সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
বিয়ের নামে কাল্পনিক নাটক সাজিয়ে দীর্ঘদিন ঘর সংসারসহ অপর সহযোগীর সাথে দৈহিক মিলনের রাজি না হওয়ায় সিলেটের এক মহিলা সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে নানা রকম কল্পকাহিনী সাজিয়ে মানহানি সহ মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করায় এবার সিলেটের কতিত সেই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলেন ভোক্তভোগী মহিলা সাংবাদিক লাকি আক্তার ওরফে লাকি আহমেদ।
তিনি সিলেট নগরীর কাজলশাহ এলাকার মৃত হরমুজ আলীর মেয়ে। তিনি একাধিক সামাজিক সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন।
শুধু মানহানি নয় কতিত এই সাংবাদিক নামধারীদের বিরুদ্ধে রিতিমতো প্রতারণার অভিযোগসহ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দীর্ঘদিন শারিরিক সম্পর্ক স্থাপনসহ মোবাইল ফোনে নানা রকম অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ এনেছেন লাকি আহমেদ।
সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে দায়ের করা মামলা নং ১৯৮/২০২৩ ইং ধারা সাইবার সিকিউরিটি আইন ২০২৩ এর ২৫,২৯,৩১ ও ৩৫ সূত্রে ও লাকি আহমদের সাথে কথা বলে জানা যায়,
সিলেট গোলাপগঞ্জ উপজেলার পুরকায়স্থ কাজীবাড়ীর মৃত মন্নান মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম রুমন (৪৫) তিনি বর্তমানে আলমপুরস্থ পুরুষ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মাষ্টার রুলে কর্মরত ও সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার ২৯নং ওয়ার্ডের লাউয়াই গ্রামের সাদিকুর রহমান আক্তারের ছেলে নুরুদ্দিন রাসেল (৩৫) মিলে সঙ্গবদ্ধ ভাবে ঐ মহিলার সাংবাদিকের সাথে প্রতারণা সহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো ঘর সংসার করে ধর্ষণ করে আসছিলেন।
লাকি আহমেদ যখন নিজেকে স্ত্রী হিসাবে নুরুদ্দিন রাসেলকে ঘরে তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করেন তখন তাকে হত্যার হুমকিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানির চেষ্টা করেন এই দুই বখাটে।
মামলার বাদী লাকী আক্তার ওরফে লাকি আহমেদ বর্তমানে সিলেটের স্থানীয় দৈনিক হাওর অঞ্চলের কথা পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রির্পোটার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
কিন্তু তিনি এই দুই সাংবাদিকের নানা রকম অপপ্রচারে ঠিকমতো কাজ কাম করতে পারছেন না। লাকি আহমেদ মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি আজ থেকে ৪/৫ মাস পূর্বে মামলার ১নং আসামী আবুল কাশেম রুমনের সম্পাদিত সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট ও বায়ান্ন টিভি (আবেদিত) অনলাইন টিভি চ্যানেলের সিনিয়র স্টাফ রির্পোটার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
সেই সুবাদে মামলার ২নং আসামী বখাটে নুরুদ্দিন রাসেলের সাথে তার পরিচয় হয়। সে পরিচয়ের সুবাধে রাসেল তাকে স্ত্রী হিসাবে ঘরে তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফ সাক্ষী রেখে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ করে দক্ষিণ সুরমা খালের মুখ এলাকায় একটি বাসায় স্বামী-স্ত্রীর মতো মেলামেশা শুরু করে।
অথচ রাসেলের সংসারে স্ত্রী সন্তান রয়েছে তা গোপন রাখে রাসেল। লাকী আহমেদ সংসার করিয়া আসা অবস্থায় মামলার ১নং আসামী আবুল কাশেম রুমনের কুদৃষ্টি পড়ে বাদীনির উপর, এবং সে সরাসরি বাদীনিকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে প্রায় সময়।
