ইভিএম কেনায় অনিয়ম ৪০০০ কোটি টাকার ক্ষতি ব্যবস্থা নেবে দুদক

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনে অর্থ রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অভিযোগে রোববার নির্বাচন কমিশনে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। এ সময় ১ হাজার ৫০০টির বেশি সংখ্যক মেশিনের হদিস পায়নি সংস্থাটি।

একইসঙ্গে রাষ্ট্রের ৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলেও জানা গেছে। এসব বিষয় নিয়ে আভিযানিক ওই দলটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে, যার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেবে দুদক। গতকাল সোমবার সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো ব্যক্তিগণ কোন ভিত্তিতে মেশিনগুলোকে যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটিও কমিশনের দৃষ্টিগোচরে আনা আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।

অভিযানে ১ হাজার ৫৯৯টি মেশিনের কোনো হদিস না পাওয়ার কথা তুলে ধরে আক্তার হোসেন বলেন, মেশিনগুলো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে থাকা ৬১৮টি মেশিনের মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে কয়েকটি মেশিনের ‘অপারেশনাল ক্যাপাসিটি’ যাচাই করা হয়।

এতে মেশিনগুলোতে ত্রুটি দেখা যায়, যা নিম্নমানের মেশিন কেনার ইঙ্গিত দেয়। দুদক টিমের সঙ্গে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরাও মেশিনগুলো ‘মানসম্মত নয়’ বলে মতামত দেন।

ফলে কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক জাফর ইকবাল ও অন্য বিশেষজ্ঞরা কেন আগে ইভিএমকে ভোটের জন্য যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটিই এখন খতিয়ে দেখার কথা বলছে দুদক।

দুদক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, রোববারের অভিযানে সংগৃহীত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার পর ‘এনফোর্সমেন্ট টিম’ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে। বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটগ্রহণে এক যুগ আগে ইভিএম ব্যবহারের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক।

আওয়ামী লীগ সরকার ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও তার ঘোর বিরোধী ছিল বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য ছিল, যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে ব্যাপক কারচুপির সুযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলেও ২০২২ সালে দায়িত্ব নেয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ওই বছরের মে মাসে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কায়কোবাদসহ একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে ইভিএম দেখিয়ে ভোটগ্রহণে তা ব্যবহারের সম্মতি নেয় ইসি। ইভিএম মেশিনের কার্যক্রম দেখে ইসির সঙ্গে ২০২২ সালের ২৫শে মে মতবিনিময়ের পর ভোটে মেশিনগুলো ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন জাফর ইকবাল ও কায়কোবাদ।

সেদিন জাফর ইকবাল বলেছিলেন, ইভিএম নিয়ে ডেমনস্ট্রেশন পুরোটাই দেখেছি। তার ভেতরের খুঁটিনাটি, টেকনিক্যাল বিষয় যা আছে, তাও জেনে নিয়েছি।

সবশেষ আমাদের জন্য রাখা মেশিনটি খুলে দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কনভিন্সড হয়েছি। অত্যন্ত চমৎকার মেশিন।

ইভিএমের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলকেও যন্ত্রটি ব্যবহারের পক্ষে সায় দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি। আর বুয়েটের শিক্ষক কায়কোবাদ ইভিএমের প্রতি আস্থা রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এর প্রতিটি অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড, একজন ইচ্ছে করলে সেখানে পরিবর্তন করতে পারবে না।

কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে মেশিন লেভেলে আর কোনো কাজ নেই, আর ম্যানিপুলেশনের কোনো সুযোগ নেই। তাদের এই মতের ওপর আস্থা রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তখনকার সিইসি হাবিবুল আউয়াল।

এই কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা করে। তবে দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রস্তাবে সরকার সায় না দেয়ায় ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আট মাসের মাথায় গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আগের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

একইভাবে ‘নিম্নমানের ইভিএম মেশিন কিনে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ’ জমা পড়েছে সংস্থাটিতে। সেটিই এখন খতিয়ে দেখছে দুদক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।