“আশার আলো দেখছেন ” ৬ বছর বন্ধ থাকার পর কোয়ারির সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েক লক্ষাধিক মানুষেরা
দূর্গেশ সরকার বাপ্পী গোয়াইনঘাট থেকে: পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এমন কারণে কোয়ারি বন্ধ থাকলেও ব্যাবসায়ীদের দাবি ৩ কোয়ারি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথার উত্তোলন করতে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। আদেশ কার্যকরে প্রশাসনের দ্বারস্থও হয়েছেন তারা। সিলেট জেলার পাথর কোয়ারী দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায়, অত্র এলাকায় কোয়ারী সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবী দিনমজুর কর্মসংস্থান হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধহারে দিনযাপন করছেন। কর্মক্ষেত্র বন্ধ থাকায় পাথর, বালু ও বারকি শ্রমিকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর বেলায় দেখা যায় দিনমজুর শ্রমিকদের বেলচা,টুকরি নিয়ে তীর্থের কাকের মত বসে থাকেন কাজের সন্ধানে। দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারী সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ ও শ্রীপুরসহ সব কয়টি এলাকায় কোয়ারী ও বালু মহালের সংশ্লিষ্ট কয়েক লক্ষ শ্রমিকের বর্তমান চিত্র এটি।
কোয়ারী ও বালু মহাল সচল থাকলে সরকার বাহাদূর রাজস্ব আদায়ের অবদান রাখতে পারবেন, তেমনি সিলেটসহ দেশের ৩-৪ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে নিজের জীবন মান উন্নয়নসহ দেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিকে আরো মজবুত করবে। শুধু পাথর, বালু ও বারকি শ্রমিক নয়, বেকায়দায় পড়েছেন এবার পাথর ব্যবসায়ীরাও শেষ সম্বল টুকু ব্যাংকে মরগেজে রেখে করেছেন পাথর ভাঙ্গার ক্রাশর মিল কোয়ারী বন্ধ থাকায় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় পড়ছেন বিপাকে হারাতে বসেছেন তার শেষ সম্বল টুকু, পাথর ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা বসে আছেন কোয়ারী খোলার । দীর্ঘ দিন থেকে কোয়ারী ও বালু মহাল থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় পাথরের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হতে চলেছে জাফলং, ধূপাগুল, ভোলাগঞ্জসহ উত্তর সিলেটের ক্রাসিং জোন এলাকা। কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ওই সব ক্রাসার এলাকা শ্রমিক শূন্য হয়ে পড়েছে দিন দিন।
সংশ্লিষ্ট পেশা ছাড়া অন্য কোন পেশা জানা না থাকায় সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকার পাথর ও বালু শ্রমিক পরিবারে চরম অভাব-অনটনে দেখা দিচ্ছে । পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন হত দরিদ্র শ্রমিকেরা। ইতিমধ্যে সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার দাবিতে সকল শ্রেণি পেশার মানুষেরা জড়ো হয়ে আন্দোলন করেছেন বারবার শ্রমিকদের দাবি সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের জন্য কোয়ারি খুলে দেওয়া হোক।
এছাড়া জাফলং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিছনাকান্দি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ভোলাগঞ্জ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও শ্রীপুর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্থরের শ্রমিকেরা পাথর কোয়ারী সচলের দাবিতে পৃথক পৃথক মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন। বিভিন্ন মানববন্ধন কর্মসূচীতে শ্রমিকেরা ‘ভাত চাই না হলে কাজ চাই’ এই শ্লোগানে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম শাখার ট্রক- পিক আপ, কালভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, অত্র এলাকায় পাথর পরিবহনে প্রয় দুই হাজার ট্রাক পাথর পরিবহন করে,বর্তমানে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা মানবতার জীবন যাপন করছেন। পাথর কোয়ারী খোলে দিলে সরকার পাবে রাজস্ব তেমনি শ্রমজীবি মানুষের জীবনমান হবে উন্নয়।
বিছন্নাকান্দি পাথর ব্যবসায়ী মহিবুর রহমান বলেন, সোনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারী খোলে দিলে অত্র এলাকার ব্যারসায়ীও পাথর সংশ্লিষ্ট সকলের জীবিকার ও কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচন হবে। অনেক ব্যবসায়ীরা ফিরে পাবেন ব্যাংকে মরগেজ দেওয়া ফিরে পাবেন তাদের শেষ সম্বল টুকু। এবার সেই কোয়ারিগুলো থেকে পরিবেশ সম্মতভাবে পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দেয়া জরুরী বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। একই সাথে কোয়ারি চালু হলে লাখো শ্রমিক ফিরবেন তাদের কর্মে।
এ ব্যাপারে জাফলং পাথর কোয়ারী এলাকার ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, পাথর ও বালু উত্তোল বন্ধ থাকার কারণে কোয়ারী এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যে কারণে কর্মহীন মানুষের হাহাকার পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দীর্ঘ ৬ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলতে যাচ্ছে সিলেটের পাথর কোয়ারি। শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের করা রীট পিটিশনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে জাফলংয়ের ব্যাপারে ২২ অক্টোবর, বিছনাকান্দির ১১ নভেম্বর ও ভোলাগঞ্জের ব্যাপারে ১৪ নভেম্বর পাথর উত্তোলনের নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ইজারা বিহীন কোয়ারী এবং যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাফলং, বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারী ও বালু মহলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং পাথর কোয়ারী বন্ধ রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, পাথর ও বালু শ্রমিকদের মানবেতর জীবন বিবেচনা করে পাথর কোয়ারীগুলো জরুরী ভিত্তিতে খুলে দেওয়ার জন্য।