তাকে সহযোগীতা করতে থাকে নুরুদ্দিন রাসেল। তারা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করে আসা অবস্থায় গোপন ক্যামেরায় তোলা অন্তরঙ্গ মুহুর্তের নানা রকম ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নুরুদ্দিন রাসেল ও অপর আসামী আবুল কাশেম রুমনকে দেয়।
সেসব ছবি দেখিয়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ার হুমকি সহ তার সম্পাদিত পত্রিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার হুমকি দিয়ে রুমনের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে নানা রকম ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে রাসেল ও রুমন।
রুমনের কু প্রস্তাবে রাজি না হলে লাকির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেলের সাথের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি দিয়ে মানহানি করার চেষ্টা শুরু করে দুজন। যাতে লাকি নুরুদ্দিন রাসেলের সংসারে যেতে না পারে বা রাসেলের স্ত্রী দাবী করতে না পারে।
আবার রুমনের চাহিদাও পুরণ হয়। তাদের এহেন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইল ফোনে রাসেল ও রুমন সে সব অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি সরবরাহ করতে থাকে।
এ নিয়ে রাসেলের কাছে লাকি বারবার জানতে চাইলে, সে বলে রুমনের সাথে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে।
বাধ্য হয়ে বাদিনী ১০/৪/২০২৩ ইং তারিখে আবুল কাশেম রুমেনের কাছে তার পত্রিকা থেকে অব্যাহতি চেয়ে অব্যাহতি পত্র জমা দিয়ে তিনি হাওর অঞ্চলের কথা পত্রিকায় যোগদেন।
এসময় রাসেলকে তিনি চাপ দেন তাকে সংসারে তুলে নেওয়ার জন্য। এনিয়ে স্থানীয় ভাবে একাধিক সালিশ বৈঠকও বসে। রাসেল শারিরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেও তাকে ঘরে তুলে নিতে অস্বিকৃতি জানায়।
এদিকে বিচার সালিশ করায় রাসেল লাকিকে তার সংসারে তুলে না নিয়ে রুমনকে দিয়ে লাকিকে তার পত্রিকা থেকে অব্যাহতি প্রদান করায়। এরপর থেকে রাসেল-রুমন দ্বয় মিলে সঙ্গবদ্ধ ভাবে বাদিনীকে নানা রকম ভয়ভিতি প্রদর্শণ করতে থাকে।
এর ধারাবাহিকতায় ১৭/৮/২০২৩ ইং তারিখে মামলার ১নং আসামী আবুল কাশেম রুমন নগরীর সুরমা মার্কেটের সামনে লাকিকে একা পেয়ে তার সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর প্রস্তাব দিয়ে বলে।
তাকে সময় দিলে আবার তার সম্পাদিত পত্রিকায় বৈচিত্রময় সিলেট এ যোগদান করতে পারবে লাকি।
তখন লাকি রুমনকে বলে আমি রাসেলের বিয়ে করা স্ত্রী। বিয়ের পর রাসেল আমার কাছ থেকে অনেক টাকা পয়সা নিয়েছে নানা রকম অযুহাত দেখিয়ে।
আমি আপনার সাথে এসব করতে পারবোনা। এসব কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে রুমন বাদীনিকে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রর্দশন করে চলে যায়। গত ২৩/৮/২০২৩ ইং তারিখ রাত অনুমান ১২ ঘটিকার দিকে আবুল কাশেম রুমন লাকির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ওয়াসআপ নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়ে নানা রকম হুমকি প্রদান করে।
সে সহ তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি সাধন করবে বলে হুমকি প্রদান করে রুমন। এ ঘটনায় লাকি বেগম সিলেট কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যাহা কোতয়ালী থানার ডায়েরি নং-২৭৪০ তাং (২৪-৮-২০২৩) ইং।
