সুহেল আহমদ গোয়াইনঘাট থেকে : সিলেটের বিছানাকান্দি সীমান্তে শীর্ষ চোরাকারবারি নুরুজ্জামান ওরফে নুরু বুঙ্গার ব্যাবসায় কোটিপতি। জানা যায়, বিছানাকান্দি সীমান্তে নুরু একক আধিপত্য বিস্তার করে বিগত দিনে কয়েক’শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি ওই টাকার স্তুপে বসে ছবি ও ভিডিও করে মজা নেন, আনন্দ ফুর্তি করেন। যতোদূর জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের হাদারপার গ্রামের মৃত: নাসির উদ্দীন ছেলে নুরুজ্জামান ওরফে নুরু মিয়া এক সময় ট্রাকটর চালক হলেও বর্তমানে চোরাচালান ব্যাবসায় কোটিপতি। পর্যটন এলাকা বিছানাকান্দি সীমান্ত দিয়ে তিনি প্রতি রাতে ও দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বিঘ্নে ভারত থেকে চোরাই পথে মাদক, কাপড়, কসমেটিক, বিড়ি, চিনিসহ নানান ধরণের ভারতীয় পণ্য দেশে ঢুকিয়ে থাকেন। যা থেকে সরকার বিরাট অংকের রাজস্ব হারায় প্রতিদিন। এছাড়া তার নামে বৈধ ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদাবাজি, প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও লাইনের টাকা কালেকশনসহ নানা ধরণের অভিযোগ উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। যদিও প্রশাসন সব সময়ই চোরাকারবারিদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এবং তাঁরা এই ধরনের কোন চাঁদাবাজি’র খবর পেলে তাদের দারস্থ হয়ে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিছানাকান্দি সিলেট সীমান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা হওয়া স্বত্ত্বেও অজানা শক্তি বা খুঁটির জোরে নুরু’র মতো চোরাকারবারিরা দেশের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকে, এমন প্রশ্ন স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর। একাধিক ব্যবসায়ীর দাবী, ‘আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে মাল আনি, তারপরও নুরুকে কয়েক ধাপে টাকা দিতে হয়।’
হাদারপার বাজারের শাহাবুদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে বিশাল সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন চোরাকারবারি নুরুজ্জামান ওরফে নুরু মিয়া। ওই সাম্রাজ্যেই চোরাকারবারি নুরুর অফিস ও বাসা। অফিসে বসেই বিছানাকান্দি সীমান্তের চোরাকারবারি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন তিনি। বিভিন্ন লাইনের টাকা কালেকশনের কাজে তাকে সহযোগিতা করেন চোরাকারবারি নুরু’র সহযোগী মোশাররফ ও আশরাফ ।
উল্লেখ্য, সিলেট সীমান্ত দেশের চোরাচালানের অন্যতম স্বর্গরাজ্য। সিলেট সীমান্তের প্রায় ৫০ টির বেশি পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিতভাবে চলে চোরাচালান। এসব চোরাচালানের সাথে জড়িত প্রায় হাজার খানেক লোক। মূলত: সিন্ডিকেট করে চলে এসব চোরাচালান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের কিছু লোকজন এর সাথে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। যদিও বিজিবি ও পুলিশ এসব অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করে আসছেন। বরং তাঁদের নাম ভাঙিয়ে কেউ কোন অপকর্ম করলে ওসব দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দিতে বৈধ ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন।
এছাড়া অভিযান পরিচালনার সময় প্রায়ই চোরাচালানকারি দুর্বৃত্তের হামলার স্বীকার হয় প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিট। সম্প্রতি অভিযান পরিচালনার সময় দায়িত্বরত সিআইডি পুলিশের উপর হামলা চালায় চোরাকারবারির প্রায় ৯০ জনের একটি দল। এতে নাজমুল নামে সিআইড পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের হাত ভেঙে যায়। ওই বিষয়ে দু’টি মামলা হলেও আটককৃত ট্রাক ও ট্রাক ড্রাইভার ছাড়া অন্য কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি জৈন্তাপুর থানা পুলিশ।
এ ব্যাপারে শীর্ষ চোরাকারবারি নুরুর সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না।
অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।