সিলেটের শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ক্যাডার হান্নান’ওরফে শুটার হান্নান এখনও অধরা
সুরমা টাইমস রিপোর্টার : সিলেটের রাজপথে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র প্রদর্শনকারী ভয়ংকর শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাডার হান্নান ওরফে শুটার হান্নান এখনও অধরা । তার ভয়ে তটস্থ গোটা সিলেটের মানুষ। সেই শুটার হান্নান বেশ কিছু দিন পলাতক থাকলেও বর্তমানে প্রকাশ্যে রয়েছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে।
সুত্র মতে, মেজরটিলা ফালগুনি আবাসিক এলাকায় তরিক মিয়ার মালিকানাধিন চান্দুর টিলাটি শুটার হান্নান দিন দুপুরে কাটছে বলে স্থানীয় সুত্র জানায়। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পূর্ব পর্যন্ত এলাকায় ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ছিল ক্যাডার হান্নান ওরফে শুটার হান্নান।
৪ঠা আগস্ট সিলেটের রাজপথে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। এ সময় মাঠের দখল নিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি ছুড়ে। ওইদিন সিলেটের রাজপথে একটি শর্টগান হাতে নিয়ে হাজির হয়েছিল শুটার হান্নান। মাথায় হেলমেট পরে রাজপথে ছিল বেপরোয়া। অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলিবর্ষণের ঘটনার দিন রাজপথে সশস্ত্র অবস্থায় থাকা শুটার হান্নান পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। গণমাধ্যমেও আসে তার ছবি। পরবর্তীতে প্রশাসনের তদন্তে অস্ত্র সহ শুটার হান্নানকে চিহ্নিত করা হয়। তবে ৫ই আগস্টে সরকার পতনের দিন থেকে শুটার হান্নান পলাতক ছিল। মেজরটিলার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতা ‘ক্যাডার হান্নান’ওরফে শুটার হান্নানকে খুঁজছিলো। প্রথম দিকে শুটার হান্নান গা ঢাকা দিলেও এবার এলাকায় অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে কয়েকটি সুত্র জানিয়েছে।
সিলেটের এমসি কলেজে ২০১৩ সালে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া দেন সেই আবদুল হান্নান ওরফে ‘ক্যাডার হান্নান’। এর পর ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি শনিবার রাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নগরীর মেজরটিলার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় শাহপরান মামলা হয়। শাহ্পরাণ থানার তালিকাভুক্ত আসামি শুটার হান্নান দীর্ঘদিন গোপনে চলাফেরা করেন। শুটার হান্নানের বাড়ি মেজরটিলার ফালগুনি এলাকার বাসিন্দা। এলাকায় সে অস্ত্রবাজ ও ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে মেজরটিলা বাজারে একটি অপরাধী গ্রুপ রয়েছে। জমি দখল, খাস জমি ও টিলা কর্তন,দোকান দখল কিংবা আধিপত্য বিস্তারে তাদের ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। মেজরটিলা এলাকা শাসন করতেন সিলেট জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। সরকারের শেষদিকে এসে জাহাঙ্গীরের কাছাকাছি ভিড়ে শুটার হান্নান । মূলত শেল্টার নিতে সে দলবল নিয়ে জাহাঙ্গীরের বলয়ে ঢুকে। এর আগে এলাকায় জমি দখল নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। এসব বিরোধকে কেন্দ্র করে সব সময় মেজরটিলা এলাকায় মহড়া দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করতো। শুধু তাই নয়, এলাকায় ছিনতাই, মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে সে পরিচিত শুটার হান্নান। কেউ ভূমি দখলে নিতে হলে তার গ্রুপকে ব্যবহার করে। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা অপরাধীরা মেজরটিলা,ফালগুনি,নুরপুর, ইসলামপুর, মোহাম্মদ পুর এলাকায় মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে । একই সঙ্গে বাসা দখল করে অসামাজিক কাজেও নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। এলাকাবাসী জানিয়েছেন ভয়ঙ্কর অপরাধী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে পারে না। যারাই প্রতিবাদ করেছেন- হামলার শিকার হয়েছেন। এলাকার লোকজন জানান- মেজরটিলার পাশেই হচ্ছে সিলেট এমসি ও সরকারি কলেজ। এর পাশে আলোচিত টিলাগড় পয়েন্ট। ফলে এ দু’টি কলেজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাতা এবং টিলাগড় দখলে রাখতে এর আগে নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে লড়াইয়ে অস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া ছিল শুটার হান্নান । এমসি কলেজে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনায়ও এসেছিল তার নাম। তখন রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টার থাকায় তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ওই সময় শাহ্পরাণ থানা পুলিশের মাঠ পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। ফলে শুটার হান্নান সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
এ ব্যাপার শুটার হান্নানের মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে সিলেট শাহপরান থানার ওসি মোঃ মনির হোসেন জানান,যারা অপরাধীর তালিকায় আছে তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম জানান, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।