ট্রাম্পের হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছে না গাজাবাসী

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

মার্কিন জিম্মিদের মুক্তি দিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার জনগণকে হুমকি দিয়েছেন। গত বুধবার রাতে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, যদি জিাম্মদের আটক রাখে, তবে গাজার সব বাসিন্দা মারা যাবে।

তবে ট্রাম্পের এ হুমকিকে কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না গাজাবাসী। তারা বলছেন- আমাদের হারানো আর কিছুই নেই। খবর আল-জাজিরার।

 

গাজার ৫৯ বছর বয়সি এক ব্যবসায়ী ইয়াসির আল-শারাফা আল জাজিরাকে বলেন, আমি এসব হুমকিকে আর ভয় পাই না। কারণ গাজার অনেক মানুষের মতো আমিও বিশ্বাস করি- আমার হারানোর কিছুই নেই।

তিনি বলেন, আগে পোশাক ব্যবসায়ী ছিলাম। আমার একটি বড় দোকান, ছয়তলা একটি ভবন, একটি গাড়ি এবং গাজা সিটির তেল আল-হাওয়ায় স্টক রাখার জন্য গুদাম ছিল।

বছরের পর বছরের কঠোর পরিশ্রম এসব করেছিলাম। এখন সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, যুদ্ধ সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। যেদিকেই তাকাই, কেবল ধ্বংস, ধ্বংসাবশেষ আর দুর্দশা।

 

আমাদের শোক করার মতো আর কিছু বাকি আছে কি? আমি এখন শিশুদের জন্য ক্যান্ডি ও স্ন্যাকস বিক্রি করি।

যুদ্ধের সময় দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর, আল-শারাফা ও তার পরিবার যুদ্ধবিরতি শুরু হলে উত্তরে ফিরে আসেন, কিন্তু সেখানে এসে দেখেন এক বিধ্বস্ত এলাকা, যেখানে জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব।

 

তিনি বলেন, যদি আমরা জিম্মিদের হস্তান্তর করি, তবুও কিছুই বদলাবে না। তারা নতুন অজুহাত তৈরি করে যে কোনো সময় যুদ্ধ আবার শুরু করতে পারে। আমরা পুরো বিশ্ব থেকেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি।

 

৬২ বছর বয়সি জামিলা মাহমুদ ট্রাম্পের কথাগুলো শোনেননি, তবে বৃহস্পতিবার সকালে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য এ নিয়ে আলোচনা করেন।

 

তিনি বলেন, ট্রাম্পের হুমকিগুলো একটি মানসিক যুদ্ধের অংশ, যার উদ্দেশ্য গাজার মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা।

তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। না আছে ইন্টারনেট, না বিদ্যুৎ, না কোনো যোগাযোগের মাধ্যম।

 

প্রতিবারই একটা নতুন পরিকল্পনা আসে– কখনো বলে গাজার মানুষকে জোর করে সরিয়ে দেবে, কখনো বলে ইসরায়েল পুরো গাজা দখল নেবে। আর এখন তারা পুরো গাজার জনগণকে জিম্মিদের কারণে হুমকি দিচ্ছে।

 

জামিলা মাহমুদ জোর দিয়ে বলেন, যা কিছু ঘটুক না কেন, তিনি কখনোই গাজা ছেড়ে যাবেন না। আমার বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও আমাকে সরাতে পারবে না।

 

পরিবারের জন্য অল্প কিছু খাবার নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ৬০ বছর বয়সি আইমান আবু দাইয়েহ আল জাজিরাকে বলেন, তিনি শুধু চান ‘হামাস এখন জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিক – একটি চুক্তি গ্রহণ করুক, আলোচনা করুক, এবং বন্দিদের হস্তান্তর করুক, যাতে এই অন্তহীন দুঃস্বপ্ন শেষ হয়।’

 

এটাই একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ… আমাদের অবস্থান দুর্বল, আর কেউ আমাদের পাশে নেই।

 

তবে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, শুধুমাত্র জিম্মিদের হস্তান্তর করলেই কি ট্রাম্প ও ইসরায়েলের জন্য যুদ্ধ শেষ হবে? যদিও এটি ভবিষ্যতে যুদ্ধকে কিছুটা কম বিধ্বংসী করতে পারে।

 

আইমান আবু দাইয়েহ বলেন, আমরা ৫০ হাজার মানুষ হারিয়েছি। আমার দুই ছেলে মারা গেছে– একজন ২০২৩ সালের অক্টোবরে, আরেকজন ডিসেম্বর। তারা দুজনই তরুণ ছিল।

আমার বাড়িটিও ধ্বংস হয়েছে। আমরা যথেষ্ট ক্ষতি ও দুর্ভোগ সহ্য করেছি। আমাদের বিষয়ে আরব দেশগুলো নীরব, ইউরোপের দেশগুলোও নীরব।

 

তিনি বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্যের কোনো মূল্য নেই। আমার মনে হয়, সে শুধু হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এসব হুমকি দিচ্ছে। তাদের যা করার বাকি, তা হলো আমাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।