সুরমা টাইমস ডেস্ক : ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের ভয়ঙ্কর শত্রু ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারী হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। দীর্ঘ নয় বছর আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘৯০ এর ৬ ডিসেম্বর এই দিনে ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে মুক্ত হয়েছিলো গণতন্ত্র। সেই অর্জিত গণতন্ত্রের চেতনায় আবারও ছাত্র-জনতা ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট এক হিংস্র ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ছিল গণতন্ত্রের ভয়ঙ্কর শত্রু। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দু:শাসনের অবসানের পর আবারও গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ পুনরুজ্জীবন এবং রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নিরলস সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দু:শাসনে ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুমসহ নানামাত্রিক নিপীড়ন নামিয়ে আনা হয়েছিল। দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে অত্যাচার-নির্যাতনের অক্টোপাশে আঁকড়িয়ে রাখা হয়েছিল। সারাদেশকে শ্বাসরুদ্ধকর কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। আজকের এ দিনে আমি ‘৮২ থেকে ’৯০ পর্যন্ত রক্তস্নাত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ স্মরণীয় দিনে আমি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্রের হেফাজতকারী দেশবাসীকে।
তারেক রহমান বলেন, ৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৯০ সালের এ দিনে দীর্ঘ ৯ বছরের রক্তস্নাত আন্দোলনের পর পতন ঘটেছিলো স্বৈরশাসনের। এরশাদ ‘৮২’র ২৪ মার্চ পেশাগত বিশ্বস্ততা ও শপথ ভেঙ্গে অস্ত্রের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র নস্যাৎ ও সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সাংবিধানিক রাজনীতির পথচলা স্তব্ধ করেছিলেন। যে সাংবিধানিক রাজনীতি ছিল বহুদলীয় ও বহুমাত্রিক, যার সূচনা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী এরশাদের দল আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সঙ্গে দীর্ঘ ১৬ বছর একত্রিত হয়ে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মানুষের মৌলিক মানবাধিকারকে ক্রমাগতভাবে হরণ করেছিল। তারা নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে মুছে দিয়েছিল। ৫ই আগস্ট এই অপশক্তিকে প্রতিহত করে ছাত্র-জনতার বিপুল তরঙ্গ। এই পরাজিত শক্তির যাতে পুনরুত্থান না ঘটে সেজন্য গণতান্ত্রিক শক্তিকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।
অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে দেশবাসী গণতন্ত্রের স্বর্ণদ্বার অতিক্রম করে। শুরু হয় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। এই দিনে গণতন্ত্রের দুশমনেরা পরাজিত হলেও আজও তারা চুপ করে বসে থাকেনি। গণতন্ত্রের জাতশত্রু আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে চক্রান্ত শুরু করে নিরবচ্ছিন্ন। তাদের মিলিত শক্তি গণতন্ত্রকে শক্তিশাল না করে বরং ক্রমাগত দুর্বল করতে থাকে। সর্বশেষ ২০০৯ সাল থেকে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার যৌথভাবে বাংলাদেশকে একদলীয় দু:শাসনের অরাজকতার মধ্যে ঠেলে দেয়। বারবার অপশক্তিগুলো গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করে আমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে। কিন্তু এদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ সে অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করেছে সব সময়।
তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্র বার বার হোঁচট খেয়েছে তার অগ্রযাত্রায়। কিন্তু এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ সকল বাধাকে অতিক্রম করে গণতন্ত্রের পথচলাকে নির্বিঘ্ন করেছে। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র শৃঙ্খলমুক্ত হয়। একদলীয় শাসন ও একতরফা নির্বাচনের হাত থেকে এদেশের জনসাধারণের মনে স্বস্তির ভাব ফুঁটে উঠেছে। মানুষ আশা করে-নাগরিক স্বাধীনতা আর কখনোই বিপন্ন হবে না, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোনভাবেই যাতে আর ফ্যাসিবাদের উত্থান না হয়, দেশ যেন গুম, গুপ্তহত্যা আর ক্রসফায়ারের নিষ্ঠুর যাঁতাকলের মধ্যে পতিত না হয়, রাষ্ট্র-সমাজের সর্বত্র যেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পায়। একদলীয় লুটেরা কর্তৃত্ববাদ আর যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য গণতন্ত্রকামী দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। স্বৈরাচার পতন দিবসে এটাই হোক আমাদের দৃপ্ত শপথ।