জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সংবিধান সংস্কার: আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা

সুরমা টাইমস রির্পোট : জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সংবিধান সংস্কার : আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট একটি দেশ। ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিক দিক থেকে এদেশে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত। তাই এদেশের সংবিধানে ইসলামকে নৈতিক দিকনির্দেশনার ভিত্তি হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রাখার পাশাপাশি কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থি কোনো আইন প্রণয়ন না করার বিষয়টিও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বক্তারা মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪) জাতীয় প্রেসক্লাবে বালাকোট-চেতনা উজ্জীবন পরিষদের উদ্যোগে ‘সংবিধান সংস্কার: আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন।
পরিষদের আহবায়ক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খানের সভাপতিত্বে ও বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মোহাম্মদ নজমুল হুদা খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিমকোর্টের মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ এ.বি. মাহমুদুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সদস্য সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এরফোর্ট ইউনিভার্সিটি, জার্মানি’র পিএইচডি গবেষক মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি সৈয়দ এ.বি. মাহমুদুল হক বলেন, এদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান। আমিও ব্যক্তিগতভাবে ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের সন্তান। আমাদের পূর্বপুরুষ ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। তাই ইসলামের প্রতি আমাদের হৃদয়ের টান রয়েছে। তিনি মূল প্রবন্ধে উপস্থাপিত প্রস্তাবসমূহকে সুন্দর আখ্যায়িত করে বলেন, সংবিধান সংস্কারাধীন রয়েছে। এতে আমরা অনেক ভালো কিছু প্রত্যাশা করি।
মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ইতিহাসের নানা বাঁক অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, এদেশের মানুষ সময়ে সময়ে শোষণ, বঞ্চণা, নির্যাতন-নিপীড়ন ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লব ইতিহাসের সে ধারারই অংশ। জুলাই বিপ্লবের পর নবগঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দেশের সংস্কার ও উন্নয়নে নানা প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সংবিধান সংস্কারের জন্য গঠন করেছেন ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’। এ কমিশন দেশের সকল নাগরিকের নিকট থেকে সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রস্তাব আহ্বান করেছে। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) এর বিপ্লবী চেতনা উজ্জীবনের লক্ষ্যে গঠিত ‘বালাকোট চেতনা উজ্জীবন পরিষদ’ এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে গত ২৩ নভেম্বর ১৯ দফা প্রস্তাব পেশ করেছি। আমাদের দাবি, সংবিধানে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে, আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, হিযবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলিহীনের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী, চরমোনাই আহছানাবাদ রশিদীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ এর সভাপতি ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রূহুল আমীন, বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন মুফতী আবু নছর জিহাদী, মহাখালী দারুল উলূম হোসাইনিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আল মারুফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুল হক, দারুল ফিকর ওয়াল ইফতা আল-ইসলামী বাংলাদেশ’র সদস্য সচিব মাওলানা আবু সালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, মাসিক পরওয়ানা’র সম্পাদক মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো ড. ফয়জুল হক, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ এস এম মনোয়ার হোসেন।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শহিদুল হক, গোড়ান নাজমুল হক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এমরানুল হক, মোহাম্মদপুর গাউসিয়া ফাযিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আ. ন. ম. মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ গোপালদী কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা এবিএম আব্দুস সালাম, বঙ্গভবন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইফুল কবির, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া ঢাকা মহানগর সভাপতি ইমাদ উদ্দীন তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ইকরাম কুতুবি, সাধারণ সম্পাদক আহমদ রায়হান ফারহি, জার্মানি বার্লিনের বাইতুল মুকাররামের খতিব মাওলানা হেলাল উদ্দীন সিরাজী, শাহনুর প্রপার্টিজ লিমিটেডের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নাইমুল হক খান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধে সংবিধান সংস্কারে ১৯ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। এর মধ্যে- সংবিধানের প্রস্তাবনায় “সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব” ও ইসলামকে নৈতিক দিকনির্দেশনার ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রাখা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বিলোপ, কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থি কোনো আইন প্রণয়ন না করা, আলিম-উলামা ও ইসলামী আইনজ্ঞদের সমন্বয়ে ‘ইসলামিক আইডোলজি কাউন্সিল’ গঠন করা, এলজিবিটিকিউ বা ট্রান্সজেন্ডারের মতো বিষয় অধিকার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করা, মুসলমানদের বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার ও অন্যান্য পারিবারিক বিষয় পূর্ণরূপে ইসলামী নীতি অনুসারে পরিচালনার স্বীকৃতি প্রদান, জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন, পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলক ইসলামী শিক্ষা অন্তর্ভুক্তি, ইসলামী অর্থনীতি ও শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন, সুদমুক্ত ব্যাংক ব্যবস্থা প্রবর্তন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানসহ ধর্মীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে।প্রস্তাবসমূহ উল্লেখ করার সাথে সাথে এগুলোর ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে অন্যান্য দেশের আইন, সংবিধান ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের উদাহরণও আনা হয়েছে। “সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব” এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মৌরতানিয়া, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংবিধানে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস অনুযায়ী স্রষ্টার সার্বভৌমত্বের কথা বিভিন্ন পরিভাষায় প্রযুক্ত হয়েছে। রাষ্ট্রধর্মের কথাও মালয়েশিয়া, তিউনিসিয়া, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড-এর সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। (বিজ্ঞপ্তি)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।