সিলেটের র্শীষ চোরাকারবারী “বুকাইর ” বুঙ্গা’র ব্যাবসায় কোটিপতি

সুরমা টাইমস রিপোর্টার : সিলেটের শীর্ষ চোরাকারবারী বুকাইর অল্প দিনে কোটিপতি।  বর্তমানে বুকাইরের চোরাচালান ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে।

প্রতিনিয়ত সীমান্তের বিভিন্ন পথ ব্যবহার করে বীরদর্পে চলছে তার চোরাচালানের নিরাপদ বাণিজ্য। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর (বরকতপুর) গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে নগরীর শাহজালাল উপশহরের মাওলানা আব্দুল বাসিতের ছেলে বুকাইর আহমদ।

খুব অল্প বয়সেই বুকাইর সিলেটের র্শীষ চোরাকারবারীদের তালিকায় নিজের জায়গা করে নেন। খুব ঠান্ডা মাথার কূটবুদ্ধি সম্পন্ন বুকাইর আহমদ মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই হয়ে গেছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক। গড়ে তুলেছেন তার শক্তিশালী চোরাকারবারীর সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের আশীর্বাদে কোটিপতি হয়েছেন  সিলেটের ওসমানীনগর থানার সবচেয়ে আলোচিত সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) শফিকুল ইসলাম।

 গত ৬/৭ বছরে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় চালিয়ে গেছেন তার চোরাচালান সাম্রাজ্য।

গত ২০২০ ইং সালের ( ২৬শে জুলাই ) র‌্যাব ৯ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ শওকাতুল মোনায়েম, সিনিয়র এ এস পি নাহিদ হাসান , ও এ এস পি ওবাইনের সমন্বয়ে গঠিত একটি আভিযানিক দল গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে সিলেট মহানগর পুলিশর শাহপরান থানাধীন মুরাদপুর থেকে ৭১ টি ভারতীয় চোরাই মোবাইলফোন,

ও একটি প্রাইভেট কারসহ বুকাইর আহমদ ও তার সহযোগী পলাশ আহমদকে আটক করে র‌্যাব। পরবর্তীতে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ । ঐ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে ।

এভাবে একাধিকবার র‌্যাব ও পুলিশের কাছে বন্দি হলেও খুব অল্প সময়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পুনরায় নিজের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন বুকাইর আহমদ।

বিগত ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈারাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও বুকাইরের সাম্রাজ্য ঠিকই চলছে। শুধু ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে নিয়ন্ত্রন করছেন চোরাচালান বাণিজ্য।

 চিনি থেকে শুরু করে ভারতীয় অবৈধ মোবাইলসহ সবকিছুর চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত বুকাইর আহমদ।

বর্তমানে চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করতে বেছে নেন কতিপয় কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাকে। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন সিলেট ওসমানীনগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) শফিকুল ইসলাম।

এস আই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত ( ৩রা নভেম্বর রবিবার ) দুপুর আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটের সময় সিলেট ওসমানীনগর থানাধীন তাজপুর কদমতলাস্থ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা ২৮০ বস্তা চিনিসহ একটি ট্রাক যার রেজি নং- ঢাকা মেট্রো-ট- ১৮-৮৫০৫, গাড়িটি আটক করেন ওসমানীনগর থানার এস আই শফিকুল ইসলামসহ তার সঙ্গীয় ফোর্সগণ।

এস আই শফিকুল বাদি হয়ে ৪জনকে এজহারভুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- (৩) ৪/১১/২৪, ধারা – 25B ( 1 ) ( b ) 25D The special Powers Act 1974.

এই মামলাটি এজহারভুক্ত করার আগ পর্যন্ত এস আই শফিকুল মোট ৬ জন লোককে আটক করেন। যার মধ্যে একজন প্রাইভেট কারচালক এবং ঐ কারের একজন যাত্রী। শফিকুল যে প্রাইভেট কারটি আটক করেন তার নং ঢাকা মেট্রো ১৪-২০৮।

সাদা রংয়ের এই প্রাইভেট কারচালকের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, এস আই শফিকুল ইসলাম চালক এবং তার যাত্রীকে দীর্ঘ ৮ ঘন্টা থানা হাজতে আটকে রেখে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করে তদন্ত সাপেক্ষে ভারতীয় চিনি চোরাচালানে তাদের কোন সম্পৃক্ততা না পেয়ে রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তাদের ছেড়ে দেন।

পরবর্তীতে ঐ গাড়ির ড্রাইভার দক্ষিণ সুরমাস্থ সিলাম নিবাসী আশিক মিয়া  ‘ সুরমা টাইমস ’ পত্রিকা অফিসে এসে কর্তৃপক্ষের নিকট একটি অভিযোগ দেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় ঐদিন আশিক মিয়া যখন থানা হাজতে ছিলেন তখন তিনি এস আই শফিকুল ইসলামকে বারবার অনুরোধ করেন যে, তার বাড়িতে একটিবার যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার জন্য। যে তিনি ওসমানীনগর থানা হাজতে আছেন ।

এতে এস আই শফিকুল কোন কর্ণপাত না করে উল্টো তাদের ধমক দিয়ে বলেন, তোদের এতো তাড়া কিসের?

পরবর্তীতে আশিক মিয়ার পরিবার বাহক মারফত জানতে পারে যে, তিনি ওসমানীনগর থানায় আছেন। তখন আশিক মিয়ার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও ভাই থানায় হাজির হয়ে এস আই শফিকুলের কাছে তাদের ছেলে নির্দোষ বলে দাবী করেন।

তখন ওসমানীনগর থানায় অবস্থান করছিল সিলেটের কুখ্যাত চোরকারবারী বুকাইর আহমদ। বুকাইর ড্রাইভার আশিকের মায়ের কাছে বলে যে, এস আই শফিকুলের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক আছে।

তোমরা কিছু টাকা খরচ করতে পারলে আমি তাকে ছাড়িয়ে করে দিতে পারবো, তা না হলে চোরাচালান মামলায় তোমার ছেলে জেলে যাবে। এতে তার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে ।

চোরকারবারী বুকাইয়ের কথায় আশিকের সহজ সরল মা বুকাইরকে বলেন, কত টাকা লাগবে। তখন বুকাইর ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।

পরবর্তীতে আশিকের অসহায় মা ৩০ হাজার টাকা দিতে পারবেন বলে বুকাইরের সাথে রফাদফা করেন। এবং বলেন বর্তমানে টাকা তো সাথে নেই, টাকা আমাদের বাড়ীতে রাখা আছে, টাকা আশিকের বাড়িতে থাকায় বুকাইর নিজে আশিকের মায়ের সাথে সিএনজি অটোরিক্সাযোগে এসে দক্ষিণ সুরমাস্থ সিলামে তাদের বাড়ী থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয়।

টাকা হাতে নিয়ে বুকাইর আশিকের মাকে এস আই শফিকুলের মোবাইল নাম্বার দিয়ে কথা বলতে বলে।

বুকাইর বলে যে, আপনি শফিকুল স্যারকে বলেন যে আমি ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি।

ঠিক এর মধ্যেই আশিক থানা হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে তার মাকে ফোন দেন এবং বলেন যে আমি থানা হাজত থেকে বের হয়েছি।

ড্রাইভার আশিক ছাড়া পাওয়ায় আশিকের মা আর এস আই শফিকুলকে ফোন দেন নি।

ড্রাইভার আশিক অভিযোগ করে বলেন যে, আমরা যখন থানা হাজতে ছিলাম, তখন এই বুকাইরকে এস আই শফিকুলের কাঁধে হাত রেখে হাটতে দেখেছি।

তার নাম যে বুকাইর তা থানা থেকে বের হয়ে আমার মায়ের কাছ থেকে জেনেছি।

এদিকে বিশ্বস্থ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এস আই শফিকুলের সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে সিলেটের শীর্ষ চোরাকারবারী বুকাইর আহমেদের।

বুকাইর তার নিজের চোরাচালানের পণ্য নিরাপদে গন্থব্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করে এস আই শফিকুলকে।

আর অন্যান্য চোরাকারবারীদের ভারতীয় অবৈধ পণ্য এস আই শফিকুলকে দিয়ে আটক করিয়ে কোনটা মোটা অঙ্কে রফাদফা করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। নতুবা এস আই শফিকুল তা আটক করে মামলা দিয়ে দেন।

একজন শীর্ষ চোরাকারবারী এবং ডজন খানেক চোরাচালানের মামলার সাথে জড়িত আসামী বুুকাইর আহমদের সাথে একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন দহরম-মহরম চিন্তিত করছে সচেতন সিলেটবাসীকে।

উল্ল্যেখ্য গত ( ৩রা নভেম্বর রবিবার ) দুপুর আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটের সময় সিলেট ওসমানীনগর থানাধীন তাজপুর কদমতলাস্থ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা ২৮০ বস্তা চিনিসহ ট্রাকটি আটকের পর খবর পেয়ে কয়েকজন গনমাধ্যমকর্মী যখন ঘটনার বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত জানার জন্য ওমানীনগর থানায় যান,

তখন চিহ্নিত চোরাকারবারী বুকাইরকে থানায় ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের মনেও নানান প্রশ্নের সঞ্চার হয় ।

অনেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে উঠে আসে চোরাকারবারী বুকাইরের ইশারায় এখন কোটিপতি এস আই শফিকুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে ওসমানীনগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর ( এস আই ) শফিকুল ইসলামের সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এসব বিষয় জানতে চাইলে এস আই শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে বুকাইরের ছবি পাঠাতে বলেন।

ছবি পাঠানোর পর তিনি ম্যাসেজ সিন করে বুকাইরকে কোনদিন দেখেননি এবং চিনেন না বলে সম্পূর্ন ঘটনা অস্বীকার করেন।

এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চিহ্নিত চোরাকারবারী বুকাইরের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করেন যে গত ( ৩রা নভেম্বর রবিবার ) তিনি ওসমানীনগর থানায় উপস্থিত ছিলেন ।

ওসমানীনগর থানায় তিনি কি কারণে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে বুকাইর বলেন ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ),এবং সার্কেল এস পি’ র সাথে উনার ব্যাক্তিগত কাজ ছিল।

ওসমানীনগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর ( এস আই ) শফিকুল ইসলামের সাথে তার সম্পর্ক এবং প্রাইভেট কার চালক আশিক,এবং আশিকের মায়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তা তিনি অস্বীকার করেন ।

উল্লেখ্য চিহ্নিত চোরাকারবারী বুকাইর আহমদ ও সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) শফিকুল ইসলামের থানার ভেতরে এবং বাইরে অন্তরঙ্গভাবে চলাফেরা ও কথা বলার ভিডিও চিত্র ‘ সুরমা টাইমস ’ কর্তৃপক্ষের নিকট সংরক্ষিত আছে।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।