নবীগঞ্জে ৪দিনের উত্তেজনার পর ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়েছে কয়েক হাজার মানুষ

উত্তম কুমার পাল হিমেল নবীগঞ্জ থেকে::

 

নবীগঞ্জ শহরে কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় একাধিক সংঘর্ষের জের ধরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী হাসপাতাল ও যানবাহনে ভাঙচুর- লুটপাট এবং ট্রাক, বাস , সিএনজি, ভাংচুর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছিল বিগত ৪ দিন যাবৎ।
গতকাল ৭ই জুলাই  সোমবার দুপুরে ফের  সংঘর্ষে দুপক্ষের ২ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে পৌরসভার তিমিরপুর গ্রামের এম্বুলেন্স চালক মো ফারুক মিয়া ও আনমনু গ্রামের আওয়াল মিয়ার পুত্র লিমন মিয়া।  এছাড়া  ভাঙচুর ও লুটপাটে অন্তত কোটি টাকার উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন  শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
এর জের ধরে ৭ জুলাই সোমবার সকালে আনমনু ও  তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পুর্ব ঘোষনা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পুর্ব প্রস্তুতিমুলক মিটিং করেন।
এর পরে বিকাল ৩ ঘটিকার পূর্ব ঘোষনা দিয়ে উভয় গ্রামের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষটি এক পর্যায়ে নবীগঞ্জ শহরে আশপাশের আনমনা, নোয়াপাড়া, রাজাবাজারের এক পক্ষে, অপর পক্ষে পূর্ব তিমির পুর, পশ্চিম তিমিরপুর ও চরগাও গ্রামের নারী পুরুষ দুটি পক্ষ হয়ে কয়েক হাজার মানুষ সংঘর্ষে জড়ান।
এতে সংঘর্ষ চলাকালে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে উভয় পক্ষে শতাধিক নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। কেউ নিহত হয়েছেন কিনা জানা যায়নি।
শহরের মধ্যে বেশকিছু  দোকান পাট ভাংচুর ও জে,কে স্কুল রোডের সুরঞ্জন রায়ের দোকানের নগদ ১ লক্ষ টাকা ও  ৪০ লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ,রিংকু রায়ের দোকান,মাছবাজার সংলগ্ন বদর মাষ্টারের দোকান ও কানু রায়ের দোকানে লুটপাট করা  হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হয়। বিশেষ করে ইউনাইডেট হসপিটাল ভাংচুর , মাছ বাজার, হোটেল হাসেমবাগে ভাংচুর লুটপাট হয়েছে।
এছাড়া শহরের মধ‍্য বাজার, হাসপাতাল রোডের প্রতিটি মার্কেট ও দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। এক অরাজকতা শহরের মধ্যে চলে প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী চলছে, পরে  যৌথবাহিনী লোকজন সংঘর্ষ থামানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ।
এদিকে শহরজুড়ে এক ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। গুজব ছড়িয়ে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে উসকে দিয়ে সাম্প্রদায়িক ধাঙ্গা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে একটি বিশেষ মহল।
কারন আনমনু গ্রাম হচ্ছে মৎস্যজীবি আর তিমিরপুর গ্রাম হচ্ছে অমৎস‍্যজীবী।
গত শুক্রবার রাতের সংঘাতের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান শহরের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করলেও পরদিন শনিবার সকাল থেকে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
আনমুনু গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নবীগঞ্জ শহর ও আনমনু পয়েন্টে জড়ো হতে থাকলে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এর জের ধরে শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। রবিবার সকালে ও রাতে সংঘর্ষ ও চোরাগুপ্তা হামলা হয়।
এর জের ধরে সোমবার সকালে উভয় গ্রামের লোকজন পুর্ব প্রস্তুতি সভা করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
গত শনিবার (৫ই জুলাই) সকালে নবীগঞ্জ শহরে উপজেলার ৬নং কুর্শি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার এক নিরীহ গাড়ি চালকের ওপর আনমনু গ্রামের লোকজন নৃশংস হামলা চালায়।
চালককে আটকে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এমনকি তার গলা বরাবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করা হয়।
ভাগ্যক্রমে চালক সরে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। এসময় গাড়ির চাবি, গাড়ির কাগজ এবং গাড়িতে থাকা দুটি ফোন ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে জানান শ্রমিকরা। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শহরের সংঘর্ষের সময় সুযোগ নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শামীম আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজারে যখন আতঙ্কে নিরবতা নেমে আসে এবং কেউ থাকে না, তখন এই চক্রটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা ও লুটপাট চালায়।
গত ৪ দিনে বাজারের অন্তত ৫০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটে। ব্যাটারিচালিত মিশুক ভাঙচুর করে ব্যাটারি চুরি করা হয়েছে।
এছাড়া আরো কয়েকটি মিশুক ভাংচুর ও মোটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন।
সংঘাত নিরসনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মোঃ শাহজাহান আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, সাবেক পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী প্রমুখ সালিশের উদ্যোগ নিয়েছেন কিন্তু শালিস না মেনে দু পক্ষই সংঘর্ষে যায়।। থমথমে পরিবেশ এখনও বিরাজ করছে।

 

উল্লেখ্য গত শুক্রবার বার রাতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশাহিদ আলী আশা ও পুর্ব তিমিরপুর গ্রামের খরছু তালুকদারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, “আমরা বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি।
সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে পুরো বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।” শহরে শান্তি শৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।