স্কটিশ পার্লামেন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাউসা কৃতি সন্তান মাননীয় ছায়া মন্ত্রী ফয়ছল হোসেন চৌধুরী এমপি
আলী হাছান লিটনঃ
বাংলাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র, স্কটল্যান্ড পার্লামেন্টে ইতিহাসের প্রথম বাঙ্গালী সংসদ সদস্য, স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টের আইন প্রণেতা ও মাননীয় ছায়া মন্ত্রী, ফয়ছল হোসেন চৌধুরী এমবিই, বিশ্বের দরবারে দেশ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমাদের এলাকার সন্তান বাংলাদেশ পেড়িয়ে ইউরোপের স্কটল্যান্ড পার্লামেন্টে ইতিহাসের প্রথম বাঙ্গালী হিসেবে লেবার পার্টির প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ও মাননীয় ছায়া মন্ত্রী হয়ে স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ফয়ছল হোসেন চৌধুরীর জন্ম হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বদরদি গ্রামে। তার বাবার নাম গোলাম রব্বানী চৌধুরী এবং মাতার নাম রোকেয়া চৌধুরী। হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরীর নাতি, বাউসা ইউনিয়নের বিশিষ্ট সমাজ আলহাজ্ব জুনেদ হোসেন চৌধুরীর বড় ভাই।
ফয়ছল হোসেন চৌধুরী পিতা মাতার সাথে তরুণ বয়সে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। পরিবারের সাথে প্রথমে ম্যানচেস্টার এবং পরে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় বসবাস শুরু করেন। তিনি এডিনবরা শহরের নিউ টাউন এলাকায় বেড়ে ওঠেন। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাবা শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বড় ছেলে হিসেবে তরুণ বয়সেই পরিবারের হাল ধরেন ফয়ছল চৌধুরী।
তখন থেকেই যুক্ত রয়েছেন পারিবারিক ক্যাটারিং ব্যবসায়। ব্যবসার পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী তরুণ বয়সেই শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। ২০১৭ সালে ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হয়ে এডিনবরা সাউথ ইস্ট আসনে লড়াই করেন ফয়ছল চৌধুরী।
এর আগে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রশ্নে ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডে গণভোটের সময় ‘বাংলাদেশিজ ফর বেটার টুগেদার ক্যাম্পেইন’ এর সমন্বয়কারী ছিলেন ফয়ছল চৌধুরী । মূলধারার রাজনীতিতে স্থানীয় বাংলাদেশিদের যুক্ত করতে তার উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
মামা ড. ওয়ালী তসর উদ্দিনের আদর্শে অনু প্রাণিত হয়ে কমিউনিটি ওয়ার্কের হাতেখড়ি হয় ফয়ছল হোসেন চৌধুরীর। দীর্ঘ দিন ধরে এডিনবরা অ্যান্ড লোদিয়ান রিজিওন্যাল ইকুয়ালিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশি কমিউনিটি ছাড়াও বিভিন্ন সংখ্যালঘু কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে ও ভূমিকা রয়েছে তার।
করোনা মহামারিতে এডিনবরায় বসবাসরত অভাব গ্রস্ত এথনিক মাইনরিটি পরিবার গুলোর মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণের এক ব্যতিক্রম ধর্মী উদ্যোগ হাতে নেন ফয়ছল চৌধুরী। তার প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণে এলরেক এর উদ্যোগে ‘ফুড সাপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় প্রতি সপ্তাহে পঞ্চান্ন থেকে ষাটটি অসহায় পরিবারকে জরুরি খাবার পৌঁছে দেয়া হয়। তার এই কাজ স্থানীয় কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
গত বছরের ৬ মে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরার লোথিয়ান অঞ্চল থেকে স্কটিশ লেবার পার্টির প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফয়ছল চৌধুরী।
গ্রেট ব্রিটেনে মূলধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিকে যুক্ত করতে ফয়ছল চৌধুরী অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি স্কটিশ মূলধারার নানাবিধ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি স্কটল্যান্ডের চেয়ার, এডিনবরা স্লেভারি অ্যান্ড কলোনিয়াল লেগাসী রিভিউ গ্রুপের সদস্য, মিউজিয়াম অ্যান্ড গ্যালারিস স্কটল্যান্ডের বোর্ড মেম্বার, ইএসএমএসের ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডাইভার্সিটি টাস্ক ফোর্সের অ্যাডভাইজার এবং ড্রামন্ড হাই স্কুল প্যারেন্ট কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। স্কটল্যান্ডের বৃহত্তম মাল্টিকালচারাল আয়োজন এডিনবরা মেলার প্রতিষ্ঠাকালীন ডিরেক্টর ফয়ছল চৌধুরী গিল্ড অব বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টার ইন স্কটল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সমিতি এডিনবরার চেয়ারম্যান, কাউন্সিল অব বাংলাদেশিজ ইন স্কটল্যান্ডের (সিবিএস) সাধারণ সম্পাদক এবং যুক্তরাজ্য নবীগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্টের ট্রাস্টি মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সাইক্লোন আপিল এবং ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সাইক্লোন সিডর আপিলে তিনি তহবিল সংগ্রহ ছাড়াও দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট কলম্বাস হসপাইস’ লিউকেমিয়া ও ক্যান্সার আপিলসহ ‘ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন’ এর জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন ফয়ছল চৌধুরী।
স্কটিশ মূলধারায় বাংলাদেশি কমিউনিটির ভাবমূর্তি তুলে ধরতে ফয়ছল চৌধুরী সব সময় সদা তৎপর থাকেন। তার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত স্কটল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়, যার পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল সিটি অব এডিনবরা কাউন্সিল। এ উপলক্ষ্যে সেদিন স্কটিশ পার্লামেন্টে একটি পার্লামেন্টারি মোশন ও উত্থাপন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ সমিতির উদ্যোগে ২০১২ সালে স্কটিশ পার্লামেন্টে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।
বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ২০০৪ সালে ব্রিটেনেররাণী কর্তৃক সম্মানসূচক ‘মেম্বার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার’(এমবিই) খেতাবে ভূষিত হন ফয়ছল চৌধুরী।
এছাড়া ২০০৬ সালে ব্রিটিশ বাংলাদেশি টেলিভিশন ‘চ্যানেল এস’ কর্তৃক ‘কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড’সহনানা পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে।