বাইডেনের উপদেষ্টা দাবি করা কে এই মিয়া আরেফি?

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

গত ২৮শে অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া একটি ভিডিওতে গোলাপি শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তিকে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে বসে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

বছর দুয়েক আগে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের পাশে বসেছিলেন তিনি।

মিয়া আরেফি দুটি পরিচয় দেন: তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটির সদস্য, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা।

তার বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপে আরেফিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার ‘দৃঢ় সংযোগ’ থাকার কথা বলতে শোনা যায়।

‘আমরা দিনে অন্তত ১০–১৫ বার ক্ষুদেবার্তা আদান-প্রদান করি,’ তিনি বলেন।

আরেফি বিএনপির সমাবেশ এবং তৎপরবর্তী সহিংসতার কথাও বলেন।

‘আমি গুলির শব্দ শুনেছি। নিজের চোখে দেখেছি। আমি সাক্ষী,’ তিনি বলেন।

যদিও ক্লিপটির অডিও কিছু জায়গায় বোঝা কঠিন, তবে আরেফি তার বেড়ে ওঠার কিছু অস্পষ্ট পটভূমিও জানান।

তিনি বলেন, ‘এই দেশ আমার মা-বাবাকে হত্যা করেছে।’

দৃশ্যপটে আরেফির আকস্মিক উপস্থিতিও বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে দাবি করায় রোববার দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়।

এদিকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসও আরেফি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে।

মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই ভদ্রলোক মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি নন।’

মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফিকে কেউ চেনেন না। তাহলে তিনি কে?

মিথ্যার জাল?

আরেফির ফেসবুক প্রোফাইল লক করে রাখা আছে। অবশ্য সেখানে তার বায়োগ্রাফি অংশ দেখা যায়।

তার ফেসবুক বায়ো অনুসারে, তিনি আমেরিকান সরকারের প্রাণকেন্দ্র ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে কাজ করতেন।

এছাড়া সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ‘মেম্বারস অভ দ্য ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটি’-তে কাজ করেন।

ইংরেজি ডেমোক্রেটিক শব্দটি তিনি ভুল বানানে ‘Democretic’ লিখেছেন, যা সন্দেহের উদ্রেক করে।

তার ওপর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটি নামক কোনো সংস্থার অস্তিত্ব নেই। দ্য ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (ডিএনসি) নামক একটি সংগঠন রয়েছে যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির অংশ।

ডিএনসি এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে যে, এটির ছয়জন নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন যারা বিদেশে ডেমোক্রেটদের প্রতিনিধিত্ব করেন।

আরেফির নাম অবশ্য বর্তমান ডিএনসি সদস্যদের তালিকায় নেই। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে ডিএনসি’র ২০০-এর বেশি নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন।

এ সদস্যদের প্রোফাইলগুলো সহজেই যাচাই করার জন্য যথেষ্ট উন্মুক্ত। কিন্তু আরেফির বেলায় তা নয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হওয়ার বিষয়ে তার দাবিটিও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস উড়িয়ে দিয়েছে।

আরেফি নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্নেল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্নাতক বলেও দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, তিনি পাবনা জেলা স্কুলে এবং সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেছেন।

আরেফির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আর বেশি কিছু পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকে আবদুল বাতেন হিরুর পোস্ট করা ফটোতে তাকে ট্যাগ করা হয়েছে। ২০২২ সালের একটি ছবিতে আরেফিকে উল্লাপাড়া আকবর আলী সরকারি কলেজে লোকজনের সঙ্গে দেখা যায়।

সেই ছবিতে আরেফি মার্কিন পতাকার নকশায় ‘ইউএসএ’ শব্দ লেখা একটি টি-শার্ট পরেছেন।

পোস্টে বলা হয়, আরেফি কলেজের পুরো প্রশাসনের প্রতি তার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং বলেছেন তিনি তার ‘ওয়াশিংটন ডিসির সহকর্মীদেরকে’ দারুণ এ অভিজ্ঞতার কথা জানাবেন।

আব্দুল বাতেন আরেফিকে ‘ওয়াশিংটন, ডিসিতে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির’ একজন সদস্য উল্লেখ করেন।

আরেফির লিংকডইন অ্যাকাউন্টে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনো উল্লেখ নেই। তবে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি একটি মার্কিন রিটেইল শপে কাজ করেন।

তার সম্পর্কে আর কোনো তথ্য প্রকাশ্যে নেই।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।