গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট সিলেট গড়ার অঙ্গীকারসহ ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা আনোয়ারুজ্জামানের

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

 

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তার ২১ দফা ঘোষণা জুড়ে রয়েছে গ্রিন-ক্লিন ও স্মার্ট সিলেটের স্বপ্ন বাস্তয়নের অঙ্গীকার।

আজ শনিবার সিলেট মহানগরীর একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। এসময় দলীয় নেতাকর্মী ও সিলেটের গণমাধ্যম কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহারের শুরুর দিকে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, সব মুক্তিযোদ্ধা, ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদ ও জাতীয় চার নেতার প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

এরপর তিনি আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়নয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকেও সমর্থন ও সহযোগীতার জন্য এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি সিলেটের প্রয়াত সব নেতৃবৃন্দের প্রতিও তার শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

আনোারুজ্জামান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরে সিলেট সিটি করপোরেশনের জন্য ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তার শুরুতেই আছে স্মার্ট নগরভবন, পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিচ্ছন্ন নগরী ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থাচালু ও যানজট নিরসন, সুরমার নাব্যতাবৃদ্ধি ও অকাল বন্যারোধে পদক্ষেপ, বিশুদ্ধ পানীয় জলেল ব্যবস্থা,

 

বঙ্গবন্ধু উদ্যান নির্মাণ, ভালোমানের কর্মমূখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন কর্মকান্ড ও সবুজায়ন, নিরাপদ ও শান্তির নগরী হিসাবে গড়ে তোলা, দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা সৃষ্টি প্রস্তুতি ও তদারকি, বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন বা পৃথক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, নগরীতে একটা মিউজিয়াম স্থাপন, সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, দক্ষিণ সুরমা থেকে সুরমা নদীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ, রাজধানীমুখী দ্রুতগামী ট্রেন চালু করতে ভূমিকা রাখা, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট তৈরি, খেলার মাঠের ব্যবস্থা, উদ্যোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, নগরীর তারের জঞ্জাল পরিস্কার ও প্রযুক্তির সিলেট ।

ইশতেহারে স্থান পাওয়া ২১ দফা হলো–

১. স্মার্ট নগরভবন :

তিসি নগরভবনকে পরিপূর্ণ ডিজিটালাইজড করা, দক্ষ জনশক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়নের ভিত্তিতে পূর্ণতাপ্রদান, গ্রিন ও স্মার্ট নগরী বিনির্মাণে মহাপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পাশাপাশি জনশক্তিকে আরও দক্ষ করা সেবার মানসিকতা উদ্বুদ্ধ করা, মৌলিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা ও মাস্টার রোলে নিয়োগ বন্ধ করে যথাযত প্রক্রিয়ায় জনবল নিয়োগেরও ঘোষণা দেন।

২. পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা দূর করাঃ

পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার খেসারত সিলেটবাসী দীর্ঘদিন ধরে দিতে হচ্ছে। এ ব্যাপাওে একটি পূূর্বগবেষণামূলক স্যানিটেশন সলিউশন প্ল্যান দরকার। ছড়া কখনই পয়ঃনিষ্কাশনের অংশ নয়। ছড়া বেয়ে বৃষ্টির পানি সুরমা নদীতে গিয়ে পড়বে। চা-বাগানের টিলা-পাহাড় থেকে নেমে আসা মালনীছড়া, যোগিনীছড়া, গোয়ালীছড়া, কালীবাড়িছড়া, মঙ্গলীছড়া, হলদিছড়া, ভুবিছড়া, ধোপাছড়া ও গাভীয়ার খাল নামের নয়টি ছড়া নগর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিলিত হয়েছে সুরমা নদীতে। ছাড়াগুলো উদ্ধার করে নদী পর্যন্ত এর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা । তবেই জলাবদ্ধতা দূর হবে।

৩. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্ন নগরী এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নঃ

সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে জনসাস্থ্যের মানোন্নয়ন। নগরের সব শ্রেণীর মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সুস্থ থাকার ব্যবস্থা করা। সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ, প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ, রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থাসহ, পুষ্টি, পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা। এগুলো ঠিক রাখার জন্য নগরীর বর্জব্যবস্থাপনা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিভিন্ন স্থান বা জলাশয়ে ফেলা এসব বর্জ্য পরিবেশের জন্য যেমন হুমকি তৈরি করছে, জমির উর্বরতা কমছে। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্যর কারণে সুরমানদী, খাল-বিল নাব্যতা হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কঠিন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও রান্নাঘরের বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা, এই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া। অর্থাৎ টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা ও চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারের বিধিমালা মেনে চলা। ভোরের আগেই নগরীর বর্জ্য পরিস্কারের ব্যবস্থা করা। নাগরিকদেরকে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার অভ্যাস পরিবর্তনে উদ্যোগ নেওয়া।

৪. পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থাচালু ও যানজট নিরসন কার্যকর পদক্ষেপঃ

আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটি নগরীর রাস্তার পরিমাণ হওয়া উচিত মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ। সিলেটে জনসংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে যানবাহন। বাড়ছে না রাস্তা। ফলে বাড়ছে যানজট। ফুটপাত এবং রাস্তা হকারদের দখলে থাকা, যেখানে সেখানে গাড়ির স্ট্যান্ড, অবৈধভাবে গাড়িপার্কিং, বহুতল বিপণিবিতান, ব্যাংক, বীমা, ক্লিনিক, অফিস, স্কুল, কলেজের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না থাক্ াএবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরির অনুমোদন প্রদান করায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

পরিকল্পনাহীন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, চালক ও নাগরিকদের নিয়ম না মানার সংস্কৃতির জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অসহ্য যানজটে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রা। এজন্য পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থাচালু ও যানজট নিরসন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। সেই সাথে সরু চৌরাস্তার মোড়ে অপ্রয়োজনীয় ও অকার্যকর স্তম্ভ অপসারণও জরুরী।

৫. সুরমা নদীর নাব্যতাবৃদ্ধি ও অকাল বন্যারোধে পদক্ষেপঃ

সরকার সুরমা নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি আমাদের জন্য বড় এক সুসংবাদ। এই কাজকে যথাযথ তদারকি করা ও দ্রুত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নিয়ে সুরমাতীরবর্তী বাসিন্দাদেরকে জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি দেওয়ার দাবি আমাদের।

৬. বিশুদ্ধ পানীয় জলেল ব্যবস্থাঃ

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গিয়েছে। অনেক এলাকাতেই শুকনো মৌসুমে পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকে। নগরবাসীর জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা।

৭. বঙ্গবন্ধু উদ্যানঃ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সিলেটে কোন স্থপনা নেই। নগরীর পুরনো জেল সরানো হলেও এই এলাকাটি নগরবাসীর কোন কাজেই আসছে না। আমরা চাই তা নগরীর জন্য উন্মুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ তৈরি এবং সেখানে সিলেটটের নারী-শিশু-প্রবীনদের প্রাতঃ ও সান্ধ্যকালীন ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। সেই সাথে সিলেটে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা।

৮. ভালোমানের কর্মমূখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ

সিলেট নগরীতে ভালোমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে কর্মমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করাসহ যুগোপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা। দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্যও প্রশিক্ষণ সেন্টার তৈরি।

৯. পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন কর্মকান্ড ও সবুজায়নঃ

উন্নয়নের নামে সিলেটের বৃক্ষ নিধন,পাহাড় টিলাকাটা বন্ধ করা, পানির আঁধার বিনষ্ট আর করতে দেওয়া যাবে না। গাছ কমে যাওয়ায় নগরীতে পাখিও কমে গেছে। নগরীতে পাখি না থাকায় বিভিন্ন ধরণের পোকা মাকরও বেড়েছে। একসময়ের দীঘির নগরী ছিল সিলেট।

লালদীঘি, সাগরদীঘি, চারাদীঘি, লালাদীঘি, মজুমদারী দীঘি, কাজীদীঘি, তাল দীঘি, রামের দীঘি, মাসুদীঘি, কাজলদীঘিসহ পাড়া মহল্লায় একাধিক দীঘি পুকুর ছিলো। সব ভরাট হয়ে গেছে। আর যেনো কোন দীঘি ও পুকুর ভরাট না হয়, সুরমা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, দূষণ মুক্ত রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে। পানির আঁধার রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

১০. নিরাপদ ও শান্তির নগরীঃ

জমি দখল বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে প্রবাসীদের জমি। প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদেরকে সিলেটে আসার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। ইভটিজিং বন্ধ, সড়কে দুর্ঘটনা হ্রাস, মাস্তানী, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, অপহরণসহ যেকোন সামাজিক অপরাধ নির্মূলে প্রয়োজনীয় সবধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিরাপদ ও শান্তির নগরী প্রতিষ্ঠা করা।

১১. দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা সৃষ্টি, প্রস্তুতি ও তদারকিঃ

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। সেই হিসেব মাথায় রেখে ইমারত নির্মাণে বিধিমালা মানা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা করে নির্মাণকাজ হচ্ছে কী না তা তদারকি করা।সেই সাথে নগরীর নিরাপত্তার জন্য নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ, অগ্নিকাণ্ড না ঘটে, সেজন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য প্রস্তুতি, আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় যে কোনো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি রোধে ব্যাপক সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে নিয়মিত দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

১২. বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন বা পৃথক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টঃ

সরকার আন্ডার গ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই দ্রুত তা বাস্তবায়ন হবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় যেকোন ফল্টের জন্য লোডশেডিং থেকে নগরবাসীকে দূরে রাখতে মহানগরীর জন্য বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এরজন্য সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন বা পৃথক বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট ও সঞ্চালন লাইনের ব্যবস্থা করা জরুরি।

১৩. নগরীতে একটা মিউজিয়াম স্থাপনঃ

আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটে রয়েছে পর্যটনের অফুরান সম্ভাবনা। প্রতিবছর দেশ ও বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক সিলেট ভ্রমণ করেন। সিলেটের সবগুলোপর্যটন স্পট নগরীর বাইরে অবস্থিত। দিনভর জাফলং, রাতারগুল, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি, লালাখাল ও ঝর্ণাগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা শেষে পর্যটকরা নগরীতে ফিরে আসেন। কিন্তু নগরীতে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সিলেটের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নগরীতে একটা মিউজিয়াম স্থাপন ও সুরমা নদী ও নদীর তীরকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থার দাবি আমাদের।

১৪. সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণঃ

সিলেট শহরের সুরমা নদীর তীরে ১৯৩৬ সালে চাঁদনীঘাট এলাকায় নির্মাণ করা হয় ‘সারদা স্মৃতি ভবন’। ৩৯ শতক জমিতে কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের আদলে সারদা হল নামে মিলনায়তনটি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে সেখানে গান, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে আসছে। সিলেটের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতিকর্মীরা দির্ঘদিন থেকে সারদা হলের ঐতিহ্য রক্ষা করে এই এলাকায় একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবি করে আসছেন। পাশাপাশি স ংলগ্ন এলাকা জালালাবাদ পার্কে উন্মুক্ত সংস্কৃতিমঞ্চ তৈরি করে নগরবাসী ও পর্যটকদের বিনোদনের ব্যবস্থার দাবি জানাই।

১৫. দক্ষিণ সুরমা থেকে সুরমা নদীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণঃ

সিলেটের আইডেন্টিটি ক্বীনব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়ি, চান্নীঘাটের সিড়ি, সারদা হল পাশাপাশি অবস্থিত। সম্প্রতি দক্ষিণ সুরমায় নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাসস্ট্যান্ড। ক্বীন ব্রিজটি ক্রমশ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্রিজের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে দক্ষিণ সুরমা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে সুরমা নদীর তলদেশ দিয়ে বন্দরবাজার পর্যন্ত একটি ট্যানেল নির্মাণ ও নদীর দুই তীরে ওয়াক ওয়ে নির্মাণসহ নদীতে ভ্রমণের পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরির ব্যবস্থা করা। তাতে করে এ এলাকাটি শুধু নগরবাসীর জন্য নয় পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠবে।

১৬. রাজধানীমুখী দ্রুতগামী ট্রেন চালু করতে ভূমিকা রাখাঃ

ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, সরকারি-বেসরকারি কাজে বা প্রবাসীদের বিভিন্ন দেশে গমণের জন্য বা চাকুরী করতে সিলেটবাসীকে সবচেয়ে বেশি রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। দ্রুতগামী ট্রেন চালু হলে আমাদের সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি আমরা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবো।

১৭. পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট তৈরিঃ

লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন লাখ লাখ শিশু, ছেলে-মেয়ে, প্রবীন, অসুস্থ ও প্রসূতি মা ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। কিন্তু সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত পাবলিক টয়লেট গড়ে ওঠেনি। পুরাতন পাবলিক টয়লেটের মানও খুব খারাপ। পুরুষরা কোনোভাবে এসব টয়লেট ব্যবহার করতে পারলেও নারী ও শিশুরা ব্যবহার করতে পারছেন না। এতে তারা বাইরে বের হয়ে অস্বস্তিতে পড়েন। নগরবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল স্থানে একাধিকসহ প্রতি ওয়ার্ডে ১টি করে হলেও আধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপন ও পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করা।

১৮. খেলার মাঠের ব্যবস্থাঃ

সিলেট নগরীতে শিশু কিশোরদের থেলাধুলার জন্য কোন মাঠ নেই। যেগুলো আছে সেখানে মেলা থাকে সারা বছর। ওয়ার্ড ভিত্তিক একাধিক খেলার মাঠ তৈরি এবং শিশু কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

১৯. উদ্যোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিঃ

সিলেটের প্রচুর তরুণ তরুণী আউট সোর্সিং করে। এই সেক্টরে তাদেরকে আরও দক্ষ ও সুযোগ সুবিধা তৈরির ব্যবস্থা এবং তারা যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলোর সমাধান করা।
নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ব্যবস্থা, প্রারম্ভিক পর্যায়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাকে তাদের ব্যবসার বিকাশে প্রযুক্তিগত সেবা, প্রাথমিক তহবিল, পরামর্শ, নেটওয়ার্ক এবং বাজার সংযোগে সহায়তা করা।

২০. নগরীর তারের জঞ্জাল পরিস্কারঃ

নগরীর রাস্তাঘাটে ইলেকট্রিক, ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের তারের প্যাঁজগোজের কারণে নগরীর সৌন্দর্য্য অনেকটাই ম্লান। এবিষয়টি নিয়ে আপনার ভাবনা আমরা জানতে চাই।

২১. প্রযুক্তির সিলেটঃ

নগরের ভেতর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বাসস্টেশন ও রেলস্টেশন বিনামূল্যে ওয়াই ফাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একটি ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হবে। নাগরিক সমস্যা জানানো, সেবা সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-সমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে। সকল সেবাসমূহকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল করা হবে এবং ই-সেবা চালু করা হবে। নগরীর মানচিত্র বা সিটি ম্যাপ করা হবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় বড় মানচিত্র টানানো হবে। সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় একটি তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

‘আমার সিলেট’ নামক একটি অ্যাপ নির্মাণ করা হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা যেখানে মেয়রের সাথে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য আলাদা গাইড ম্যাপ বা নেভিগেশন ম্যাপ করা হবে। নগরীর দর্শনীয় স্থান, এলাকাসমূহকে দৃষ্টিনন্দন করা হবে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ইশতেহার ঘোষনা অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক,সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল,সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন,জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান,মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ,সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ , স্থানীয় ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।