সুরমা টাইমসে সংবাদ প্রকাশ: অবশেষে গ্রেফতার ‘শুটার হান্নান’

নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ

সুরমা টাইমস পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে গত ১২ই নভেম্বর ‘সিলেটে দিন দুপুরে টিলা কাটার মহা উৎসব-নেপথ্যে যুবলীগ নেতা হান্নান ও রতন মনি’ 

এবং গত ১৯শে নভেম্বর ‘সিলেটের শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ক্যাডার হান্নান’ওরফে শুটার হান্নান এখনও অধরা’ 

শিরোনামে শুটার হান্নানের বিরুদ্ধে দুটি সংবাদ প্রকাশ হয়,এতে টনক নড়ে প্রশাসনের, এরপরই শুটার আব্দুল হান্নান গাঁ ঢাকা দেয় ।

শেষ পর্যন্ত আত্মগোপনে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি শুটার আব্দুল হান্নানের। গতকাল শনিবার (২৬শে এপ্রিল) শাহপরান থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ‘ক্যাডার হান্নান’ওরফে শুটার হান্নান।

গতকাল শনিবার (২৬শে এপ্রিল) সন্ধ্যায় মেজরটিলার ফাল্গুনী এলাকায় তার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আব্দুল হান্নান আব্দুল কাদিরের ছেলে। হান্নান টিলাগড় কেন্দ্রিক রঞ্জিত গ্রুপের শুটার হিসেবে পরিচিত।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, হান্নানের বিরুদ্ধে জুলাই আগষ্টে ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় মামলা রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গতকাল শনিবার তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

হান্নানকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহপরান থানার ওসি তদন্ত রাসুল সামদানি আজাদ। তিনি বলেন, হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

উল্ল্যেখ্য সিলেটের এমসি কলেজে ২০১৩ সালে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া দেন সেই আবদুল হান্নান ওরফে ‘ক্যাডার হান্নান’।

এর পর ২০১৬ সালের ২রা জানুয়ারি শনিবার রাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নগরীর মেজরটিলার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গাড়ি ভাঙচুর করেন।

এ ঘটনায় শাহপরান মামলা হয়। শাহ্‌পরাণ থানার তালিকাভুক্ত আসামি শুটার হান্নান দীর্ঘদিন গোপনে চলাফেরা করেন।

শুটার হান্নানের বাড়ি মেজরটিলার ফাল্গুনি এলাকায়। এলাকায় সে অস্ত্রবাজ ও ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে মেজরটিলা বাজারে একটি অপরাধী গ্রুপ রয়েছে। জমি দখল, খাস জমি ও টিলা কর্তন,দোকান দখল কিংবা আধিপত্য বিস্তারে তাদের ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

মেজরটিলা এলাকা শাসন করতেন সিলেট জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। সরকারের শেষদিকে এসে জাহাঙ্গীরের কাছাকাছি ভিড়ে শুটার হান্নান ।

মূলত শেল্টার নিতে সে দলবল নিয়ে জাহাঙ্গীরের বলয়ে ঢুকে। এর আগে এলাকায় জমি দখল নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ ছিল।

এসব বিরোধকে কেন্দ্র করে সব সময় মেজরটিলা এলাকায় মহড়া দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করতো। শুধু তাই নয়, এলাকায় ছিনতাই, মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে সে পরিচিত শুটার হান্নান। কেউ ভূমি দখলে নিতে হলে তার গ্রুপকে ব্যবহার করে।

তার নিয়ন্ত্রণে থাকা অপরাধীরা মেজরটিলা,ফালগুনি,নুরপুর, ইসলামপুর, মোহাম্মদ পুর এলাকায় মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে । একই সঙ্গে বাসা দখল করে অসামাজিক কাজেও নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। এলাকাবাসী জানিয়েছেন ভয়ঙ্কর অপরাধী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে পারে না।

যারাই প্রতিবাদ করেছেন- হামলার শিকার হয়েছেন। এলাকার লোকজন জানান- মেজরটিলার পাশেই হচ্ছে সিলেট এমসি ও সরকারি কলেজ। এর পাশে আলোচিত টিলাগড় পয়েন্ট।

ফলে এ দু’টি কলেজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাতা এবং টিলাগড় দখলে রাখতে এর আগে নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে লড়াইয়ে অস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া ছিল শুটার হান্নান ।

এমসি কলেজে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনায়ও এসেছিল তার নাম। তখন রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টার থাকায় তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ওই সময় শাহ্‌পরাণ থানা পুলিশের মাঠ পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। ফলে শুটার হান্নান সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।