জকিগঞ্জ সড়কে বাস চাপায় কানাইঘাটের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু

কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ

সিলেট—জকিগঞ্জ সড়কে দ্রুতগতির বাসের চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে কানাইঘাটের দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে জকিগঞ্জ উপজেলার শাহবাগের মহিদপুর মুরাদখাল নামক স্থানে।

নিহত এ দুই শিক্ষার্থী হলেন কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের সুতারগ্রামের বাসিন্দা কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রধান শিক্ষক হোসেন আহমদের পুত্র সিলেট এম.সি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান (১৯) ও তার আপন চাচাতো ভাই সৌদি প্রবাসী বুলবুল হাসানের পুত্র সিলেট সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহাদি হাসান রাহাত (১৭)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কানাইঘাট থানা, জকিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কানাইঘাট সাতবাঁক ইউপির জয়পুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন তারা।

 

বিকেল ৫টার দিকে মেহেদি হাসান, মাহাদি হাসান রাহাত ও তাদের ফুফাতো ভাই শিক্ষার্থী শাকিল আহমদ মোটর সাইকেল যোগে শাহবাগ পেট্রল পাম্পে যান।

পথিমধ্যে শাহবাগ মহিদপুরস্থ মুরাদখালের পূর্বে মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে রেখে এ তিন শিক্ষার্থী ছবি উঠাতে থাকে। একপর্যায়ে জকিগঞ্জ থেকে সিলেটগামী একটি দ্রুতগতির গেইটলক বাস বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অটোরিক্সা সিএনজি গাড়ীকে অতিক্রম করার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো মেহেদি হাসান, মাহাদি হাসান রাহাত ও শাকিল আহমদকে দ্রুতি গতির বাসটি স্বজোরে ধাক্কা দেয়।

এতে কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান ও তার চাচাতো ভাই মাহাদি হাসান রাহাত গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু হয়। তাদের ফুফাতো ভাই শাকিল আহমদ গুরুতর আহত হলে তাঁকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনাস্থলে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদ ও জকিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) দিলীপ কান্ত নাথ ছুটে আসেন।

এ সময় স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় পুলিশ নিহত মেহেদি হাসান ও মাহাদি হাসান রাহাতের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে নিকটস্থ কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।

পরে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাটি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করার পর যেহেতু দু’টি লাশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে এ জন্য ময়না তদন্ত ব্যতীত রাত ৮টার দিকে তাদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় আপন দুই চাচাতো ভাই মেধাবী কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান ও মাহাদি হাসান রাহাত এর মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোকজন হাসপাতালে তাদের লাশ দেখার জন্য ভীড় করেন। নিহতদের লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর আত্মীয়—স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে জানিয়েছেন, বেপরোয়া গতির বাস চলাচলের কারনে প্রায়ই সিলেট জকিগঞ্জ সড়কে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে।

দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনায় ঘটেনি, তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল, বেপরোয়া গতির বাস তাদের চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। এজন্য তারা বাস চালককে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন।

কানাইঘাট থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, প্রকাশ্যে দিনের বেলায় বাসচাপায় কানাইঘাটের দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

তবে ঘটনাস্থল জকিগঞ্জ থানার অধীনস্থ হওয়ায় জকিগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে আলাপ—আলোচনা করে লাশ দু’টি কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। পরে লাশ দুটি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা
হয়েছে।

জকিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) দিলীপ কান্ত নাথ জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দু’টি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঘাতক বাসটিকে বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই এলাকায় আটক করা হয়েছে। পরবর্তীতে যতটুকু আইনী প্রক্রিয়া করা দরকার তা করা হবে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।