জন্মের পরপর শিশুদের হিয়ারিং স্ক্রিনিং টেস্ট শুরু করা জরুরি: ডা: নূরুল হুদা নাঈম
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
সিলেট নগরীর কাজলশাহস্থ এনজেএল ইএনটি হাসপাতালের উদ্যোগে বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে সোমবার (৬ মার্চ) বিকেল ৪টায় আয়োজন করা হয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় ও ফ্রি হিয়ারিং এইড বিতরণ অনুষ্ঠান। এনজেএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এডভোকেট রেজাউল করিম তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেশবরেণ্য নাক, কান, গলা ও হেড-নেক সার্জন ডা. নূরুল হুদা নাঈম। ‘কানের ও শোনার যত্ন সবার জন্য” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হয় এবারের শ্রবণ দিবস।
ডা. নাঈম তাঁর প্রবন্ধে কানের ও শোনার যত্ন কিভাবে নিতে হবে সে ব্যাপারে অত্যন্ত সুন্দর দিক নির্দেশনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা জ্ঞাত বা অজ্ঞাত সারেই নিজেদের কানের অনেক ক্ষতি করে চলেছি। একটু সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা বধিরতা প্রতিরোধ করতে পারি। তিনি বলেন, শিশু মায়ের গর্ভে থাকাকালীন যেনো কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য গর্ভবতী মায়েদের ঔষধ সেবনে অবলম্বন করতে হবে বিশেষ সতর্কতা অর্থাৎ অটোটক্সিক ড্রাগ পরিহার করতে হবে। জন্মের পরপরই শিশুদের হিয়ারিং স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়ে নিতে হবে যা উন্নত দেশে প্রচলিত রয়েছে। বাংলাদেশেও প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সিস্টেমে এই নিউবর্ন ইউনিভার্সাল হিয়ারিং স্ক্রিনিং চালু করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান তিনি। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যা নির্ণয়ের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। বড়দের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা শব্দ দূষন এবং এর মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে আমরা বধিরতার দিকে ধাবিত হচ্ছি।
প্রথমত: পারিপার্শ্বিক শব্দ দূষণ আর সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে সেলফ শব্দ দূষণ অর্থাৎ ইয়ারফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার। আমাদের যুব ও কিশোর সমাজ এই শব্দ দূষণের কবলে পড়ে অনেকেই শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন। সুতরাং ইয়ার ফোনে হাই ভলিউমে না শোনার আহবান জানান তিনি। ডা. নাঈম আরো বলেন, আমাদের শোনার জন্য শব্দের মাত্রা ৬০-৭০ ডেসিবেলের নিচে হলে খুব ভালো ৮৫-৯০ ডেসিবেলের উপরে গেলে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুরু করে এবং ১২০ ডেসিবেলের উপরের শব্দ তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের কানের ক্ষতি করে ফেলে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা ও সচেতনতাই যথেষ্ট। এছাড়া অযথা কান খোঁচাখুচি করা আঘাত না দেয়া, মুরগির পালক, কুচির ডাটি ও ম্যাচের কাঠি, কলম, চুলের ক্লিপ ইত্যাদির ব্যবহার থেকে বিরত থাকার আহবান জানান তিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪১ শতাংশ রিকশা চালক এবং ৩১ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন মাত্রার বধিরতায় ভুগছেন। এসব ক্ষেত্রে হিয়ারিং এইড সমাধান হতে পারে। বয়সজনিত কারণেও কম শোনা হতে পারে সেক্ষেত্রেও হিয়ারিং এইড এর মাধ্যমে শোনার ব্যবস্থা করা যায়। জন্মবধির শিশুদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে যুগান্তকারী এক উদ্যোগ কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম। ডা. নূরুল হুদা নাঈম এ কার্যক্রমের ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মে-২২ থেকে শুরু হওয়া অপারেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৮ জন রোগীকে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারী ওসমানী মেডিকেলে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
এরপর দরিদ্র রোগীদের মধ্যে ফ্রি হিয়ারিং এইড বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেটী আঞ্চলিক নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা, গ্রীণবাংলার চেয়ারম্যান বেলাল আহমদ মুরাদ। তিনি বলেন, মানবিক কার্যাবলীর মাধ্যমে ডা: নূরুল হুদা নাঈম ও তাঁর এনজেএল ফাউন্ডেশন দেশব্যাপী সুনাম কুড়িয়েছেন। আমি এই কার্যক্রমের সাফল্য কামনা করি।
অভিনেতা ও আইনজীবী আব্দুল মুকিত অপি বলেন, প্রতিটি ভালো কাজের তিলকে তাল এবং মন্দ কাজের তালকে তিল হিসেবে দেখলেই জীবন সুন্দর হয়। এনজেএল ফাউন্ডেশন সবসময় ভালো কাজের এক পাদপ্রদীপ।
এনজেএল ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব এডভোকেট রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও ম্যানেজার কিংকন রায়ের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ডা: মাসুদ রানা, ডা: হান্নান। উপস্থিত ছিলেন ভয়েস অব সিলেটের কর্ণধার মঈন উদ্দিন মনজু,সানজিদা সরকার, আইটি অফিসার হাসান রুমেল, রাসেল আহমদ, জিল্লুর রহমান, মো: সিতাব আহমদ, লায়লা আক্তার, ডলি দাস, উর্মি নূর, নুসরাত জাহান এবং বিভিন্ন সময়ে ফাউন্ডেশন কর্তৃক ফ্রি চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্ত রোগীরা।