সুরমা টাইমস ডেস্ক :
ছাত্র-জনতার জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যূত শেখ হাসিনার একান্ত সহচর ও মুজিবাদর্শের অন্ধ সৈনিক এবং মানবাধিকার কর্মিদের কটুক্তিকারী লন্ডনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে প্রত্যাহারে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতি সংগঠন।
তারা অভিলম্বে চাটুকার এই নারীকে গুরুত্বপূর্ন উক্ত পদ থেকে প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তা কার্যকরের হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। তাছাড়া হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন স্ট্যান্ড ফর হিউম্যান রাইটস।
তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের জোর দাবি জানিয়ে তারা।
গত বুধবার (২৬শে ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ইষ্টলন্ডনের একটি হোটলের হলরুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ মিনহাজুল আবেদীন রাজা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট সহচর ও মুজিবপ্রেমী আবিদাকে যুক্তরাজ্যে হাইকমিশনার করা নিয়ে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্টা দেখা দিয়েছে।
উগ্রপন্থী ও বিতর্কিত আবিদা ইসলামকে হাইকমিশনার নিয়োগ করায় তারা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। যে মূহুর্তে দেশ ধুয়েমুছে সাফ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ সে সময়ে একজন দুর্নীতিবাজ ও দলকানা মহিলাকে গুরুত্বপূর্ণ হাইকমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়া স্বজনপ্রীতির সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
সাধারণ মানুষ স্বৈরাচার হাসিনার দোসর ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের অপসারণে জীবনপণ লড়াই করে যাচ্ছে। সেই মুহুর্তে বর্তমান সরকার কুখ্যাত এই নারীকে যুক্তরাজ্যের মত উন্নত দেশে রাষ্ট্রদূত করে পুরষ্কৃত করেছেন। অনতিবিলম্বে বিতর্কিত আবিদা ইসলামকে হাইকমিশনার পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জোর দাবি জানান মানবাধিকার কর্মীরা।
এই ইস্যুতে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিরা নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী দলকে সমর্থন করার মাধ্যমে আবিদা ইসলাম রাষ্ট্রের শপথ ভঙ্গ করেছেন। তৎকালীন সরকারের সময়ে তিনি হাইকমিশনকে দলীয়করণ করেছিলেন।
হাসিনার পক্ষে প্রটোকল ভেঙে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন। তার এহেন কর্মকান্ডে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রচুর টাকা খরচ করে মুজিবের মুর্তি স্থাপন করেন।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে বিতর্কিত নানা কর্মকান্ড ও মুজিব বন্দনা করে হাসিনাকে খুশি করাই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় কোরিয়া ও মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূত থাকাবস্থায় তোষামোদকারী আবিদা লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশ করে মুজিবের আদর্শ প্রচার করেছেন। সেই টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে অফিস স্টাফদের সাথেও বাজে আচরণ করেছিলেন আবিদা সুলতানা।
তার খারপা আচরণে অনেকে চাকুরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। হঠাৎ করে তৎকালীন সময়ে তার বিরূপ আচরণে বিষ্মিত হয়ে যান কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এর পেছনে কারণ কি তা এখনো জানতে তারা উদগ্রীব। আমাদের সন্দেহ তিনি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্ট।
সেখানকার সংস্থা ও কূটনীতিকদের সাথে তার গভীর সম্পর্ক থাকতে পারে। তার দ্বারা পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করা এবং বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ও লন্ডনে অবস্থান করা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিরুদ্ধে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, সম্প্রতি আমারদেশ পত্রিকায় ‘মুজিবপ্রেমি নতুন হাইকমিশনার নিয়ে ক্ষোভ ব্রিটেনে’ শিরোনামে এবং দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ‘লন্ডনে রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন হাসিনাপন্থি আবিদা ইসলাম’ সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে উল্লেখ করা হয় ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে শেখ হাাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আবিদা ইসলামকে ব্রিটেনের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার মতো একজন শেখ মুজিবপ্রেমি বিতর্কিত ব্যক্তিকে কেন ব্রিটেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তার নিয়োগের খবর পেয়ে প্রবাসী অধিকার রক্ষা পরিষদসহ ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের অনেক সামাজিক সংগঠন সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে ই-মেইলও করেছিল। কিন্তু এসববে কোনও কাজ হয়নি। আবিদা ইসলামকেই সরকার ব্রিটেনে পাঠিয়েছেন।
কোরিয়া ও মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন নিজেকে শেখ মুজিব প্রচারণায় নিয়োজিত রেখেছিলেন আবিদা ইসলাম। কোরিয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী সে দেশের ভাষায় প্রকাশ করেছেন তিনি।
