সুরমা টাইমস ডেস্ক :
মানিকগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে সনদ দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়।
এরই মধ্যে স্থানীয় একটি ইটভাটার মালিকের সঙ্গে তার ঘুষ গ্রহণ ও চাপে পড়ে তা ফেরত দেওয়ার কথোপকথন সেই অডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, জেলার সিংগাইর উপজেলার এক ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক।
চাপে পড়ে এক লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। বাকি এক লাখ টাকা ফেরত চাইছেন ভুক্তভোগী।
অডিওতে আব্দুর রাজ্জাককে বলতে শোনা যায়, টাকা দুই লাখের কম ছিল। তিন কিংবা চার হাজার। আমার নোট আছে।
ইটভাটার মালিক বলেন, জাহির আমাকে বলে আব্দুর রাজ্জাক ভাইতো কাজ করে দিতে পারল না। তা যেহেতু করে দিতে পারেনি, তাহলে আমি অন্য মানুষকে ধরি।
আপনি যে টাকাটা দিছেন ওটা আপনি আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়ের কাছ থেকে নেন। আর জহির যেটা আপনাকে দিয়েছে ওই টাকা সে নেয় বা না নেয় সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শকের ঘুষ লেনদেনের অডিও ফাঁস:–
‘১৭ বছর দুর্নীতিবাজের অভাব ছিল না, এখন চাঁদাবাজদের অভাব নেই’
তিনি বলেন, আমাকে তো দিয়েছেন এক লাখ। তাহলে ওইখানে রইছে আরও ৯৭ হাজার।
আব্দুর রাজ্জাককে এ সময় বলতে শোনা যায়, কেমনে ৯৭ হাজার। তখন অপরপ্রান্ত থেকে বলেন, ১ লাখ ৯৭ হাজার। জহির দিছে ৪০, আমি দিছি দেড় (এক লাখ পঞ্চাশ হাজার)।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি রোববার পযর্ন্ত ঢাকার বাইরে আছি। এরপর টাকা ফেরত নিয়ে যাইতে বইলেন।
ভুক্তভোগীকে বলতে শোনা যায়, এখানে যদি ভাই আপনার গাফিলতিটা না থাকত তাহলে আমি কাগজটা পেয়ে যেতাম। পরিবেশ ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে আমি দরখাস্ত করলাম।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উল্টাপাল্টা কথা বইলেন না। কারও গাফিলতি নেই। গাফিলতি ঢাকা অঞ্চলের ডাইরেক্টরের। নবায়ন দিচ্ছে না। বাতিল করে দিছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। সেবা দেওয়ার পরিবর্তে তারা ঘুষের বিনিময়ে ইটভাটা ও শিল্পকারখানার পরিবেশ সনদ দিয়ে থাকে।
জেলার সিংগাইর উপজেলার ইটভাটা মালিকরা পরিবেশ সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগে নবায়নের আবেদন করলেও তারা সনদপত্র পাচ্ছেন না।
অভিযোগ রয়েছে সনদ আটকে কর্মকর্তারা ভাটা মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করছেন।
এ বিষয়ে গত রোববার (২৬শে জানুয়ারি) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মের্সাস এএমসি ব্রিক্সসের মালিক ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলাম (শাহজাহান)।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরিবেশ সনদ দেওয়ার নামে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার পর তাকে সনদপত্র দেওয়া হচ্ছে না। ভাটা সচল রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার নামে আরও ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করছেন আব্দুর রাজ্জাক।
এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী জানান, যেহেতু এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই মনে হয় ভালো হয়। তিনি দোষী হলে শাস্তি পাবেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাকের ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।