কানাইঘাটে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বাঁধার তোয়াক্কা না করে বাল্য বিবাহ
কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ
কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামে থানা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে বাল্য বিবাহ সম্পন্নের ঘটনায়
এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণগ্রামের মুসলিম উদ্দিনের মেয়ে নাবিয়া বেগম যার জন্ম সনদ অনুযায়ী বয়স হচ্ছে ১৫ বছর ৪ সাড়ে মাস, তার বিবাহ গত শুক্রবার (৯ জুন) নিজ বাড়িতে দুপুরের প্রীতিভোজের মাধ্যমে একই উপজেলার আগফৌদ নারাইনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুত্র কাতার ফেরত প্রবাসী কুতুব উদ্দিনের সাথে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কনে নাবিয়া বেগমের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ার কারনে বাল্য বিবাহ সম্পন্নের আগের দিন বৃহস্পতিবার স্থানীয় কিছু লোকজন ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুব আহমদকে জানালে তিনি কনের পিতা মুসলিম উদ্দিনকে তার মেয়ের বাল্য বিবাহ না দেওয়ার জন্য নিষেধ করেন। তারপরও কনের পরিবারের লোকজন পূর্ব নির্ধারিত অনুযায়ী শুক্রবার বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রীতিভোজ কনের বাড়িতে আয়োজন করলে বরযাত্রী নিয়ে বর কুতুব উদ্দিন কনের বাড়িতে আসেন।
বিয়ের দিন বাল্য বিবাহের সংবাদ পেয়ে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম ও ৭নং দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার লোকমান উদ্দিন জানতে পেরে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম উপজেলা মহিলা
বিষয়ক অফিসের কর্মকর্তাকে বাল্য বিবাহ বন্ধ করার জন্য বলেন। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কনের পিতা মুসলিম উদ্দিন সহ পরিবারের লোকজনকে নাবিয়া বেগমের বাল্য বিবাহ না দেওয়ার জন্য জানানো হয়।
বর ও কনে পক্ষের পরিবারের লোকজন নাবিয়া বেগমের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর পাত্রের হাতে তুলে দিবেন এমন সিন্ধান্ত হলে বরযাত্রী সহ কনের বাড়ির আত্মীয়—স্বজনদের মধ্যে দুপুরের প্রীতিভোজ সম্পন্ন হয়।
কিন্তু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার লোকমান উদ্দিন ও ইউপি সদস্য মাহবুব আহমদ জানান, বাল্য বিবাহের বাঁধা নিষেধের পর কনের পরিবারের লোকজন ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর নাবিয়া বেগমকে বরের বাড়িতে তুলে দিবেন এমন আশ্বাস দেওয়ার পরও শুক্রবার সন্ধ্যার পর থানা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে নাবিয়া বেগমকে বর ও তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়।
বর্তমানে নাবিয়া বেগম তার স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছে বলে এলাকার জনপ্রতিনিধি সহ অনেকে জানিয়েছেন।
জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে বাল্য বিবাহ সম্পন্নের ঘটনায় বাল্য বিবাহ আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাল্য বিবাহ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে কনের পিতা মুসলিম উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তার মেয়ে নাবিয়া বেগমের বিয়ে পূর্ব থেকে আগফৌদ নারাইনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুত্র কাতার প্রবাসী কুতুব উদ্দিনের সাথে ঠিক করা হয়।
কুতুব উদ্দিন প্রবাস থেকে চলে আসার পর আমরা বিয়ের আয়োজন করি। মেয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কম হওয়ার কারনে জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য বলা হয়। আমি প্রশাসনের কথা রেখেছি, কিন্তু এলাকার কিছু মুরব্বীয়ানদের পরামর্শে মেয়ে নাবিয়া বেগমকে তার স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
প্রসজ্ঞত যে, ইদানিং প্রশাসনের বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে কানাইঘাটে বাল্য বিবাহ সম্পন্নের ঘটনা ঘটছে। প্রথমে প্রশাসনের বাঁধা নিষেধ মানা হলেও বিয়ের দিন অথবা পরের দিন চুপিসারে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের তাদের স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।
সম্প্রতি পৌরসভার শিবনগর গ্রামে বাল্য বিবাহের আয়োজন করা হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিনের বেলা বাল্য বিবাহ পন্ড করা হলেও রাতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কনেকে তার স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হয়।