আরো একধাপ এগিয়েছিলেন মেক্সিকোতে। মেক্সিকোতে অসমাপ্ত আত্মজীবনী স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন মেক্সিকোতে। দেশটির মিউজিয়ামে স্থাপনের নিরšত্মর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মেক্সিকো সরকারের অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যšত্ম নিজের বাসার সামনেই স্থাপন করেছিলেন সেই মূর্তি।
মোট কথা তিনি দেশের জন্য নয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার এজেন্ডা বা¯ত্মবায়ান ও শেখ মুজিবকে তুলে ধরতে ছিলেন ব্য¯ত্ম।
স্বজনপ্রীতি, তোষামোদ আর আওয়ামী বলয়ের লোকজনদের নিয়েই তিনি ছিলেন তৎপর। বিরোধী মতাদর্শের লোকজনদের তিনি পাত্তাই দেননি। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে জানতে পারি আবিদা ইসলামের বন্ধু ’ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্ট’ হিসেবে পরিচিত, ব্রাসেলসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ তাকে লন্ডনের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টিংয়ে সহযোগিতা করেন।
সালেহ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন। তাছাড়া মাহবুব হাসান সালেহ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে কলকাতায় কাজের সূত্রে সখ্যতা রয়েছিল এবং সালেহ মূলত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে রাজি করিয়ে তার বান্ধবী মুজিবভক্ত আবিদাকে, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে হাইকমিশনার হিসেবে পোস্টিং নিশ্চিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মিনহাজুল আবেদিন রাজা বলেন, আপনারা জানেন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে গণঅভ্যুাত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈারাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারাতে পালিয়ে যান।
শুধু শেখ হাসিনা নন তার কেবিটেনের সাড়ে ৩শ’এমপি-মন্ত্রী এমনকি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ইমাম পর্যšত্ম পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এরকম ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছেন, ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে আহত, পঙ্গু ও অন্ধ করে দিয়েছে।
এই গণ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের দল, মত, নির্বিশেষে সকল মানুষের ম্যান্ডেন্ট নিয়ে বর্তমানে অšত্মবর্তীকালীন সরকার হিসেবে বিশ্বখ্যাত ড. ইউনুস দেশ শাসন করছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমান অšত্মবর্তাকালীন সরকারের ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পরও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের ভেতরে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো বিভিন্ন পদে বহাল রয়েছেন। তারা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে পুনরায় বাংলাদেশে ফেরাতে এবং বর্তমান অšত্মবর্তীকাল সরকারকে বিপদে ফেলতে নানা রকম অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার মধ্যে একজন হলেন বর্তমান যুক্তরাজ্যে নিয়োগ পাওয়া স্বৈরাচারী হাসিনার অন্যতম সহযোগী রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। এই স্বৈরাচারের দোসর আবিদা ইসলাম, ড. ইউনুসের সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকতে পারেন।
আবিদার মতো স্বৈরাচারের একজন সহযোগী ও শেখ মুজিবের আদর্শ প্রচারকারী ব্যক্তিকে এমন গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছি। আমরা অšত্মবর্তকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. ইউনুসের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তিনি যেন স্বৈরাচারের দোসর মুজিবভক্ত আবিদা ইসলামের বিরুদ্ধে তদšত্ম সাপেক্ষে, অবিলম্বে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারে পদ থেকে প্রত্যাহার করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করিয়ে উপযুক্ত শা¯িত্ম নিশ্চিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ছদরুল ইসলাম লোকমান, সহসভাপতি মো. হাসনাত আল হাবিব, সহসভাপতি বেলাল খান, সহসভাপতি শেরওয়ান আলী, মো. আজিজুর রহমান, সহ সাধারণ উজ্জল আলম চৌধুরী, ফজলে রাব্বি রিমন, মো. মাহি, মো. শাওন, ইফতেখার হোসেন চৌধুরী সাকী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক, সিনিয়র সদস্য রুমেল আলী, অর্থ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম,
সহ অর্থ সম্পাদক সৈয়দ জুয়েল, সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, সহকারী সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনা ইসলাম তানিয়া, সদস্য সৈয়দ আশরাফুল আলম পিন্টু, জাকারিয়া আলী,
রেজাউল করিম রাব্বি, মো. ইউসুফ মিয়া, আশরাফুল আলম, আল আমিন মিয়া, মো. ইমন আলী,
মো. মনির হুসেন, রুমন আহমেদ, নাহিদ চৌধুরী, আমিন আকবর, জুনায়েদ আহমদ, আব্দুল আজীম, আরিফ হোসেন, আশরাফুল আলম শামীম, হোসাইন আহমদ, শাহ্ রুমন আহমদ, মো. ফজল আহমদ,
মো. রফিক মিয়া,আল আমিন মিয়া, কাইয়ুম লায়েক, নাজমুল আহমদ, মো. আব্দুল হক, আমিন কবির সোহাগ, লায়েক আহমদ, সাইফুর রহমান, আরিফ হোসেন প্রমুখ।