সপ্তাহ পার এখনো অধরা সিলেটে সিআইডির ওপর হামলাকারীরা
স্টাফ রিপোর্টার::
এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও সিলেটে সিআইডি টিমের ওপর হামলাকারীদের ধরতে ব্যার্থ স্থানীয় প্রশাসন ।
ঘটনার পরদিন পলাতক আসামির বাড়ি থেকে হাতকড়া উদ্ধার করা হলেও জড়িত হামলাকারীদের কাউকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি থানা পুলিশ।
আর তাই এখনো অধরায় থেকে গেলো সিলেটে সিআইডি টিমের ওপর হামলাকারী সিলেটের কুখ্যাত চোরাকারবারিরা।
ঘটনার পরদিন অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেন সিআইডির এক কর্মকর্তা। তবে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার ৭দিন পেরিয়ে গেলেও পলাতক আসামি এবং হামলাকারীদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
আর চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় হামলাকারী চোরাকারবারিদের ধরতে না পারায় থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
এ বিষয়ের সার্বিক দিক জানতে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের ব্যাবহৃত মুঠোফনে কল দিলে তিনি ব্যাস্ত থাকায় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম এন্ড অপস্ ) শেখ মো সেলিমের সাথে ।
তিনি বলেন একটি অপরাধ সংগঠিত করে তো অপরাধি আর ঘটনাস্থলে থাকে না,তারা তো বর্তমানে পলাতক আছে । পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।তাদেরকে অচিরেই গ্রেফতার করতে আমরা সক্ষম হব বলে আমি আশাবাদী । তারপরও আপনি যখন ফোন দিয়েছেন আমি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বিষয়টি আরো গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য বলবো ।
এ বিষয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম, পিপিএম বলেন, ঘটনার পরদিন আমরা পলাতক আসামির বাড়ি থেকে হাতকড়া উদ্ধারে সক্ষম হয়েছি।
তবে পলাতক আসামি ও হামলাকারীদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। আসামিদের গ্রেফতারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মির্জা শাফায়েতের সাথে যোগাযোগ করে মামলার আসামীরা কেন আটক হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি চেষ্ঠার কোন ত্রুটি করতেছি না,কিন্তু আসামীরা পলাতক থাকায় অভিযান পরিচালনা করেও তাদের ধরতে পারছি না ,এটা আমাদের ব্যার্থাও বলতে পারেন। তবে আসামিদের গ্রেফতারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৩ই অক্টোবর) সিলেটের জৈন্তাপুরে ভারত থেকে একটি ডিআই ট্রাকে আসা চোরাই মালামাল ধরতে উপজেলার হরিপুরে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালায় সিআইডি টিম।
এসময় ধলাই মিয়া (১৯) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে চোরাকারবারি দলের ৮০/৯০ জন সদস্য সিআইডি সদস্যদের উপর হামলা চালায়।
মারপিট করে সিআইডির এক কর্মকর্তার হাত ভেঙে দেয়া হয়। ওই দিন আরেকটি অভিযানে ৯৮০ কেজি ভারতীয় চা পাতা জব্দ করে সিআইডি।
এ সময় আজগর নামে আরেক পিকআপ চালককে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় জৈন্তাপুর থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে সিআইডি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, গত একমাসে সিআইডি অতর্কিত অভিযানে বিপুল সংখ্যাক ভারতীয় পণ্য ও গরু আটক করা হয়।
এসব ঘটনায় জড়িতদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসল্ট মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না।
ঘটনার পর সিআইডি সিলেটের পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদানসহ হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অপরাধে এসআই দ্বীপরাজ ধর প্রিন্স বাদি হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেওয়া আসামি পিকআপ চালক ধলাইসহ ৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮০/৯০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়।
তিনি বলেন, সিআইডি গত ১ মাসে বেশ কয়েকটি অভিযানে মাদকসহ চোরাই মালামাল ও ভারতীয় গরু উদ্ধারের পর মামলা দেওয়া হয়। এতে মাদক চোরাচালানীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সিআইডি পুলিশের অভিযান রোধকল্পে হামলা চালায়।
এছাড়া ভারতীয় চোরাই চা পাতাসহ আটক চালক আজগরসহ ৮ জনের নামোল্লেখপূর্বক অজ্ঞতদের আসামি করে একই থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। হামলার ঘটনার পরদিন হ্যান্ডকাপ উদ্ধার হলেও এখনো আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
উল্লেখ্য গত ১৪ই অক্টোবর সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওইদিন ভোররাত ৪টার দিকে প্রথম অভিযানে একটি ডিআই পিকআপ তল্লাসী চালিয়ে ১৪টি বস্তায় ৭০ কেজি করে ৯৮০ বস্তা ভারতীয় চা পাতা জব্দ করা হয়।
যার বাজার মূল্য ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অভিযানকালে চা পাতার বৈধ কোন কাগজপত্র প্রদর্শন করতে না পারায় আজগর আলী (৩৫) নামে পিকআপ চালককে আটক করা হয়। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু দত্তপাড়া এলাকার হারিছ মিয়ার ছেলে।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তি স্বীকার করেন, চোরাকারবারিদের সহযোগীতায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় চা পাতা দেশের অভ্যন্তরে আনেন। এসময় চা পাতাসহ নাম্বার প্লেটবিহীন হলুদ ও নীল রংয়ে ডিআই পিকআপটি জব্দ করা হয়।
এর আধাঘন্টা পর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালান উপ পরিদর্শক দীপরাজ ধর প্রিন্স।
এসময় সিলেট শহর অভিমূখী আরেকটি ডিআই ট্রাক থামিয়ে তল্লাসীকালে চালক চোরাই মালামাল বহনের কথা স্বীকার করে।
চালক ধলাই মিয়াকে (১৯) হাতকড়া পরিয়ে গাড়ি তল্লাসীর চেষ্টাকালে কয়েকটি ডিআই পিকআপ ও একটি নোহা মাইক্রোবাসে ৮০/৯০ জনের মাদক চোরাকারবারি দলের সদস্য দেশিয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।
তারা হাতকড়াসহ চালক ধলাই মিয়াকে ছিনিয়ে নেয়। তাদের হামলায় সিআইডি পুলিশে ওই কর্মকর্তা আহত হন।
হামলায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাত ভেঙে যায়। ছিনিয়ে নেওয়া চালক ধলাই মিয়া জৈন্তাপুরের লামা শ্যামপুর এলাকার কাদীর পীরের ছেলে।
পরে কর্তব্যকাজে বাধা প্রদানসহ হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অপরাধে এসআই দ্বীরাজ ধর প্রিন্স বাদি হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
ওই মামলায় চালক ধলাইসহ ৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮০/৯০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া ভারতীয় চোরাই চাপাতাসহ আটক চালক আজগরসহ ৮ জনের নামোল্লেখপূর্বক অজ্ঞতদের আসামি করে একই থানায় পৃথক মামলা দায়ের করে সিআইড।