অবিলম্বে পূর্ণ বকেয়া মজুরি প্রদানসহ বাজাদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরির দাবি চা-শ্রমিক সংঘের
গত বছরের আগষ্ট মাসে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকদের খেয়ে না খেয়ে জানবাজী রেখে দীর্ঘ ১৯ দিনের লাগাতার কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ, রাজপথ-রেলপথ অবরোধের মতো কঠিন সংগ্রামের ফলশ্রæতিতে দৈনিক ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে মজুরি ১৭০ টাকা কার্যকর করা হয়। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২০ মাস পর ২০২১-২০২২ মেয়াদের জন্য ১৭০ টাকা মজুরি গত বছরের ২৯ আগষ্ট থেকে কার্যকর করা হলেও বকেয়া মজুরির এরিয়ার প্রদান করা হচ্ছিল না। চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের প্রথা অনুযায়ী বিগত ৬০৪ দিনের জন্য দৈনিক ৫০ টাকা হিসেবে ৩০ হাজার ২০০ টাকা একজন চা-শ্রমিকের বকেয়া এরিয়ার পাওয়ার কথা ছিল।
বকেয়া এরিয়ার জনপ্রতি অন্তত ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করার জন্য চা-শ্রমিকরা দীর্ঘদিন যাবত মালিক ও সরকারের নিকট দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু গত ১ মার্চ শ্রম অধিদপ্তরের এক পরিপত্রে মাধ্যমে জানানো হয় ঢাকায় শ্রমঅধিদপ্তরে শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সমঝোতায় বকেয়া এরিয়ার থোক বরাদ্দ হিসেবে জনপ্রতি ১১ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে।
মালিক, সরকার ও দালাল নেতাদের এই প্রহসনমূলক সমঝোতাকে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির নেতা প্রত্যাখান করেছেন। ৩ মার্চ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চা-শ্রমিক সংঘের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী ও যুগ্ম-আহবায়ক শ্যামল অলমিক মালিক, সরকার ও দালাল নেতাদের এই সমঝোতাকে চা-শ্রমিকদের সাথে বিশ্বাসঘতকতা আখ্যায়িত বলেন দ্রব্য লাগামহীন ঊর্দ্ধগতির এই সময়ে যখন প্রয়োজন ছিল পূর্ণ বকেয়া মজুরি প্রদানসহ বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণভাবে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য মজুরি ঘোষণা করা; সেখানে মালিকদের স্বার্থরক্ষা করে মাত্র ১১ হাজার টাকা প্রদান করার কথা বলা হচ্ছে।
আবার এই ১১ হাজার টাকাও প্রদান করা হবে তিন কিস্তিতে; ১ম কিস্তি ৭ মার্চের মধ্যে প্রদান করার কথা বলা হলেও বাকি দুই কিস্তি কবে প্রদান করা হবে তার যেমন কোন নিশ্চয়তা নেই তেমনি তিন কিস্তি কত টাকা করে প্রদান করা হবে তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। নেতৃবৃন্দ বলেন গত আগষ্টে চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলাকালে ডিসি, টিএনও, শ্রমঅধিদপ্তরের কর্মকর্তা বাগানে বাগানে ছোটাছুটি করার পাশাপাশি সরকারের এমপি, মন্ত্রী এমন কি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত মায়াকান্না দেখালেও কর্মবিরতির পর কেন দীর্ঘ ৬ মাসেও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি তার যেমন খোঁজ নেননি, তেমননি খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না এই দূর্মূল্যের বাজারে দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে কি করে একজন চা-শ্রমিক ৬/৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণ চালাবে। অথচ এই কর্মকর্তারাই কর্মবিরতিকালীন সময়ে মালিকদের ভাষ্য মতে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার তথ্যে বিচলিত হয়ে দিবানিশী ভুলে কর্মরিবতি ভাঙ্গাতে গভীর রাতেও তৎপর ছিলেন।
প্রায় ১ লাখ শ্রমিকের জনপ্রতি বকেয়া মজুরি ৩০ হাজার টাকা হিসেবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকায় গত ৬ মাসে মালিকরা মুনাফা করলেও শ্রমিকদের প্রফিডেন্ট ফান্ডের মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়। এমন কি ২০২১ সালে জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের আগষ্ট পর্যন্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডেরও জনপ্রতি প্রায় ২৩০০ টাকা প্রদানের দায় থেকেও মালিকদের মুক্তি দেওয়া হয়। এভাবে মালিকদের স্বার্থরক্ষায় মালিক, সরকার ও দালাল নেতারা সমন্বিত হয়ে সর্বাত্মক ভ‚মিকা রাখলেও ১৭০ টাকা মজুরি মেয়াদ ২০২২ সালে উত্তীর্ণ হওয়ার ২ মাস অতিক্রান্ত হলেও কবে নতুন মজুরি কার্যকর হবে সে ব্যাপারে কেউ ‘টু’ শব্দটি পর্যন্ত করছে না। চা-শ্রমিকরা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন রাষ্ট্র, সরকার আর মালিক সব সময়ই একপক্ষের।
চা-শ্রমিক সংঘের নেতারা মালিক, সরকার ও দালাল নেতাদের শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন পূর্ণ বকেয়া মজুরি প্রদানসহ বাজাদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য মজুরি ঘোষণা, বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধি ২০১৫ অনুযায়ী উৎসব বোনাস প্রদান, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদান এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সকল শ্রমিককে স্থায়ী করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপোসকামিতা ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে সৎ, সংগ্রামী, আপোসহীন, শ্রেণি সচেতন নেতৃত্বে সংগঠন ও সংগ্রাম গড়ে তুলে দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে।
=বিজ্ঞপ্তি