানের কারনে ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনকে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারে আটককারীরা। জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইকবাল উদ্দিনকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের আটক করতে জকিগঞ্জ পুলিশ অভিযানও চালিয়েছে।

কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদ জানান, ভারতীয় এক নাগরিককে বাংলাদেশে এনে আটকের সংবাদ জানার পর কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে গত মঙ্গলবাররাতভর অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের অবস্থান প্রাথমিক ভাবে জকিগঞ্জে থানার কাজলশাহ এলাকায় জানার পর আমি বিষয়টি জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় বিজিবিকে অবহিত করেছি।

জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ভারতীয় নাগরিককে উদ্ধার ও ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করতে অভিযান চালাচ্ছে। গত মঙ্গলবার উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের মৃত মস্তকিন আলীর পুত্র সাবেক ইউপি সদস্য মাহতাব উদ্দিন ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনকে কিভাবে আটক করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সাথে কারা কারা জড়িত তাদের নাম ও ঘটনার বিবরণ থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদকে জানান।

সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জুলাই (শুক্রবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার একদল চোরাকারবারী চক্র ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলার গুমড়া থানার জালালপুর (তারাপুর) গ্রামের কামাল উদ্দিনের পুত্র ইকবাল উদ্দিন (২৫) কে কৌশলে কাড়াবাল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এনে তাকে জোরপূর্বক ভাবে মাদারপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ @ লতু হাজীর পুত্র চোরাকারবারী নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে একটি ঘরে আটক করে রাখা হয়। একপর্যায়ে চোরকারবারী চক্রের সদস্যরা ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনের নিকট ভারতীয় ১৭ লক্ষ রুপী মুক্তিপণ দাবী করে।

ইকবাল উদ্দিন মুক্তিপণ দিতে অপারগতা জানালে অপহরণকারী চোরকারবারীরা ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনকে রশি দিয়ে হাত—পা ও কাপড়
দিয়ে মুখ বেঁধে লাঠি ও লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাতিড় পিঠিয়ে তার নিকট থেকে ভারতীয় ১৭ লক্ষ রুপি আদায়ের জন্য নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ধারন করে ইকবাল উদ্দিনের মোবাইলের ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তার পরিবারের নিকট প্রেরন করে।

 

এমনকি চোরাকারবারীরা ইকবাল উদ্দিনের পরিবারের নিকট তার কান্নার আওয়াজ শুনিয়ে বলে তাদের দাবীকৃত ১৭ লক্ষ রুপি না দিলে ইকবালকে খুন করে ফেলবে।

এমন নির্যাতনের চিত্র ও ভিডিও পেয়ে বিষয়টি ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনের আত্মীয় গোয়াইঘাট উপজেলার জাফলং গ্রামের আব্দুস সোবহানের পুত্র রায়হান পারভেজ বিষয়টি স্থানীয় সীমান্তবর্তী এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করেন। ঘটনা শুনে কাড়াবাল্লা পূর্ব গ্রামের মৃত মসকিন আলীর পুত্র সাবেক ইউপি সদস্য মাহতাব উদ্দিন আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে চোরকারবারী নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে ইকবাল উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি।

তবে আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন নাজিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে একজনকে ধরে কয়েকজন অন্যত্র নিয়ে যেতে দেখেছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ার কারনে সাবেক ইউপি সদস্য মাহতাব উদ্দিন ঘটনার সাথে জড়িত এলাকার চোরাচালান চক্রের সদস্য লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের দনা রতনেরগুল গ্রামের আব্দুর রহিমের পুত্র সাদ্দাম (৩২), মাদারপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ @ লতু হাজীর পুত্র নাজিম উদ্দিন (৩০), একই গ্রামের মৃত সবজান আলীর পুত্র মোস্তাক আহমদ (৩৫), মিকিরপাড়া গ্রামের মৃত সাজ্জাদুর রহমানের পুত্র এনাম উদ্দিন (২৮), বড়খেওড় গ্রামের মৃত আব্দুর রকিবের পুত্র সুলতান আহমদ (৩৬), দনা বালিচড়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমান খলুর পুত্র ফয়সল আহমদ (৩২), তার ভাই আইনুল হক (২৮), দনা বাঙ্গালীপাড়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের পুত্র রায়হান আহমদ (৩৫) ও রতনেরগুল গ্রামের মৃত কুতুব আলীর পুত্র রিয়াজ উদ্দিন (২৮) সহ অজ্ঞাতানামা ৩/৪ জনের বিষয়টি কানাইঘাট থানায় ওসিকে জানান।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনের বাড়ি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কাড়াবাল্লা ১৩৪১নং মেইন পিলার এর পূর্ব পাশে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত।

 

উল্লেখিত চোরাকারী চক্রের সদস্যরা ভারত হতে অবৈধ ভাবে প্রায়ই গরু, মহিষ, মাদক ইত্যাদি বাংলাদেশে আনে। এই সুবাদে ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিন এর সাথে তাদের পরিচয় হয়।

তবে অনেকে মনে করছেন চোরাচালানীর ব্যবসার টাকা আদান—প্রদান নিয়ে ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনকে ভারত থেকে কৌশলে বাংলাদেশে এনে টাকা উদ্ধারে জন্য আটক করে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারতীয় এক যুবককে আটকের বিষয়ে তাকে কেউ জানায়নি। তবে তিনি বাজারে গিয়ে লোকমুখে জানতে পেরেছেন একজনকে আটকের বিষয়টি।

ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন জানান, ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনকে আটক করে রাখা হয়েছে এমন সংবাদ তিনি জেনেছেন এবং তার পরিবারের কাছে ১৭ লক্ষ ভারতীয় রুপি মুক্তিপণ দাবীর ঘটনার ভিডিও রেকর্ডও সহ নির্যাতনের কয়েকটি ছবি হাত—পা বাঁধা অবস্থায় তার কাছে রয়েছে।

 

পুলিশ জড়িতদের আটক করতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযানও চালাচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন। কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারতীয় নাগরিক আটকের কোন সংবাদ তিনি পাননি। এইমাত্র গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে জেনেছেন।
বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে থানা পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।