গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দির জব্দকৃত ৭ কোটি টাকার পাথরলুট

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দির লুটপাট করা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথর প্রাথমিকভাবে স্থানীয় প্রশাসন জব্দের পর সেটির নিরাপত্তা ও পাহারায় পুলিশ, গ্রাম পুলিশ, আনসার নিয়োজিত ছিলো। জব্দকৃত পাথর পরবর্তীতে সঠিকভাবে পরিমাপের জন্য খনিজ সম্পদ ব্যুরো এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পরিমাপ করেন।

এর আগে জব্দকৃত পাথর পরিমাণ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার খনিজ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

কিন্তু ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় অফিসের অফিসাররা অফিসিয়াল ফর্মালিটিজের কারণে গোয়াইনঘাটে আসতে কালক্ষেপণ ঘটেছিলো। পরবর্তীতে খনিজ সম্পদ ব্যুরো এর অফিসার ও সার্ভেয়ারদের পরিমাপের ভিত্তিতে ডিসি অফিস ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় নিলাম কার্যক্রম শুরু করে।

পুরো প্রক্রিয়াতে প্রায় দুই মাসের অধিক সময় কালক্ষেপণ হয়। এই সময়ে সকল পাথর লুটপাট হয়ে গেছে মর্মে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফেনাইকোনা গ্রামের মদরিছ আলী নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন কেবিনেট ডিভিশনে, জনপ্রশাসনে, খনিজ মন্ত্রণালয়সহ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। বিষয়টি তদন্তাধীন।

জানা যায়, পাথর লুটের সাথে উপজেলা প্রশাসন, ইউএনও, এসিল্যান্ড কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, জানিয়েছেন গোয়াইনঘাটের সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি জানান, গোয়াইনঘাট উপজেলায় বেশিদিন ছিলাম না। তবে যতদিন ছিলাম চেষ্টা করেছি নায্যতা নিশ্চিত করার। স্বচ্ছভাবে চলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মদরিছ সাহেব ব্যক্তিস্বার্থে এভাবে আমাকে হয়রানি করবে বিষয়টি কষ্টকর ও পীড়াদায়ক।

মদরিছ সাহেব যতোবার আমার অফিসে গিয়েছেন ততোবার মার্জিতভাবে তাঁর বিষয় শুনেছি। কিন্তু তাঁর আবদারগুলো তো কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়।

তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষকে বালুমহাল, পাথরমহাল এগুলোর লীজ নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর ইউএনও অফিস, ডিসি অফিস, কমিশনার অফিস এবং মন্ত্রণালয়গুলোতে দৌড়ঝাঁপ করে। লীজ, কেস ও রীট কার্যক্রমে ব্যর্থ হয়ে সেসবের ঝাল/জ্বালা কেনো ইউএনও -এর উপর মেটাতে হবে ?

তৌহিদুল ইসলাম জানান, মদরিছ সাহেব তো সোজা ঘটনা ব্যক্তিস্বার্থে উল্টায়ে পাল্টায়ে অফিসারদের বিপদে ফেলে। এর আগে হাদারপাড় বাজার ইস্যুতে আগের ইউএনও দুইজনকে বিপদে ফেলেছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগকারী ব্যক্তি মদরিছ বিএনপির নাম ধারণ করে বিছনাকান্দির বিভিন্ন স্পটে এসিল্যান্ড ও পুলিশ-বিজিবি সহ পরিচালিত অভিযানে জব্দকৃত পাথর নিলাম নিয়ে ঝামেলা তৈরি করছে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে বিএনপি নামধারী মদরিছ ৫ই আগস্টের পর মামলা বাণিজ্য করে অফিসারকে রীতিমতো হয়রানি করছে। ওয়ান ইলেভেন টাইমে (২০০৭-২০০৮) ধান্ধাবাজি এবং আওয়ামী লীগ আমলে হাদারপাড় বাজার ওয়াকফ-এর নামে দখল করে চাঁদাবাজি করে বিশাল টাকা কামাচ্ছে বিগত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে।

পাথর কোয়ারি, বালু মহাল লীজ নিয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ অঞ্চলে মামলা করে অচলাবস্থা তৈরি করে। এরপর দিনের পর দিন বিনা লীজে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রচেষ্টা করেছে।

মদরিছ সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী, প্রধানমন্ত্রীর সচিব ও সিলেটের সাবেক ডিসি (২০০৮-০৯ সালের) সাজ্জাদুল হাসানের সাথে সিন্ডিকেট গড়ে কোয়ারি লীজ নিতো। সে নানা সময়ে অবৈধ তদবিরে এসে ব্যর্থ হয়েছে।

বিছনাকান্দির পাথর লুটের ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা পাথর জব্দ করে সাথে সাথে বিএমডিকে জানিয়েছি।

জব্দকৃত পাথর পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জিম্মায় রাখা হয়েছে। পাথর নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বিএমডি ফর্মালিটিজের অপেক্ষা না করে জব্দকৃত পাথর তড়িৎগতিতে নিলাম করে দিলে পাথর লুট কিছুটা আটকানো যেত।

তিনি বলেন, বিছনাকান্দির লুট হওয়া পাথর বেশিরভাগ আশপাশের বাড়িতেই ছিল। উপজেলা প্রশাসনের জব্দ করা পাথর লুটের ঘটনায় এলাকারও দায় রয়েছে।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, গোয়াইনঘাটের সাবেক ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম খুবই ভালো মানুষ। বিছনাকান্দির জব্দকৃত পাথরলুট নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সেই পাথরগুলো এখনো জায়গায় রয়েছে।

তারা জানান, ব্যক্তিস্বার্থে যারা পাথর-বালু লুটপাট করতে পারেনি, যারা দেশে-বিদেশের লোকজনের কাছ থেকে বালুমহাল-পাথরমহাল ইজারা দেয়ার কথা বলে অর্থ নিয়ে সরকারি দপ্তরে দপ্তরে তদবির-ঘুরাঘুরির অভিনয় করে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি আইন প্রয়োগ জরুরি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।