সিনেমায় যেমন ভিলেন আছে, সামাজিক আন্দোলন করতে গিয়েও তেমন ভিলেন পেয়েছি- সিলেটে ইলিয়াস কাঞ্চন

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

 

সিনেমার পর্দায় যেমন ভিলেন আছে সামাজিক আন্দোলন করতে গিয়েও তেমন ভিলেন পেয়েছি বলে মনমশব্য করেছেন নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সোমবার (৫ জুন) সকাল ১০টায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের হলরুমে অনুষ্ঠিত নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা’র উদ্যোগে গাড়ি চালকদের নিয়ে ‘যত গতি তত ক্ষতি’ শীর্ষক এক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, আমি যখন নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতাম তখন যেমন আমার পিছনে ভিলেন থাকতো এখনও আমার পিছনে ভিলেনরা রয়েছে , যারা ব্যক্তি স্বার্থে আমাকে আপনাদের শত্রু বানাচ্ছে। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২০১৮ সালের আইন নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমি সবসময় আপনাদের পক্ষে নিরাপদ সড়কের পক্ষে কাজ করে চলেছি। আমি সরকারের কাছে ১১১টি সুপারিশ করেছি। এরমধ্যে আপনাদের সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা সেবাসহ নানা বিষয় রয়েছে। আপনারা সড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের যে দাবী করেছেন এটাও আমার সুপারিশে রয়েছে। এছাড়া আমি প্রতি ত্রিশ কিলোমিটার অন্তর অন্তর কোমা সেন্টার স্থাপনেরও দাবী করেছি।

নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হক কামালের সভাপতিত্বে ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিশুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট ইমরুল আহসান।

সেমিনারের প্রথম সেশন শুরু হয় সকাল ১০টায়। এসময় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কিছু সংখ্যক পরিবহন শ্রমিক এই সেমিনারে অংশগ্রহন করতে অনিহা প্রকাশ করেন এবং তাদের বদ্ধমুল ধারনা যে, ইলিয়াস কাঞ্চন পরিবহন শ্রমিকের শত্রু। ইলিয়াস কাঞ্চন শুধু চালকদের ফাসি চায়। এ কারণে নিসচার আয়োজনে কোন সচেতনমুলক কর্মসূুচিতে তারা অংশগ্রহন করতে রাজি নন। পরবর্তিতে পরিবহন সেক্টরের নেতৃবৃন্দদের সহযোগিতায় সেই সব পরিবহন শ্রমিক/চালক হলরুমে প্রবেশ করেন এবং তাদের বক্তব্য তারা নিসচা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সামনে তুলে ধরেন।

সবার বক্তব্য শোনার পর সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এসময় তিনি বলেন আমি একজন চলচ্চিত্র নায়ক। আমার সিনেমায় যেমন আমি ভিলেন পেয়েছি। তেমনি ভাবে বাস্তব জীবনে সামাজিক আন্দোলন করতে গিয়েও আমি ভিলেন পেয়েছি। তিনি এই কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮” নিয়ে চালকদের মাঝে যে অপপ্রচারটি রয়েছে যে, আমি চালকদের ফাসি চাই, আমি চালকদের ঘাতক বলি।

এবং আমি চালকদের ফাসিতে ঝুলানোর জন্যই এই আইনের প্রস্তাব করেছি। আসলে বাস্তবতা হলো এগুলো কোনটাই সত্যি না। এটি সম্পুন্য মিথ্যে এবং গুজব।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, প্রতীক্ষার পর বিভিন্ন মহলের মতামত, অনেক গবেষণা ও ব্যাপক আকারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সবাই পেয়েছে “সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮”। কাউকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই আইন নয়। এই আইনে উল্লেখ আছে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে হত্যা করে। তাহলে তাকে এই আইনে নয় অন্য আইনে নিয়ে তদন্ত করে। তদন্তে যদি প্রমানিত হয় এরপর যারা যারা জরিত তাদের শাস্তি দেয়া হবে।

 

এই আইনে বলা হয়েছে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পক্ষ। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্ত করা হবে তদন্তের পর যারা দায়ী হিসেবে প্রমানিত হবে তাদেরই শাস্তি হবে।
মুলত শ্রমিকদেরকে এই আইন সম্পর্কে সকল তথ্য তুলে ধরে তাদের সঠিকভাবে বুঝানো হয়না বলে এবং কেউ কেউ সঠিক তথ্যের বদলে মিথ্যা অপপ্রচার গুজব রটিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে আজ আমাকে আপনাদের সামনে শত্রু বানানোর একটা অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

 

ইলিয়াস কাঞ্চন আরো বলেন, যদি আপনারা এ আইন সঠিকভাবে মেনে চলেন, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আর যদি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরেই আসে, তাহলে আইনে জরিমানার ভয় কিসের? আপনি অপরাধ করলে আপনার জেল–জরিমানা হবে। আপনি যদি অপরাধ না করেন, তাহলে কেন আপনার জেল–জরিমানা হবে? আমি ইলিয়াস কাঞ্চন নিজেও গাড়ি চালাই। আমি যদি কোন অপরাধ করি এই আইনে আমারও শাস্তি হবে। তিনি উপস্থিত চালাকদের মাঝে প্রশ্ন করেন, আমি যদি চালকদের ক্ষতি চাইতাম আমি কি নিজে কখনো গাড়ি চালাতাম? আমি নিজেওতো একজন চালক। তাহলে কি আমি আমার ফাসি চাই?

 

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট ওসমানীনগর উপজেলার চেয়ারম্যান শামীম আহমদ ভিপি, সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো: সেলিম, এসএমপির এসি ট্রাফিক আতাহারুল ইসলাম, বিআরটিএর সিলেটের উপ পরিচালক মোঃ শহিদুল আযম,

 

সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, জেলা পুলিশের ডিআইও মো: নুরুল ইসলাম, সিলেট জেলা বাস মিনি বাস কোচ ও মাইক্রোবাস এসোসিয়েশন এর সভাপতি হাজি ময়নুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুল মুহিম, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন, নিসচা সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি এম ইকবাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি পাবেল প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।