সিলেটে চাঞ্চল্যকর রায়হান হত্যা: আকবরকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা না নেওয়ায় এএসপি নির্মলেন্দুর শাস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক::

সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমেদ নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (এ এস পি ) নির্মলেন্দু চক্রবর্তীকে শাস্তি দিয়েছে সরকার।

রায়হান আহমেদের মৃত্যুর পর এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার না করা এবং মামলা সঠিবভাবে তদারকি না করায় ‘তিরস্কার’ লঘুদন্ড দেওয়া হয়েছে তাকে।

রায়হান হত্যা মামলার অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ছিলেন নির্মলেন্দু চক্রবর্তী। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার।

২০১৭ সালে ইন্সপেক্টর থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এ এস পি) হন নির্মলেন্দু চক্রবর্তী। সেসময় তিনি চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। পদোন্নতির পর তাকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ-এসএমপিতে পদায়ন করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত ২৫ মে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক সহকারী কমিশনার নির্মলেন্দুকে এ শাস্তি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নির্মলেন্দু চক্রবর্তী ও ইতোপূর্বে সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মকালে গত ১১/১০/২০২০ তারিখ জনৈক রায়হান আহমেদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই (নি:) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য কর্তৃক শারীরিকভাবে নির্যাতনের ফলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 

এ ঘটনায় যথাযথ তদারকি না করে ভুল ধারায় সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় ২০২০ সালের ১২ই অক্টোবর মামলা হয়। ঘটনার অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ছিলেন নির্মলেন্দু চক্রবর্তী।
পুলিশ সদস্যদের শারীরিক নির্যাতনের কারণে রায়হান আহমদের মৃত্যু ঘটে, যা ফৌজদারি অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি এসআই আকবর হোসেনকে গ্রেফতারে আইনানুগ উদ্যোগ গ্রহণ না করে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
 
একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে ২০১১ সালের ১০ই মার্চ অভিযোগনামা ও অভিযোগবিবরণী জারি করা হয় বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আপনার যথাযথ তদারকির অভাবে ভুল ধারায় সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানায় ১২/১০/২০২০ তারিখ মামলা নং ২০ দঃ বি: ৩০২/৩৪ ধারায় এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫(১)/১৫(২) (১৫(৩) ধারায় মামলা রুজু হয়। আপনি অনুসন্ধান কমিটির সদস্য হিসেবে অনুসন্ধানকালে পুলিশ সদস্য দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের কারণে রায়হান আহমেদের মৃত্যু ঘটে, যা ফৌজদারি অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি এসআই (নি:) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতারে আইনানুগ উদ্যোগ গ্রহণ না করে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করাসহ এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে ১০/৩/২০২১ তারিখ অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয়।

এ প্রেক্ষিতে ১১/০৯/২০২১ তারিখে কারণ দর্শানোর জবাব প্রদান করে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন এবং ১৫/১২/২০২১ তারিখ তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয় বলেও এতে জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ব্যক্তিগত শুনানিতে পক্ষদের প্রদত্ত বক্তব্য এবং প্রাসঙ্গিক সকল তথ্যাদি বিবেচনা করে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদন্ড আরোপের সম্ভাবনা থাকার অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমানকে এ বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক গত ২৩/১১/২০২২ তারিখে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে নির্মলেন্দু চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(ক) বিধি মোতাবেক ‘অদক্ষতা’ এর প্রমাণিত অভিযোগে একই বিধিমালার বিধি ও এর উপবিধি ২(ক) মোতাবেক ‘তিরস্কার’ লঘুদন্ড প্রদান করা হল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।