সিলেটে চিনি চোরাচালানে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা: দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

চিনি চোরাচালানে সম্পৃক্ততার বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সিলেট ছাত্রলীগকে। এনিয়ে হামলা-সংঘাতও লেগে আছে।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা চিনি চোরাচালানে জড়িত এমন অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়ার জেরে এবার সিলেটের বিশ্বনাথে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল বুধবার (২৭শে সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্বনাথ পুরান বাজারে কয়েক দফা এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দু’পক্ষের এক পক্ষে রয়েছেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি পার্থ-সারথী দাস পাপ্পু আর অন্য পক্ষে রয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন মামুন। এতে পার্থ-সারথী দাস পাপ্পুসহ উভয় পক্ষে ১০জন আহত হয়েছেন।ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ গতকাল বিকেলে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করায় উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন এবং ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম রুকনের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এ সময় তারা একটি পথসভা করে এবং নেতাকর্মীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করে।

এরপর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে কটূক্তি করে মিছিল বের করা হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি পার্থ সারতি দাস পাপ্পু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে ‘চাঁদাবাজ’ ও ‘চোরাচালানকারী’ বলে স্ট্যাটাস দেন।

এই স্ট্যাটাসের জের ধরে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন এবং ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম রুকনের নেতৃত্বে পাপ্পুর অফিসে হামলা চালানো হয়। এ সময় পাপ্পুসহ কয়েকজন আহত হয়।

হামলার খবর পেয়ে সিলেটের ওসামনীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান ও বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল ইসলাম একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করেন।

এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবারও নিজ বলয়ের নেতার্মীদের নিয়ে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন পাপ্পু। এসময় পুলিশের সামনে জাকির পক্ষের ছাত্রলীগের নেতারা আবারও তাদের ধাওয়া করে।

এসময় মিছিল ভেঙে দৌঁড়ে গিয়ে ইন্তাজ আলী মার্কেটের নিচতলায় দক্ষিণ বিশ্বনাথ ফুটবল একাডেমীর অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন পাপ্পু। সেখানে গিয়েও জাকির পক্ষের নেতারা তার উপর হামলা চালান এবং অফিসের টেবিলের গ্লাস ভাঙচুর করেন। সর্বশেষ রাত ১০টায় পাপ্পুকে থানা পুলিশের সহযোগীতায় বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এঘটনায় বিশ্বনাথ পৌর শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি পার্থসারথী দাস পাপ্পু বলেন, টাকার বিনিমেয় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। আর সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের মদদে পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য রাজু আহমদ খান ও ছাত্রলীগ নেতা জাকিরের নেতৃত্বে তার উপর তিনদফা হামলা করা হয়। এসময় উপজেলা ছাত্রলীগের অফিসসহ আরও একটি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় তার পক্ষের ১৫জন আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন মামুন বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদককে কটুক্তি করে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস ও তাদের বিরুদ্ধে পার্থ-সারথী দাস পাপ্পু মিছিল দিতে চাইলে তারা ধাওয়া করেছেন, তবে হামলা করেননি। পাপ্পু পক্ষের হামলায় তাদের দু’জন আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে সিলেটের ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান পিপিএম বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ একদল পুলিশ প্রায় ৩ঘন্টা মাঠে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন এবং বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। তাই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, শিগগিরই নতুন কমিটি দেওয়া হবে। আর এ বিষয় নিয়ে যারা বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এরআগে গত ১০ই আগস্ট রাতে সিলেট নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও সিলেট জজ কোর্টের অ্যাসিসটেন্ট পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট প্রবাল চৌধুরী পূজনের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে।

পরবর্তীতে গত ১৩ই আগষ্ট রবিবার সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের ৫৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও ২০০-২৫০ জনকে আসামি করে তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (১ম) আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

ফেসবুকে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ও নেতাকর্মীদের চিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বিষয় নিয়ে অ্যাডভোকেট পূজনের সমালোচনার জেরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

গত ১৩ই আগষ্ট রবিবার আদালতে দায়েরকৃত মামলায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ ও মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম আহমদ এবং সিসিকের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, সিলেট ইনঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিছবাউল করিম রফিকসহ ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের আসামি করেছেন অ্যাডভোকেট প্রবাল চৌধুরী। মামলায় অজ্ঞাত আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

এ ঘটনায় করা মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তিনি সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সম্প্রতি ঘোষিত কয়েকটি কমিটি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করে পোস্ট দেন।

সেই সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে দেশে অবৈধভাবে নিয়ে আসা চিনির ব্যবসায় ছাত্রলীগের কিছু নেতা জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেন। এর জেরে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।