সুরমা টাইমস রিপোর্ট : ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনায় নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। যত দ্রুত সম্ভব সেই পুকুর চুরির রহস্য উন্মোচনের ইঙ্গিত দেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিকাব আয়োজিত প্রথম মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সচিব এ ইঙ্গিত দেন। ‘ওয়াশিংটন দূতাবাসে মিলিয়ন ডলার চুরি, তদন্ত ফাইল গায়েব’- শিরোনামে গত জুনে প্রকাশিত মানবজমিন-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ জয় করেছে। কূটনৈতিক রিপোর্টার (বিশেষ প্রতিনিধি) মিজানুর রহমানের অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়ার দালিলিক প্রমাণ ছিল। সেই সঙ্গে তদন্ত ফাইল গায়েব করে দেয়ার অভিযোগ ছিল প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড জয়ী মানবজমিন-এর সেই রিপোর্ট প্রসঙ্গে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রিপোর্ট সাপেক্ষে তদন্ত হচ্ছে, যথাসময়ে এটা উন্মোচন করা হবে। অন্যদিকে ‘নির্বাচন ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতা/ সরকারের অসন্তোষ, সামনে ‘স্পেস’ নাও পেতে পারেন কূটনীতিকরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্টের নজরুল ইসলাম এবং ‘অনিয়মের দায়ে বন্ধ হয় আবার দুর্নীতির মাধ্যমে খুলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার’ শিরোনাম প্রচারিত প্রতিবেদনের জন্য টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে মাছরাঙার মাশরেক রাহাত পুরস্কার পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে অ্যাওয়ার্ড জয়ের প্রতিক্রিয়ায় মিজানুর রহমান তার এ অর্জনকে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে হতাহতদের প্রতি উৎসর্গ করেন। সেই সঙ্গে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা তথা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরের মতো পেশাদারিত্বের সঙ্গে তার কলম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। বলেন, কাজের এই স্বীকৃতি তাকে দেশ ও জাতির প্রতি আরও দায়বদ্ধ করেছে। জীবনভর তিনি এটি রক্ষার চেষ্টা করার করবেন বলেও জানান।
অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম, ডিকাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো ডিকাব মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/ মিশন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বহুপাক্ষিকতা-জাতিসংঘ, অর্থনৈতিক কূটনীতি, জনকূটনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য দেয়া হয়। তিন সদস্যের বিজ্ঞ বিচারক প্যানেলে ছিলেন-ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আলম চৌধুরী এবং ডিজিটাল রাইটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাংবাদিক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ডিকাব মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে অংশগ্রহণকারী কূটনৈতিক বিটের প্রত্যেক প্রতিযোগীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
গণমাধ্যমের সহায়তা চাইলেন পররাষ্ট্র সচিব: এদিকে অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, গণমাধ্যম সব সময়ই সরকারের উদ্যোগ ও কূটনৈতিক কার্যক্রমকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে, কূটনীতির জটিল বিষয়গুলো সহজভাবে উপস্থাপন করা এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছেন। এই সকল প্রচেষ্টা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের উদ্যোগ সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ১৯৭১ সালের বিজয়ের সঙ্গে আমাদের সামনে রয়েছে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সময়ের যুগান্তকারী মুহূর্তগুলো। এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই অভ্যুত্থানে আমাদের তরুণ সমাজের রাজনৈতিক এবং দেশপ্রেমের চেতনা পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছে। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, ’২৪-এর অভ্যুত্থান কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ছিল না, এটি ছিল আমাদের জাতীয় চেতনার পুনর্জাগরণের এক গৌরবদীপ্ত মুহূর্ত। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবিচার- এসব কিছুর বিরুদ্ধে এক সম্মিলিত প্রতিরোধ। একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধগুলোকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। আমাদের তরুণ প্রজন্মের অসামান্য সাহস আর দৃঢ়তা সেই সঙ্গে আপামর জনতার আকুণ্ঠ সমর্থনে সংঘটিত এই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান আমাদের ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে দিয়েছে। এটি বাস্তবায়নের পবিত্র দায়িত্ব এখন আমাদের সবার। তারই ধারাবাহিকতায়, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দেশকে স্থিতিশীল ও ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ঐক্যের উপর ভিত্তি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথ সুগম করতে সরকার কাজ করছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব ও নতুন আঙ্গিকে দেশ গড়ার অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক মহল এবং গণমাধ্যমের মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি। সচিব বলেন- আমরা দেখেছিলাম, গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের নির্ভীক প্রচারণা ও বস্তুনিষ্ঠ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জুলাই-আগস্টের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর খবর জনগণের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। গণমাধ্যমের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমেই জনগণের ব্যাপক সমর্থন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। ডিকাবের অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ও সময়োপযোগী প্রতিবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি বিস্তৃত করতে এবং বিভিন্ন বিষয়কে নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও ডিকাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে সচিব বলেন, কূটনৈতিক সাংবাদিকতায় আপনাদের নিষ্ঠা নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে। বিশেষভাবে, পররাষ্ট্র বিষয়ক তথ্য প্রকাশ ও সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে ডিকাব এই মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আপনাদের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠা শুধু দেশের জনগণকে সঠিক তথ্য জানাতে সহায়তা করছে না বরং বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও সুসংহত করছে। আনন্দঘন ওই মুহূর্তে সচিব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্য মুহূর্তেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, গুজব ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা অপরিহার্য। কূটনৈতিক সাংবাদিক হিসেবে আপনাদের তথ্য যাচাই, সূত্র পরীক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে সঠিকভাবে প্রতিবেদনে তুলে ধরতে হয়। আপনাদের সঠিক তথ্য উপস্থাপন ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদন গুজব ও ভুল তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যথা হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রভাবিত বা অপ্রয়োজনীয় কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। ডিকাবের সদস্যরা সরকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরার পাশাপাশি জটিল কূটনৈতিক বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে যে ভূমিকা পালন করেন, সেটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যাচাইকৃত তথ্য এবং অসত্য দাবির মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণে আপনাদের অবদান অত্যন্ত মূল্যবান। আমি আপনাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং ভবিষ্যতে আরও নিবিড় সহযোগিতার প্রত্যাশা করছি। সচিব বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশের অগ্রগতি ও আমাদের সম্মিলিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে এটি আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে। আমাদের সহযোগিতা এবং শুভকামনা সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে। তিনি ডিকাবের সদস্যদের অব্যাহত সাফল্য ও পেশাগত উৎকর্ষ কামনা করেন।
- সবার কাছে জমিয়তের দাওয়াত পৌঁছে দিন -মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
- নিম্নতম মজুরি ও শ্রমআইন বাস্তবায়নের দাবিতে স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের- সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত