নগরজুড়ে জুবাইদা রহমানের পোস্টার: শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে ঘিরে সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে চলছে নানামুখী আলোচনা।

 

১৭ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরায় তাঁকে স্বাগত জানিয়ে সিলেটে আনন্দমিছিলের পর নগরজুড়ে পোস্টারিং হয়েছে। বেনামি এই পোস্টারে তাঁকে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাওয়া হয়েছে।

 

স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সিলেটের মেয়ে জুবাইদা রহমান সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হলে সেটা দলের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ হবে।

 

কিন্তু জুবাইদার সম্মতি ছাড়া ‘বেনামে’ যদি তাঁর প্রার্থিতার বিষয়ে পোস্টার সাঁটিয়ে প্রচারণা চালানো হয়, তবে বুঝতে হবে, এখানে অন্য কোনো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ আছে।

 

এদিকে জুবাইদা রহমানকে নিয়ে সিলেটে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন যুক্তরাজ্য ভ্রমণ শেষে ১৮ দিন পর দেশে ফিরে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীও একই ইঙ্গিত দেন।

 

তিনি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাজারো কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে নিজ বাসভবনের সামনে মতবিনিময়কালে বলেন, লন্ডন সফরকালে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সিলেট-১ (নগর-সদর) আসনে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করেছেন। তারেক রহমান প্রার্থী না হলে জিয়া পরিবারের কেউ যেন প্রার্থী হন, সে দাবিও জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার রাত থেকে নগরীর সুবিদবাজার, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, সোবহানীঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর দেয়াল ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে একের পর এক পোস্টার লাগানো হয়।

পোস্টারে শুধু ডা. জুবাইদা নন, আছেন জিয়াউর রহমান , খালেদা জিয়া  ও তারেক রহমান এর ছবিও।

এতে লেখা, “বাংলাদেশের অহংকার, সিলেটবাসীর গর্ব ডা. জুবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১ এর সাংসদ হিসেবে, আমরা অবহেলিত, বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই।”

এই পোস্টারগুলো ঘিরে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গসংগঠনের ভেতরেও শুরু হয়েছে নানান আলোচনা ও জল্পনা।

 

তবে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা কেউই এ উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি করছেন।

 

সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, “ডা. জুবাইদা রহমান জিয়া পরিবারের সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন এবং বৃহত্তর সিলেটের গর্ব। রাজনীতিতে আসা বা নির্বাচনে অংশ নেওয়া তার অধিকার।

 

কিন্তু রাতের আঁধারে, কারো নাম বা সংগঠনের পরিচয় ছাড়া পোস্টার লাগিয়ে এমন একটি দাবি উপস্থাপন করা—সেটা আমাদের কাছে শিষ্টাচারবহির্ভূত ও বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “পোস্টারগুলো কে লাগিয়েছে, কেউই স্বীকার করছে না। এ ধরনের প্রচারণা আইনগত দিক থেকেও প্রশ্নবিদ্ধ।”

নামবিহীন পোস্টারের মাধ্যমে এমন একটি রাজনৈতিক বার্তা প্রচার করা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, এটি একটি ‘টেস্ট কেস’ হতে পারে—সিলেটে ডা. জুবাইদা রহমানের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের একটি প্রচ্ছন্ন কৌশল।

আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি দলীয় অন্তর্কোন্দল বা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কোনো মহলের একক প্রচেষ্টা।

ডা. জোবাইদার বেনামি পোস্টার সাঁটানোর বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘ডা. জোবাইদা একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান।

 

তাছাড়া তিনি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিনী এবং জিয়া পরিবারের সদস্য। এই স্বনামধন্য ব্যক্তির নামে সংগঠনের পরিচয়হীন সিলেট-১ আসনে প্রার্থী চাই দাবি করে তার ছবি দিয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে শহরে। আমি মনে করি এই পোস্টার যে বা যারা সাঁটিয়েছেন তাতে তাকে অসম্মান করা হয়েছে।’

 

তিনি বলেন, তিনি যদি নির্বাচন করতে চান তাহলে পোস্টার লাগবে নাকি। ব্যক্তি স্বার্থে কোনো মহল এই কাজ করেছে। ভবিষ্যতে জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যকে নিয়ে তাদের সম্মান ক্ষুণ্নের কাজ না করার আহ্বান জানান তিনি।

 

আর বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, এটা কোনো বিষয় হলো? এরকম একটা পোস্টার নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।