লাকি আহমেদ ১নং আসামীর কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার সম্পাদিত সাপ্তাহিক বৈচিত্রময় সিলেট পত্রিকায় বাদীনির ছবি সহ আইডি কার্ড দিয়ে বিজ্ঞাপন আকারে তা প্রকাশ করে, তার চরিত্র হনন করে সংবাদ প্রকাশ করে রুমন। যা পরবর্তীতে আসামী দ্বয় সঙ্গবদ্ধ ভাবে তাদের সম্পাদিত ও পরিচিত অনলাইন নিউজ র্পোটাল bmsylhet.com, চ্যানেল অন টিভি নিউজ, The daily kagoj, projomonews24.com, Greater sylhedistirict onlin pressclub, hanitimes24.com, Rajdhani Times সহ আরো বিভিন্ন অনুমোদনহীন অনলাইন পোর্টাল ও তাদের ফেইসবুকে প্রচার করে।
এছাড়া তারা আসামীদ্বয় সঙ্গবদ্ধ ভাবে লাকি আহমেদের বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার করে।
সংবাদে তারা উল্লেখ করে লাকি আহমদ দীর্ঘদিন ধরে হলুদ সাংবাদিকতা সহ বিভিন্ন সময় পুলিশের সোর্স। র্যাবের সোর্স, সাংবাদিক পরিচয় বহন করিয়া নিতীবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে।
উক্ত সংবাদটি ১নং আসামী আবুল কাশেম রুমন ‘প্রজন্ম নিউজ ২৪.কম’ এ প্রকাশ ও প্রচার করে আমাদের লক্ষনাবন্দ ইউনিয়ন নামক ফেইসবুক গ্রুপে প্রচার করে।
এছাড়া তার নিজের সম্পাদিত bmsylhet.com নামক অনলাইন পত্রিকায় লাকিকে বহিষ্কার শিরোনামে কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশ করে।
এতে লাকি সামাজিক ভাবে ও মানষিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। যার ফলে তিনি গত ৩/১০/২০২৩ ইং তারিখে সিলেট সাইবার আদালতে হাজির হয়ে ১নং আসামী আবুল কাশেম রুমন ও ২নং আসামী নুরুদ্দিন রাসেলের এসব কর্মকান্ডের বিচার চেয়ে সাইবার সিকিউরিটি আইন ২০২৩ এর ২৫,২৯,৩১,৩৫, ধারায় মামলাটি রুজু করেন।
আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে উক্ত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)কে হস্তান্তর করেন। এ বিষয়ে লাকি আহমদ বলেন, আসামী নুরুদ্দিন রাসেল একজন বখাটে, তিনি আগে তা জানতেন না।
তার ঘরে স্ত্রী সন্তান রেখে দীর্ঘদিন তার সাথে বিয়ের নাটক সাজিয়ে প্রতারণামুলক ভাবে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করে আসছিলো। আবুল কাশেম রুমন তার সব কিছু জানতো। বিভিন্ন ভাবে রাসেলকে সে সহযোগীতা করতো। কারণ রাসেল বখাটে হওয়ার তার আগের স্ত্রী সন্তান নিয়ে বিয়ানীবাজার তার পিতার বাড়ীতে চলে যায়। সেই সুযোগে রাসেল নিজেকে ডির্ভোস দাবী করে লাকির সাথে বিয়ের নাটক সাজিয়ে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। লাকি- রাসেলের বাসায় দীর্ঘদিন স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করেন।
এ সময় রাসেলের বাসায় রুমনের অবাধ যাতায়াত ছিলো বিভিন্ন রকম মেয়ে নিয়ে। সে সময় লাকি রুমনকে বারবার অনুরোধ করেন যেহেতু রাসেল তাকে বিয়ে করেছে, আর দুজন রুমনের পত্রিকায় কাজ করে, তাই তাদের কাবিননামাটি দ্রুত সম্পাদন করে দিতে। তখন রুমন আশ্বস্থ্য করতো কাবিননামা পরে করা যাবে।
এখন যেমন সংসার করছেন তেমন করে যান। এরপরই রুমনের কু-দৃষ্টি পড়ে লাকির উপর। লাকি আরো বলেন, রুমন ও নুরুদ্দিন রাসেল অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে তাদের পত্রিকায় সাংবাদিক বানানোর কথা বলে, তা তিনি পরে জানতে পারেন।
কিন্তু কেউ-ই মান সম্মানের ভয়ে কোন প্রতিবাদ করেনি। নিরবে তাদের কাছ থেকে সরে গেছেন।
লাকি আরো বলেন, রুমন একটি পত্রিকার সম্পাদক হওয়ার পর পরিচয় গোপন করে কি ভাবে একটি সরকারি অফিসে মাষ্টার রুলে চাকরি করে?