এরদোয়ানের হুমকি অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর কারাবাসের প্রতিবাদে তুরস্কজুড়ে টানা ছয় রাত ধরে চলা বিক্ষোভ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

 

প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের এই ‘অভিনয়’ শিগগিরই শেষ হবে বলে মন্তব্যকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

 

গত সপ্তাহে ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে আটকের পর থেকে দেশটিতে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

 

বিরোধী দল, মানবাধিকার সংগঠন ও ইউরোপীয় নেতারা এই আটককে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও গণতন্ত্রবিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় লাখ লাখ মানুষ ইস্তাম্বুলের সরাচানে পার্ক, আঙ্কারার কুজুলায় স্কয়ারসহ বিভিন্ন শহরের সড়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছেন।

‘এরদোয়ান পদত্যাগ করো’ স্লোগান দিয়ে তারা শুধু মেয়রের মুক্তিই নয়, ন্যায়বিচার ও মৌলিক অধিকারের দাবি জানাচ্ছেন।

যদিও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবুও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। রাত গড়ালে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করায় এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

সরাচানে পার্কের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, সরকার ও পুলিশের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে এটি আরও দীর্ঘ সময় চলতে পারে। আমি যতটা সম্ভব আসব… কারণ সরকার আমাদের কোনও ন্যায়বিচার দেয়নি।

তিনি আরও বলেছেন, প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম, মনে হয়েছিল আমাদের আটক করা হতে পারে। কিন্তু এখন আর ভয় পাই না।

মূল বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) মঙ্গলবার সরাচানে পার্কে তাদের শেষ সমাবেশের ঘোষণা দিলেও অনেক বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিনের বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।

 

এরদোয়ানের জন্য চ্যালেঞ্জ:—-

 

এই চলমান বিক্ষোভ এরদোয়ানের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যিনি একে ‘সড়ক সন্ত্রাস’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

২০১৩ সালে গেজি পার্ক বিক্ষোভ দমন করার পর থেকে তিনি রাজপথের কোনও সমালোচনা সহ্য করেননি।

আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এরদোয়ান সিএইচপির বিরুদ্ধে নাগরিকদের উসকে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, তাদের এই ‘অভিনয়’ শেষ হলে তারা দেশের বিরুদ্ধে ‘অশুভ’ কাজের জন্য লজ্জিত হবে।

সরকার রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, বিচার বিভাগ স্বাধীন। তবে সম্প্রতি সিএইচপি বারবার মানুষকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছে, যা কারাবন্দি মেয়র ইমামোগলুর আহ্বানেরই প্রতিধ্বনি।

 

সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল সরাচানে পার্কে ট্রাকের উপর দাঁড়িয়ে প্রতিদিন বক্তৃতা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেছেন, মঙ্গলবারের সমাবেশ হবে একটি মহান সমাপ্তি এবং নতুন সমাবেশের বড় সূচনা।

 

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা গেছে। অনেকেই সোমবার থেকে ক্লাস বর্জন করছেন। মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একদিনের ধর্মঘট পালন করেছেন।

 

ইস্তাম্বুলের ১৯শতকের গালাতা ব্রিজে সোমবার সন্ধ্যায় একটি অবস্থান প্রতিবাদ সাময়িকভাবে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়।

 

ইউরোপীয় কাউন্সিলের মানবাধিকার কমিশনার মাইকেল ও’ফ্লাহার্টি তুর্কি কর্তৃপক্ষের প্রতি আটককৃত বিক্ষোভকারীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

এদিকে, কারাগারে থাকা ইমামোগলুকে মঙ্গলবার সিএইচপি নেতারা দেখতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তার বিচার-পূর্ব মুক্তি ও রাষ্ট্রীয় টিভিতে বিচার সরাসরি সম্প্রচারের দাবি জানানো হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

 

বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, আমরা ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য এখানে এসেছি। আমরা বিশ্বাস করি না যে আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি।

 

দেশজুড়ে এই বিক্ষোভ কতদিন চলবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে বিক্ষোভকারীদের দৃঢ়তায় এরদোয়ান সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।