বিনোদন প্রতিবেদক::
আজ মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) থেকে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুরু হচ্ছে তিন দিন ব্যাপী ‘গণজাগরণের মূকাভিনয় উৎসব’।
বাংলাদেশে মাইম শিল্পের আগমন ঘটে ১৯৭৩ সালের দিকে পার্থপ্রতিম মজুমদারে হাত ধরে। তখন অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এই শিল্পে আসেন। ১৯৮১ সালের দিকে পার্থপ্রতিম মজুমদার ফ্রান্স প্রবাসী হন। তারপর ধীরে ধীরে হারাতে থাকে শিল্পটি।
কারণ বিদেশে মাইম শিল্পীদের প্রচুর চাহিদা থাকায় পার্থকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে যারা মূকাভিনয় চর্চাতে এসে ছিলেন তারাও একে একে পার্থকে অনুসরণ করে পাড়ি জমান বিদেশে।
তাদের মধ্যে কাজী মশহুরুল হুদা, জিল্লুর রহমান জন ছিলেন উল্লেখযোগ্য। তারা চলে যাবার পর বিচ্ছিন্ন ভাবে সারা দেশের আনাচেকানাচে শিল্পটির চর্চা চলতে থাকলেও নতুন শতকে এসে বলা যায় শিল্পটির চর্চা দেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে নতুন শতকে এসে মাইম শিল্পে আবির্ভাব ঘটে সম্ভাবনাময় নতুন শিল্পী নিথর মাহবুবের। শিল্পের অঙ্গনে এখন কেউ বলে বাংলাদেশের মাইম সম্রাট কেউ বলেন মূকাকু।
শিল্পের নানা মাধ্যমে দখল থাকা নিথর মাহবুব শুধু মূকাভিনয়ের চর্চা নিজেই করেননি, সারা দেশে শিল্পটিকে জনপ্রিয় করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে থাকেন, তিনি নতুনদের শিল্পটিতে উৎসাহী করতে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে সমন্বয় ঘটান প্রবাসে থাকা এই মাধ্যমের আমাদের পূর্বের মেধাবী শিল্পীদের।
নিথর মহামানবের সংগ্রাম, নিরলস চেষ্টা এবং আন্তরিকতায় প্রাণ ফিরে পায় বাংলাদেশের মূকাভিনয়। যার প্রমাণ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ৩ দিনের গণজাগরণের মূকাভিনয় উৎসব।
যেখানে অংশগ্রহণ করছে সারাদেশের প্রায় অর্ধশত মূকাভিনয়ের দল, কয়েকশ মাইম শিল্পী। অথচ আজ থেকে ১৫ বছর আগে ঢাকায় নিয়মিত মাইম চর্চা করে এমন একমাত্র দল ছিল মাইম আর্ট। ২০০৮ সালে মাইম নিয়ে ব্যাপক কাজ করার লক্ষ্যে কয়েকজন তরুণকে নিয়ে দলটি গড়েন নিথর মাহবুব।
আজ এই আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে থাকছে মাইম আর্টের পরিবেশনা। যার মধ্যে আছে নিথর মাহবুবের একক মাইম ‘নারী নির্যাতনের সাজা’ এবং দলের আরেক সদস্য টুটুলের পরিবেশনা ‘আমার স্বপ্ন’। এছাড়াও আছে দলীয় পরিবেশনা ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’ সিরিজের কয়েকটি পর্ব।
নিথর মাহবুব বলেন, এই উৎসব আমাকে কতটা আন্দোলিত করছে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, আমি আবেগে আপ্লুত, আমার একটা স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি যখন মূকাভিনয় নিয়ে চর্চা শুরু করেছিলাম, শিল্পটির অবস্থা ছিল মরুভূমির মতো অর্থাৎ দেশের কোথাও কোন চর্চা নেই, শেখার জায়গা নেই, সেই মরুভূমি এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
এর জন্য সবার আগে ধন্যবাদ জানাতে হয় নাটুকে থিয়েটারের আল নোমানকে, নোমানের পরিকল্পনাতেই পার্থপ্রতিম মজুমদারকে নিয়ে শরু হয়েছিল সারাদেশে মাইমকে ছড়িয়ে দেওয়ার মিশন।
তার পরে মূকাভিনয়কে সারা দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে দিতে অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক। ২০১১ থেকে ২০১৩ তিন বছরে কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্র্যাক আমাকে দিয়ে তৈরি করে ৫০ জন মাইম প্রশিক্ষক। যারা আবার নিজেরা ব্র্যাক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাইমের প্রশিক্ষক তৈরি করেন।
ব্র্যাক তাদের সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূকাভিনয়কে তাদের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করে। যে কারণে সারা দেশে দ্রুত বিস্তার ঘটতে থাকে মূকাভিনয়ের। ১২-১৩ বছরের সেইসব শিশু কিশোররা আজ তরুণ, এই তরুণরা এখন এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশের মূকাভিনয়কে।
এর মধ্যে ৮০ বা ৯০ এর দশকে মূকাভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল যারা তারাও আবার মূকাভিনয়ের চর্চা শুরু করে।
২০১০ সালে প্রস্তাব আসে মাইম ফেডারেশানের। পরে ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিক দভাবে যাত্রা শুরু করে মূকাভিনয় একটি ফেডারেশান। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল- এই ফেডারেশান ভাগ হয়ে এখন ৫টি মূকাভিনয়ের ফেডারেল বডি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে থিয়েটারের ফেডারেল বডি যেখানে দুইটা আছে সেখানে মূকাভিনয়ের জন্য ৫টি ফেডারেল বডি খুবই হাস্যকর। কারণ মূকাভিনয় আসলে থিয়েটারের মধ্যেই পড়ে।
মূকাভিনয়ের আধিপত্যের এই লড়াইয়ের কারণে মূকাভিনয়ের অগ্রগতিতে অনেকটাই ব্যাঘাত সৃষ্টি কছে। তা না হলে শিল্পটি আরও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারত।