বিশেষ প্রতিবেদক : শীতের পাতা ঝরার সঙ্গে সঙ্গে এই পৌষের হিমেল পরশে অতিক্রান্ত হতে চলেছে খ্রিষ্টীয় বছর ২০২৪। অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘটনাবহুল এক অবিস্মরণীয় বছর। বছরটি ইতিহাসের পাতায় এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। ২০২৪ সাল ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের বছর, যেখানে সিলেট জুড়ে ঘটেছে বহুল আলোচিত ও স্মরনীয় একাধিক ঘটনাবলী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান, সাংবাদিক তুরাব হত্যাকান্ড, সিমান্তজুড়ে চোরাকারবারীদের রামরাজত্ব, ভয়াবহ বন্যা, শিশু মুনতাহা হত্যা, হারিছ চৌধুরীর লাশ শনাক্তকরণ ও তার শেষ ইচ্ছা পূরণ, সিমান্তে হত্যা । এসব ঘটনা শুধু সিলেটের নয়, বরং দেশের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।
সংসদ নির্বাচন :
বছর শুরু হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে। বিএনপির দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নি। তবুও দলীয় সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কনকনে শীতে উত্তাপ ছড়ায় নির্বাচনী প্রচারণা। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ১৯টি আসনের ১৫টিতে নৌকা ও চারটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। তবে মাত্র ৭ মাসের মাথায় প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়ে সংসদ ভেঙ্গে যায়। ফলে পদ হারান সবাই। অনেকে এখন দেশের বাইরে, কেউবা আত্মগোপনে আবার কেউ কেউ রয়েছেন কারাগারে।
সীমান্তে রাম-রাজত্ব চোরা কারবারীদের :
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোরাচালান আসে সিলেট সীমান্ত দিয়ে। চলতি বছরে সীমান্তে রেকর্ড পরিমাণ চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেট সীমান্ত দিয়ে মাদক দ্রব্য , চিনি, কসমেটিক্স সহ বিভিন্ন ভারতীয় চোরাই পণ্য অবাধে নিয়ে আসলেও তা ধরা ছোয়ার বাহিরে ছিলো। এই চোরাচালানের সাথে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতার জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। জুন মাসে ট্রাক চালককে জিম্মি করে প্রায় দেড় টন চিনি লুটের অভিযোগে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর শাখা কমিটি বিলুপ্ত করে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ। অপরদিকে, ১৩ অক্টোবর ওসমানীনগরে ট্রাকভর্তি ভারতীয় চিনি ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন সিলেট মহানগর বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা।
মাঝে মধ্যে সামান্য চোরাই পণ্য জব্দ করা হলেও বিশেষ করে পাঁচ আগস্টের পর সিলেট সীমান্তে বেড়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তৎপরাতা। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে গড়ে কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে এ বছর সীমান্তে প্রায় দুইশো কোটি টাকার পণ্য জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে অন্তত ৩০ জন জনকে। ধরা পড়ছে চোরাকারবারি ও সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যাতায়াতকারীরাও। জব্দ করা বেশিরভাগ পন্যই পাঁচ আগস্টের সরকার পতনের পর।
উপজেলা নির্বাচন :
ষষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ৩৯ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশীল অনুযায়ী ৪টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয় ভোটগ্রহণ। ৪ মে থেকে ২৫ মে চতুর্থবারের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ নির্বাচন।
ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান :
বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থান। যা দেশের গন্ডি পেরিয়ে পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে মূলত আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। একসময় এ স্ফুলিঙ্গ রূপ নেয় দাবানলে। তীব্র আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে ৫ আগস্ট দুপুরে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের। সংসদ ভেঙ্গে গঠিত হয় নতুন সরকার। ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল। তালিকায় রয়েছে সিলেট বিভাগ ৩১ জন শহীদের নাম। এরমধ্যে সিলেট জেলার ১৩, হবিগঞ্জের ১৫ ও সুনামগঞ্জের ৩ জন রয়েছেন।
সিলেট জেলার শহীদরা হলেন- সানি আহমেদ, মো. নাজমুল ইসলাম, হোস উদ্দিন, মিনহাজ আহমদ, মো. পাবেল আহমদ কামরুল, জয় আহমেদ, তারেক আহমদ, তাজ উদ্দিন, আবু তাহের, মো. তুরাব, সুহেল আহমেদ, মো. মোস্তাক আহমেদ, ওয়াসিম ও মঈনুল ইসলাম।
সুনামগঞ্জ জেলার শহীদরা হলেন, মো. আয়াতউল্ল্যাহ, হৃদয় মিয়া ও সোহাগ মিয়া।
হবিগঞ্জ জেলার শহীদরা হলেন- হোসাইন মিয়া, মো. আশরাফুল আলম, মো. মোজাক্কির মিয়া, শেখ নয়ন হোসাইন, মো. তোফাজ্জল হোসাইন, মো. সাদিকুর রহমান, আকিনুর রহমান, সোহেল আকঞ্জী, আজমত আলী, শেখ মো. শফিকুল ইসলাম, মামুন আহমদ রাফসান, মুনাঈল আহমদ ইমরান, রিপন চন্দ্র শীল, করিমুল ইসলাম ও মো. আনাস মিয়া।
ছাত্র-জনতার এ আন্দোলন দেশের ইতিহাসে এক অমর অধ্যায় হয়ে থাকবে। ২০২৪ সাল শেষ হলেও, এই ঘটনার রেশ চিরকাল ধরে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
সাংবাদিক তুরাব হত্যা :
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেটের বন্দরবাজারে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি ও স্থানীয় একটি দৈনিকের নিজস্ব প্রতিবেদক সাংবাদিক এটিএম তুরাব। এসময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। একমাস পর ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ জাবুর। মামলায় সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক এডিসি সাদেক কাউসার দস্তগীর ও পুলিশ কনস্টেবল উজ্জ্বলকে আটক করা হয়। রিমান্ড শেষে তারা এখন কারাগারে আছে।
বন্যা :
২০২৪ সালের জুন থেকে জুলাই মাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিপুল পরিমাণে বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ী ঢলের কারণে বন্যা হয়। ইউনিসেফ এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ এলাকা জলাবদ্ধ ছিল। ১৮ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সিলেট শহরের ৭৫ ভাগ এলাকা, যার মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ড এবং ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রাম প্ল¬াবিত হয়। বিভাগজুড়ে বন্যার কারণে পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ হাজার ৩৪টি টিউবওয়েল এবং ৬৭ হাজার ২৫৬টি শৌচাগার সম্পূর্ণরূপে বিনিষ্ট হয়েছে।
শিশু মুনতাহা হত্যাকান্ড :
সিলেটে আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি শিশু মুনতাহা হত্যাকান্ড। শুধু সিলেট নয় দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে মর্মান্তিক এ ঘটনা। সিলেটের কানাইঘাটে ৫ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে হত্যার পর মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়, পরে পুকুরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে ঘাতকরা।
৩ নভেম্বর সকালে মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরেন বাবা শামীম আহমদ। এরপর মুনতাহা প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলতে যায়। বিকাল ৩টার দিকে তাকে খুঁজতে গিয়েও কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। খেলার সাথীরাও মুনতাহার বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি। সে সময় ছোট্ট শিশু মুনতাহার সন্ধানদাতাদের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন অনেকেই।
নিখোঁজের সাত দিন পর জেরিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয় মুনতাহার প্রাইভেট শিক্ষকসহ চার আসামি। গ্রেফতারকৃতরা হলো কানাইঘাট উপজেলা সদর ইউনিয়নের বীরদল ভারারিফৌদ গ্রামের শামীমা বেগম ওরফে মার্জিয়, তার মা আলিফজান বেগম, একই গ্রামের ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তবে হত্যাকান্ডের দেড় মাসেও প্রকৃত কারণ উদঘাটন হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, চুরির অপবাদ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে শামীমা বেগম মার্জিয়া শিশুটিকে খুন করতে পারে।
হারিছ চৌধুরীর লাশ সনাক্ত ও শেষ ইচ্ছা পূরণ :
আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে হারিছ চৌধুরী মারা যান। ৪ সেপ্টেম্বর প্রফেসর মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকার সাভারে একটি মাদ্র্রাসায় তার লাশ দাফন করা হয়। এরপর সামিরা চৌধুরী প্রফেসর মাহমুদুর রহমানই তার পিতা আবুল হারিছ চৌধুরী দাবী করে লাশের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হলে আদালতের নির্দেশে তার লাশ কবর থেকে তোলা হয়। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশের পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ এলাকা সিলেটের কানাইঘাটে তার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা প্রাঙ্গনে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ কবরের জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে প্রশাসন ও হারিছ চৌধুরীর স্বজনরা। ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ বাদ আসর সাতবাঁক শাহী ঈদগাহ মাঠে গার্ড অব অনার শেষে বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল এতিমখানার আঙিনায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
এক পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু :
২৬ মার্চ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্বামী, স্ত্রী এবং ৩ সন্তানের মৃত্যু হয়। উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে ঘরের চালে পড়ে আগুন লেগে যায়। এ সময় ঘরের ভেতরে থাকা ফয়জুর রহমান, স্ত্রী শিরিন বেগম, বড় মেয়ে সামিয়া, মেঝো মেয়ে সাবিনা ও ছেলে সায়েম আগুনে পুড়ে মারা যান। এসময় ছয় বছরের মেয়ে সোনিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম :
সিলেটে একসঙ্গে চার সন্তানের জন্মের বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। ২২ ফেব্রয়ারি সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দেন ফৌজিয়া বেগম নামে এক মা। শিশু চারটির বাবা সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ গ্রামের রুহুল আমিন।
ট্রিপল মার্ডার : স্বচক্ষে দেখে সহ্য করতে পারেনি পুত্রবধূও !
কানাইঘাট উপজেলার হারাতৈল মাজবড়াই গ্রামে সাত ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই সামছুল হক গ্রামের মসজিদের আড়াই লাখ টাকা মূল্যের পাঁচ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে আছেন। ওই জমিতে নতুন স্থাপনা তৈরি করা হবে, তাই ছাড়তে হবে মসজিদের মালিকানাধীন ওই জমি। ওই জমি নিয়ে মসজিদের পক্ষে কথা বলায় আপন বড় ভাই ও ভাতিজারা ধারালো দা দিয়ে প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে স্বজনদেরকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রক্তে ভেসে যায় বসতবাড়ির সামনের ছোট্ট সড়ক। গুরুত্বর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক এক করে মৃত্যু ঘটে জয়নাল আবেদীন (৪৬), ছয়ফুল্লাহ (৬২) আর আব্দুল্লাহ (৫৫) নামের তিন সহোদর। শ্বশুরবাড়িতে স্বচক্ষে এমন লোমহর্ষক কান্ড দেখে স্ট্রোকে মারা যান পুত্রবধূ রোমানা বেগম (২৮)। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল এ ভয়াবহ হত্যাকান্ড ঘটে।
বজ্রপাতে একদিনে ৭ জনের মৃত্যু :
দিনের পর দিন বজ্রপাতে প্রাণহানী বেড়েই চলেছে। বিদায়ী বছরে জনমনে আতঙ্ক ছিল বজ্রপাত নিয়ে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বিভাগজুড়ে বজ্রপাতে অনেক প্রাণহানী ঘটে। এরমধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর একদিনে মারা যান ৭ জন। এরমধ্যে সিলেটের বিশ্বনাথে বজ্রপাতে রেদওয়ান আহমদ (১৯) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। নিহত রেদওয়ান আহমদ সাড়ইল গ্রামের ওলিউর রহমানের ছেলে। সে সিলেট এমসি কলেজের বিএসএস ১ম বর্ষের ছাত্র ছিল। এসময় তার ছোটভাই ও বজ্রপাতে আহত হন।
সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নে মাছ ধরতে গিয়ে আনসার আলী নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। আনসার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের খাটিমারা গ্রামের বাসিন্দা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাজনগর স্কুলের পাশের মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান মাসুক আহমেদ (৪১)। মাসুক উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্য রাজনগর গ্রামের কনু মিয়ার ছেলে।
একই দিন সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে চারজন জেলের মৃত্যু হয়। জেলার তিন উপজেলায় পৃথক তিনটি হাওরে এ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হাওরে মাছ ধরার সময় ছাতকে একজন, দোয়ারাবাজারে দুজন ও জামালগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন, ছাতক উপজেলায় মল্লিকপুর গ্রামের খুরশেদ আলীর ছেলে সুন্দর আলী (৫০), দোয়ারাবাজার উপজেলার তিনহালি বাড়ির চাঁন মিয়ার ছোট ছেলে জলাল মিয়া (৩০) ও একই গ্রামের নোয়া গাঁইয়া বাড়ির নুরুল হকের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন, জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালাগুজা গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে শরীফ মিয়া (৩০)।
চুন-বালি খাইয়ে পিটিয়ে হত্যা :
বছরের সর্বশেষ আলোচিত ঘটনা ঘটেছে ২৪ ডিসেম্বর। গোয়াইনঘাট উপজেলায় গরুচুরির অপবাদ দিয়ে এক যুবককে পিটিয়ে ও চুন-বালি মিশ্রিত পানি খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার মধ্যজাফলং ইউনিয়নের জাফলং চা বাগানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হেলাল মিয়া ডৌবাড়ী ইউনিয়নের দাতারি গ্রামের বাসিন্দা।
দীর্ঘদিন থেকে হেলাল জাফলং পাথর কোয়ারি এলাকায় বালু উত্তোলনের কাজ করে আসছিলেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। গত ২৪ ডিসেম্বর সকালে কাজের জন্য জাফলং যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন পাশের চারগ্রাম চাতল হাওরের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন। কাজ না পেয়ে তারা দুপুরে জাফলং চা বাগান এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে রাধানগর গ্রামে গরু চোর সন্দেহে তাদের আটক করে কিছু লোক। রাত ১১টা পর্যন্ত আটকে রেখে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে বালু-চুন মিশ্রিত পানি জোর করে খাওয়ানো হয়। ফলে ঘন ঘন বমি করতে থাকেন হেলাল। নাক দিয়ে সাদা শ্লেষ্মার মতো বের হয়। পায়ুপথ দিয়ে রক্তও বের হয়, পরে সে মারা যায়।
ঘটনার খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। নির্মম নির্যাতনের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় উপজেলার মধ্য জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম মুসা মিয়াকে গত ২৬ ডিসেম্বর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
২৪ ঘন্টায় সিমান্তে ২ হত্যা :
সিলেট সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সশস্ত্র খাসিয়াদের গুলিতে পরপর দু’টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। এ দুই বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় সীমান্তে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি দমদমিয়া সীমান্ত এলাকার ১২৬১ নম্বর পিলারের প্রায় ২০০ গজ ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে সবুজ মিয়ার লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা বিজিবি ও পুলিশকে খবর দেন। নিহত সবুজ ভিতরগুল পাহাড়তলী গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে। এর আগে ২৬ ডিসেমবর দুপুরে ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে খাসিয়াদের গুলিতে নিহত হন জৈন্তাপুর উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি গ্রামের মো. সাহাব উদ্দিনের ছেলে মারুফ মিয়া।