সুরমা টাইমস ডেস্ক :
দেশের অর্থনীতিতে এখনও সংকট কাটেনি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণ এখন চাপ বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ যখন বাড়ছে, একই সময়ে চাপ বাড়াচ্ছে আগে নেওয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রকাশিত জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইআরডির (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২৪১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৮৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এ সাত মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের যে পরিমাণ প্রতিশ্রুতি আসার কথা ছিল সে পরিমাণ প্রতিশ্রুতি তো আসেইনি, বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি শেষে উন্নয়ন সহযোগীরা বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাত্র ২৩৫ কোটি ডলারের।
গত বছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৭১৭ কোটি ২১ লাখ ডলারের। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার বা ৫৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে সাত মাসেই প্রাক্কলিত ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রমেই বড় হয়েছে সরকারের ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে উঠে এসেছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ বাবদ সবচেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। এমনকি এ ব্যয় এবার রাজস্ব আহরণকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এ সাত মাসে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় বিদেশি ঋণ নির্ভর প্রকল্পগুলোতে অর্থছাড়ও কমে গেছে।
এ সময়ে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৩৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় কমেছে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এ উন্নয়ন সহযোগীটি অর্থছাড় করেছে ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক অর্থছাড় করেছে ৮৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি।
তবে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। ৯৪ কোটি ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে সংস্থাটির কাছ থেকে। এ সংস্থাটিই এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এডিবি।
ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধসহ সার্বিক পরিচালন ব্যয় মেটাতে সরকারকে রাজস্ব আহরণের ওপর নির্ভর করতে হয়। অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া অনুদান ও ঋণের অর্থে বাস্তবায়িত হয় উন্নয়ন ব্যয়ের বড় অংশ।
তবে প্রতি বছরই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে রাজস্ব আহরণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। যদিও কখনই বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে না সরকার।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত আলোচ্য অর্থবছরে ৪ লাখ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫ লাখ ৪১ হাজার ২ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে।