ভারতকে আশ্বস্ত করেছি, বিএনপি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশ্রয় দেবে না: মির্জা ফখরুল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃঃ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করেছি, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে পারবে না ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারত ও বিএনপির মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে।
বিএনপির নেত্রী ও দুবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে ভারতের সঙ্গে হওয়া কিছু উদ্যোগ ও চুক্তির সমালোচনা করেছেন। তবে সম্প্রতি একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করতে বিএনপি কার্যালয়ে বৈঠক করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠক দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক কিছু বিষয় বয়ে এনেছে। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গত নির্বাচনের পর থেকেই আমাদের (ভারত ও বিএনপি) সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তবে এবার আমাদের অফিসে হাইকমিশনারের (ভারতের) সফরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বরফ গলতে শুরু করেছে।’ বিএনপি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সব সময়ই খুব ভালো সম্পর্ক ছিল এবং সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। অবশ্যই, এটিও ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি টার্নিং পয়েন্ট।’ তিনি বলেন, তাঁর দল ভারতকে আশ্বস্ত করেছে যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের মাটি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে ব্যবহার করতে দেবে না।
প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যকার স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা পানি বণ্টন সমস্যা, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার কথা উল্লেখ করেছি। একই সময়ে, ভারতের প্রধান সমস্যা ছিল নিরাপত্তা সমস্যা। আমরা আশ্বস্ত করেছি, আমরা ক্ষমতায় গেলে নিশ্চিত করব যে, এই ভূখণ্ড বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ব্যবহার করতে পারবে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক সব সময়ই খুব ভালো ছিল। কিন্তু বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল।
আমি মনে করি, বরফ গলতে শুরু করেছে। আশা করি, এই সম্পর্ক আরও ভালো হবে। এবার তারা (ভারত) আমাদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবে, বিশেষ করে ভারতকে এ দেশের মানুষের নাড়ি বোঝার চেষ্টা করা। জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ককে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বৈঠকের আলোকে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অবশ্যই, এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে এই পরিবর্তনের পর জয়শঙ্করের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ অবশ্যই খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, এই বৈঠকের পর সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।’
মির্জা ফখরুল যোগ করেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। জনগণের মধ্যে সম্পর্কই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার মূল চাবিকাঠি।’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বিশ্বাস করে, হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসা উচিত এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি এখনো জানি না, সরকার তাঁকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছে কি না। তবে আমি মনে করি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে ফিরে আসা উচিত এবং তাঁর জবাবদিহি করা উচিত।’
এদিকে বিএনপির এই নেতা জানিয়েছেন, আগামী ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর পালিত হতে যাওয়া দুর্গাপূজা উৎসবের আগে তারা দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের ইউনিটগুলোকে সতর্ক করেছে। বাংলাদেশের ৩২ হাজার ৬৬৬টি পূজামণ্ডপে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন—এমন ভুল ন্যারেটিভ নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি না যে, কোনো গুরুতর সমস্যা চলছে। প্রতিটি পরিবর্তনের পরে কিছু সমস্যা হয়, যা রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক নয়।’ তিনি বলেন, ‘কিছু ঘটনা ঘটেছে। এগুলো সবই রাজনৈতিক প্রকৃতির, সাম্প্রদায়িক নয়। আমরা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য খুবই সজাগ। বিশেষ করে, পূজার আগে। আমরা এরই মধ্যে সারা দেশে আমাদের ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি।’
এ সময় তিনি জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকার থেকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে।