৬০ হাজার বিমান টিকিট ব্লক করেছে সিন্ডিকেট

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিক ও ওমরাযাত্রীদের বিমানের টিকিট সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে চড়া দামে বিক্রি করায় চরম ভোগান্তির কবলে পড়েছেন যাত্রীরা। এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট সিন্ডিকেট বন্ধ, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাল্ক টিকিট বিক্রি, এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও মজুদদারি বন্ধের দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল অ্যাজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।

বিদেশগামী শ্রমিকদের স্বস্তি দিতে বাল্ক টিকিট বিক্রি ও মজুদদারি বন্ধ করে টিকিটের দাম নির্ধারণে এবং এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে বেবিচকসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ।

গতকাল রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি হোটেলে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও এয়ারলাইন্স কর্তৃক যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাল্ক টিকেট বিক্রি ও মজুদদারি বন্ধ করার দাবিতে আয়োজিত একসংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব দাবি জানান।

লিখিত বক্তব্যে আটাব সভাপতি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান অন্যতম বড় সমস্যা এয়ার টিকিটের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি। এই মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ নামবিহীন গ্রুপ টিকেট বুকিং।

কতিপয় মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্স তাদের পছন্দের কিছু এজেন্সির (সিন্ডিকেট) নামে কোনো পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র এবং প্রবাসগামী শ্রমিকদের কোনও প্রকার বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই শুধুমাত্র ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট দুই-তিন মাস অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে।

এভাবে টিকিট মজুদদারি করা হয় যার ফলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়, আসন সংকট দেখা দেয়, টিকিট মূল্য ২০ থেকে ৫০ শতাংশ, কখনও দ্বিগুণ তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং বিদেশগামী শ্রমিক, স্টুডেন্ট, প্রবাসীরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। গ্রুপ টিকিট বন্ধ করা হলে বিমানের টিকিট সংকট যেমন দূর হবে তেমনই কমবে টিকিটের দাম।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আটাবের পক্ষ থেকে ১৫টি সুপারিশও উত্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, সাবেক মহাসচিব জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দিপু, যুগ্ম মহাসচিব আতিকুর রহমান, উপ মহাসচিব তোয়াহা চৌধুরী, অর্থসচিব মো. সফিক উল্যাহ নান্টু, হাবের সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ শাহ সম্রাট, বায়রার সাবেক শীর্ষ নেতা মো. ফখরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে আকাশপথে টিকিটের নৈরাজ্য রোধে কতিপয় দাবি পেশ করা হয়, সিডিউল ফ্লাইট বৃদ্ধি করা, অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দ্রুত অনুমোদন দেওয়া ও ওপেন স্কাই ঘোষণা করা যেন সব দেশের এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহন করতে আগ্রহী হয়।

এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ভিসা, ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স ব্যতীত কোনো বুকিং করা যাবে না, সিট ব্লকের মাধ্যমে ফ্লাইটের ইনভেন্টরি ব্লক হয়ে যায়, যে কারণে মূল্য বাড়তে থাকে। এ ছাড়া কোনও ট্রাভেল এজেন্সির কাছে প্রকৃত চাহিদা না থাকলেও এয়ারলাইন্সের কাছে দুই লাইনের একটি ইমেইল করে কৃত্রিম ডিমান্ড তৈরি করে।

কৃত্রিম ডিমান্ডের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে এয়ারলাইন্সের ভ্রান্ত পলিসির কারণে। ট্রাভেল এজেন্সিদের কাছে ডিমান্ড না থাকা সত্ত্বেও পণ্য মজুত করার মতো এয়ার টিকিট মজুত করছে দেদারসে। এটা বন্ধ করতে হবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে ৬০ (ষাট) হাজারেরও অধিক সিট এয়ারলাইন্সসমূহ ব্লক করে রেখেছে। এ সিটগুলো এখনই ওপেন করে দিলে উদ্ভূত সংকট দূর হয়ে যাবে। এতে যাত্রীরা ন্যায্য দামে টিকিট কিনে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

 

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান না করতে পারলে সমস্যা আরও প্রকট হবে এবং যাত্রী সাধারণ উচ্চমূল্যে টিকিট ক্রয় করতে বাধ্য হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অতি দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। অন্যথায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করা হবে। এয়ারলাইন্স এর ডিস্ট্রিবিউশন পলিসি ওপেন রাখতে হবে।

জিডিএস/এনডিসি এ সিট সেল করার নির্দেশনা দিতে হবে এবং সব এজেন্সিকে বিক্রি করার সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন রুটে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ করা। ১০/২০ হাজার টিকিট দিয়ে দেওয়া হয় কোনও কোনও এজেন্সির কাছে এর মাধ্যমেই সিন্ডিকেটের উৎপত্তি।

এজেন্সি প্রতি সর্বোচ্চ সেল সিলিং নির্ধারণ করতে হবে। শ্রমিক ও ওমরাহ যাত্রীদের এয়ারলাইন্স ফরমেটে টিকিট প্রদান করতে হবে যেখানে ভাড়া, এজেন্সি বিবরণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। প্রকৃত মূল্য যাত্রীর দৃষ্টিতে আসবে এর ফলে নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দাম নিতে পারবে না। মূল্য উল্লেখ ছাড়া টিকেট দেওয়া যাবে না।

 

১৯৮৪ সালের বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ও বিধিমালা মেনে নিয়ন্ত্রণ করা। বাজেট এয়ারলাইন্সগুলো অল্প টাকায় যাত্রী পরিবহন করার ঘোষণা দিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ থেকে তারা বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে। বাজেট ক্যারিয়ারসংক্রান্ত বিধিমালা আছে কিনা না? না থাকলে সেটাও তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

তারা চাহিদা, ক্যাপাসিটি ও সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবে, সমাধান করবে। অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট ও এয়ারলাইন্স স্টাফদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।