সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
১০জন নারী উদ্যোক্তাকে তাদের সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত করা হয় ।আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড পারপাজ-এর যৌথ উদ্যোগে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালাটির শিরোনাম ছিল “দ্য রোল অফ উইমেন বিজনেস সেন্টার মডেল – (ডব্লিউবিসি) ইন ইমপ্রুভিং অ্যাক্সেস টু ডিজিটাল টুলস ফর রুরাল উইমেন।”
সেশন চলাকালীন অংশগ্রহণকারীদের সাথে এই উদ্যোগের ফলাফল শেয়ার করা হয়। এর ফলে তারা এই উদ্যোগের প্রভাব এবং গ্রামীণ নারীদের জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারেন। কর্মশালায় ১০জন সফল নারী উদ্যোক্তাকে উইমেন বিজনেস সেন্টারের মাধ্যমে তাদের অসাধারণ অর্জনের জন্য পুরস্কৃত করা হয়।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে আয়োজিত এই কর্মশালায় অতিথি হিসেবে অংশ নেন সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মকর্তারা এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও-র প্রতিনিধিরা।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান এবং জামালপুরের মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক কামরুন নাহার।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভিন। কর্মশালা চলাকালীন অংশগ্রহণকারীরা স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ হিসাবে গ্রামাঞ্চলের নারীদের ডিজিটাল টুলে অ্যাক্সেসের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভিন বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রথম ভিত্তি হলো স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলা। কিন্তু আমাদের গ্রামাঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তি এখনো পুরোপুরি পৌঁছেনি। দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড পারপাজ-এর মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ নারীদের জন্য ডিজিটাল ও আইটি টুল সহজলভ্য করতে কাজ করছে দেখে আমি আশান্বিত হচ্ছি।
এ ধরনের প্রোগ্রাম শুধু নারীদের প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষমই করে না, সমাজের উন্নয়নেও সহায়তা করে। কর্মশালায় ১০জন নারী উদ্যোক্তাকে তাদের সফল ব্যবসা এবং সমাজের উন্নয়নে তাদের অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়।
২০১৫ সাল থেকে জামালপুর, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় ৭০টি ডব্লিউবিসি ১ লক্ষ নারীর জীবনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছে। আর পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন ৪ লক্ষ মানুষ। বর্তমানে সুনামগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ জেলায় ৩০টি ডব্লিউবিসি নিয়ে এর দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে। এই পর্যায়ের লক্ষ্য ৪০,০০০ নারী উদ্যোক্তার ক্ষমতায়ন। এই ১০০টি ডব্লিউবিসি-র মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারা তাদের সমাজের উন্নয়নেও সাহায্য করেছেন। ৫৮,০০০- এর বেশি সংখ্যক পরিবার স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সহায়তার জন্য ডব্লিউবিসি-র মাধ্যমে নিবন্ধন করেন আর টেলিমেডিসিন সেবা পেয়েছেন ২৬,০০০জনের বেশি নারী। ডব্লিউবিসি-র মাধ্যমে কৃষক ও ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হন।
৪৬,২০০জন নারী উদ্যোক্তা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৮০,০০০জন নারী গবাদি পশু ও কৃষি সেবা পেয়েছেন। এসব সেবার পাশাপাশি এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা ডব্লিউবিসি থেকে মোবাইল রিচার্জ, ফটো প্রিন্ট, স্ক্যান ও প্রিন্টিং সেবাও পেয়ে থাকেন।
জাতীয় কর্মশালাটির আগে জামালপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সুনামগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জের ১০০টি ডব্লিউবিসি-তে ছোট আকারের কর্মশালার আয়োজন করেছিল প্রতিষ্ঠান দু’টি। কমিউনিটি এনগেজমেন্ট চলাকালীন উইমেন বিজনেস সেন্টারের নারী উদ্যোক্তা এবং সমাজের নারীরা জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের গুরুত্ব সম্পর্কে
শেখার সুযোগ পান।
কমিউনিটি এনগেজমেন্টের পর গোপালগঞ্জ, জামালপুর, সুনামগঞ্জে জেলা পর্যায়ে তিনটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সমাজে ডিজিটাল টুলের সহজলভ্যতা বাড়াতে উইমেন বিজনেস সেন্টারের ভূমিকা ছিল এই সভাগুলোর আলোচ্য বিষয়। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা এই আলোচনায় অংশ নেন। তারা সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে সবার জন্য ডিজিটাল টুল সহজলভ্য করে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন।
দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সাদিয়া ম্যাডসবার্গ বলেন, “ইউনাইটেড পারপাজের মাধ্যমে নারীদের ক্যারিয়ার, সম্পদ ও আত্মনির্ভরশীল জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন হচ্ছে। মানুষের উন্নতি ও সাফল্য অর্জন করার মতো একটি পরিবেশ তৈরি করাই সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ।”
এসব বিজনেস সেন্টারের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীরা ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তি, হাঁস-মুরগির খামার এবং নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। উইমেন বিজনেস সেন্টারের পাশাপাশি জাতিসংঘের নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে কোকা-কোলা সিস্টেম বাংলাদেশ এবং
দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন।
এ লক্ষ্যে ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ ও ওয়ার্ল্ড উইদাউট ওয়েস্ট (বর্জ্যমুক্ত পৃথিবী)-এর মতো কোম্পানিটির বৈশ্বিক উদ্যোগের দেশীয় সংস্করণগুলো দেশজুড়ে সমাজ উন্নয়নে কাজ করছে।